বুধবার, ১৫ জুলাই, ২০২০ ০০:০০ টা

উইন্ডিজের জয় ছোট দলের প্রেরণা

ক্রীড়া প্রতিবেদক

উইন্ডিজের জয় ছোট দলের প্রেরণা

ক্যারিবীয়দের এই জয় ছোট দলগুলোকে দারুণভাবে অনুপ্রাণিত করবে। দেশের বাইরে ছোট দলগুলোর যে ভয় তা ওয়েস্ট ইন্ডিজকে দেখে অনেকটা কেটে যাবে। হোল্ডাররা দেখিয়ে দিয়েছেন জয়ের তীব্র ক্ষুধা আর আত্মবিশ্বাস থাকলে যে কোনো দলকে হারানো সম্ভব

 

ওয়েস্ট ইন্ডিজ এখন আর প্রবল পরাক্রমশালী দল নয়। টেস্ট র‌্যাঙ্কিংয়ে তারা সাত নম্বরে। ছোট দলের কাতারেই পড়ে। ক্রিকেটে ছোট দলগুলো সাধারণত ঘরের মাঠে যতটা শক্তিশালী হয়, দেশের বাইরে ততই দুর্বল।

অন্যদিকে ইংল্যান্ড সুপার পাওয়ার এক দল। গত বছর তারা ৫০ ওভারের বিশ্বকাপ জিতেছে। তবে রঙিন পোশাকের ইংল্যান্ড দলের চেয়েও ভয়ঙ্কর তাদের টেস্ট দলটি। এর আগের সিরিজে অর্থাৎ করোনা মহামারী শুরু হওয়ার আগে ইংলিশরা সফর করেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। সেখানে সিরিজ জিতেছে ৩-১ ব্যবধানে।

দক্ষিণ আফ্রিকা কিন্তু যে কোনো দলের জন্য অনেক কঠিন জায়গা। সেখানে গিয়ে নিজেদের সামর্থ্যরে পরীক্ষা দিয়েছে ইংলিশরা। সেই ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে যখন ক্যারিবীয়রা

খেলতে নামছে তখন ক্রিকেট বিশ্লেষকদের ভাবনা ছিল, ওয়েস্ট ইন্ডিজ কেমন ব্যবধানে হারে তা নিয়ে!

ওয়েস্ট ইন্ডিজের কিংবদন্তি স্বয়ং ব্রায়ান লারাই তো বিবিসি-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ইংল্যান্ডের বোলিং লাইনআপের সামনে এই ওয়েস্ট ইন্ডিজের পাঁচ দিন পর্যন্ত ব্যাটিং করার সামর্থ্য নেই। কিন্তু সেই দলটাই কিনা সাউদাম্পটন টেস্টের পঞ্চম দিনে দুর্দান্ত ব্যাটিং করে নিজেদের সামর্থ্যরে পরিচয় দিয়েই জয় তুলে নিয়েছে।

ইংলিশরা তো রীতিমতো অবাক। তারা হয়তো কখনোই ভাবেনি ক্যারিবীয়দের সামনে এভাবে তাদের লজ্জা পেতে হবে! ইংল্যান্ড পুরো শক্তির দলই ছিল। ছিলেন না কেবল নিয়মিত অধিনায়ক জো রুট। দ্বিতীয় সন্তান জন্মের সময় স্ত্রীর পাশে থাকতে তিনি ছুটি নিয়েছিলেন।

এছাড়া ইংলিশ নির্বাচকরা আগেই বাদ দিয়েছিলেন দুই অভিজ্ঞ ক্রিকেটার মঈন আলি ও জনি বেয়ারস্টোকে। তবে আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলার কথা চিন্তা করলে ইংল্যান্ড বেশ কয়েকজন ক্রিকেটারকে বেশ তরুণই মনে হবে। বিশেষ করে ইংল্যান্ড দলের টপ অর্ডারের ব্যাটসম্যানরা। কিন্তু ইংলিশ ক্রিকেটাররা প্রত্যেকেই অনেক অভিজ্ঞ। তারা কাউন্টিতে খেলতে খেলতে অনেক পরিপক্ব হয়েছে। সেই অভিজ্ঞরাই ঘরের মাঠে বোকা বনে গেছেন।

ওয়েস্ট ইন্ডিজের বোলিং লাইনআপ বেশ শক্তিশালী। কিন্তু তাদের দুশ্চিন্তা ছিল ব্যাটিং লাইনআপ নিয়ে। অধিকাংশই অনভিজ্ঞ। কিন্তু সেই অনভিজ্ঞরাই ইংল্যান্ডের মাটিতে বাজিমাত করে দিল।

করোনায় দীর্ঘদিন লকডাউন চলার পর সবার আগে ইংলিশ ক্রিকেটাররাই অনুশীলনে ফিরেছেন। কঠোর অনুশীলনও করেছেন ক্রিকেটাররা। অন্যদিকে, ক্যারিবীয়দের জন্য এই মহামারীর সময়ে ইংল্যান্ডে গিয়ে খেলাটা অনেক চ্যালেঞ্জিং ছিল। তারা প্রথমে ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে ১৪ দিন কোয়ারেন্টাইনে ছিল। তবে সেখানে তারা অনুশীলনের অনুমতি পেয়েছিল।

এরপর বেশ কিছু দিন কোচকে পায়নি ক্যারিবীয়রা। ফিল সিমন্স তার শ্বশুরের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় অংশ নিয়ে আইসোলেশনে ছিলেন। এ নিয়ে ক্যারিবীয়  ক্রিকেট বোর্ডের সঙ্গে তার দূরত্বও বেড়ে যায়। এসব নানা বিপত্তির পরও সেই ওয়েস্ট ইন্ডিজই কিনা ইংল্যান্ডকে কিংকর্তব্যবিমূঢ় করে দিল।

ক্যারিবীয়দের এই জয় ছোট দলগুলোকে দারুণভাবে অনুপ্রাণিত করবে। দেশের বাইরে ছোট দলগুলোর যে ভয় তা ওয়েস্ট ইন্ডিজকে দেখে অনেকটা কেটে যাবে। হোল্ডাররা দেখিয়ে দিয়েছেন জয়ের তীব্র ক্ষুধা আর আত্মবিশ্বাস থাকলে যেকোনো দলকে হারানো সম্ভব।

এই জয়ে টেস্ট র‌্যাঙ্কিংয়ে রেটিংও বেড়ে যাবে ক্যারিবীয়দের। সিরিজে আরও দুটি টেস্ট বাকি। দুটিই অনুষ্ঠিত হবে ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে। সিরিজের প্রথম টেস্টে জয়ের পর ক্যারিবীয়দের আত্মবিশ্বাসও বেড়ে গেছে। এখন তারা সিরিজ জয়ের স্বপ্ন দেখছে।

 

সর্বশেষ খবর