রবিবার, ১৬ আগস্ট, ২০২০ ০০:০০ টা

আটে বায়ার্নের অষ্টবজ্র

বার্সার দুঃস্বপ্নের রাত

রাশেদুর রহমান

আটে বায়ার্নের অষ্টবজ্র

হঠাৎ ঘটে যাওয়া অঘটন! একটি যুগের সমাপ্তি! নাকি অনেক আগেই কবরস্থ হওয়া কফিনের পাশে নতুন করে লেখা কোনো এপিটাফ! বায়ার্ন মিউনিখের প্রবল আগ্রাসনের মুখে বার্সেলোনার অসহায় আত্ম্নসমর্পণের পর এমন কত বাক্যই হয়ত ফুটবল লিখিয়েদের উর্বর মস্তিষ্কে ঘুরপাক খাচ্ছে। এ যেন জার্মান নাজি বাহিনীর কাছে বিখ্যাত স্প্যানিশ আর্মাডার বিধ্বস্ত হওয়ার দাস্তান। এ যেন আকাশের উচ্চতায় জ্বলতে থাকা একটি নক্ষত্রের পতন।

উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগের এক লেগের কোয়ার্টার ফাইনালে গত শুক্রবার পর্তুগিজ শহর লিসবনের দ্য লুজ স্টেডিয়ামে বার্সেলোনাকে ৮-২ গোলে হারিয়েছে বায়ার্ন মিউনিখ। অভূতপূর্ব এক ঘটনারই জন্ম দিল চ্যাম্পিয়ন্স লিগে পাঁচবার করে চ্যাম্পিয়ন হওয়া দল দুটি। আর ম্যাচ শেষে ফ্যাল ফ্যাল করে অসহায়ের মতো তাকিয়ে বায়ার্নের বুনো উল্লাস দেখলেন ফুটবল জাদুকর লিওনেল মেসি।

‘অষ্টবজ্র’ এমন এক বিশেষ শক্তি যার মাধ্যমে প্রতিপক্ষকে সহজেই ঘায়েল করা যায়। ইন্দ্রের বজ্র, বিষ্ণুর সুদর্শন চক্র কিংবা ব্রহ্মার অক্ষকে অষ্টবজ্র বলে অভিহিত করা হয়েছে অভিধানে। বায়ার্ন মিউনিখ যেন অষ্টবজ্রই নিক্ষেপ করল লিওনেল মেসির জাদুকরী সব শক্তিকে নিষ্ক্রিয় করতে। অন্যভাবে বলা যায়, বার্সেলোনার সামনে তাদের সত্যিকারের চিত্রটা ফুটিয়ে তুলতে মোক্ষম অস্ত্র ব্যবহার করল জার্মান জায়ান্টরা। থমাস মুলার (৪ ও ৩১) এবং ফিলিপ কটিনহো (৮৫ ও ৮৯) দুবার করে বার্সেলোনার ডিফেন্স লাইনের দুর্বলতা তুলে ধরলেন দারুণ দারুণ গোল করে। অজগরের বিশাল মুখ গহ্বরের মতো হাঁ হয়ে থাকা বার্সেলোনার ডিফেন্স লাইনে প্রবেশ করে একবার করে গোল করলেন পেরিসিচ (২১), জিনাবরি (২৭), জশুয়া কিমিচ (৬৩) ও লেবানডস্কি (৮২)। এই নিয়ে টানা আটটি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ম্যাচে গোল করলেন পোলিশ তারকা লেবানডস্কি। চলতি মৌসুমে সবমিলিয়ে ১৪টি। আর মাত্র ৩টি গোল করলেই রোনালদোর রেকর্ডে (এক মৌসুমে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে সর্বোচ্চ ১৭ গোল) ভাগ বসাবেন তিনি। প্রবল আগ্রাসনের সামনে অসহায় বার্সাকে দেখে বোধ হয় মায়া জেগেছিল বায়ার্নের অস্ট্রিয়ান ডিফেন্ডার ডেভিড আলাবার। নিজেদের জালেই বল জড়িয়ে দেন তিনি ম্যাচের ৭ম মিনিটে। লুইস সুয়ারেজ ৫৭ মিনিটে একটি দারুণ গোল করেন। কিন্তু এসব ঘটনা বার্সা-বায়ার্ন ম্যাচটাকে বর্ণনা করার জন্য যথেষ্ট নয়।

গত কয়েক বছর ধরেই বার্সেলোনার পতনধ্বনি শুনতে পাচ্ছিল সমর্থকরা। কিন্তু লিওনেল মেসির উপস্থিতিতে পতনটাকে ঠিক মানতে পারছিলেন না তারা! ইউরোপিয়ান ক্লাব ফুটবলে দীর্ঘ একটা যুগের রাজত্ব হারানোর অসহনীয় গল্পটাও তারা বিশ্বাস করতে পারছিলেন না। সত্যিটা দেরিতে হলেও বড্ড নিষ্ঠুরভাবে সামনে এল। বায়ার্নের জার্মান তারকা থমাস মুলার যেমন বললেন, ‘ব্রাজিলের বিপক্ষে আমরা (২০১৪ বিশ্বকাপের সেমিতে) ভয়ঙ্কর ছিলাম। কিন্তু বার্সেলোনার বিপক্ষে ছিলাম নিষ্ঠুর।’ সত্যিই তো, এতোটা নিষ্ঠুর না হলে কী বার্সেলোনার মতো দলকে ৮ গোলের লজ্জা দেওয়া যায়!

বায়ার্ন মিউনিখের কাছে বার্সেলোনার এ পরাজয় ২০১৪ বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল ট্র্যাজেডির (ব্রাজিল ১-৭ জার্মানি) কথা মনে করিয়ে দিল ফুটবলভক্তদের! আরও একটা ঘটনার কথা মনে করিয়ে দিল ৭৪ বছর আগে কোপা দেল রে কাপের শেষ ষোলোর লড়াইয়ে ৮-০ গোলে সেভিয়ার কাছে পরাজিত হয়েছিল কাতালানরা। এরপর আর এতগুলো গোল কখনো হজম করেনি বার্সেলোনা।

বায়ার্ন মিউনিখ সামনের ম্যাচগুলোতে প্রতিপক্ষের জন্য কঠিন এক ম্যাসেজ দিয়ে রাখল। বার্সাকে হারিয়ে ব্যভারিয়ানরা যেন বলতে চাইল, সামনে যে-ই থাক এবার চ্যাম্পিয়ন্স লিগটা আমাদের!

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর