সোমবার, ১৭ আগস্ট, ২০২০ ০০:০০ টা
ক্রীড়াঙ্গনে বঙ্গবন্ধু পরিবার ৩য় পর্ব

শেখ কামালের সঙ্গে আমার শেষ দেখা

কাজী সালাউদ্দিন

 শেখ কামালের সঙ্গে আমার শেষ দেখা
প্লেন ছাড়ার সময় হয়ে গেছে। তার পরও কেন জানি কামাল আমার হাত ছাড়তে চাচ্ছিল না। আমি তাকে বললাম, ফিরে এসে আমরা আলোচনায় বসব। আফসোস বন্ধুকে আর পেলাম না। মালয়েশিয়ায় বসেই জানতে পারলাম ৩২ নম্বরে নির্মম হত্যার কথা

 

খুব ছোটবেলা থেকেই শেখ কামালের সঙ্গে আমার বন্ধুত্ব। বলতে পারেন জানের দোস্ত। দুজনেই ধানমন্ডিতে বসবাস করতাম। আমি থাকতাম পুরনো ১৮ নম্বর রোডে। আর কামাল বিখ্যাত ৩২ নম্বরে। দুজনেই শাহিন স্কুলে পড়তাম। তখন থেকেই আমরা খেলার সঙ্গে জড়িয়ে পড়ি। কামাল ক্রিকেট, বাস্কেটবল ও অ্যাথলেটিকসে পারদর্শী ছিলেন। আমি ফুটবল ও ক্রিকেটই বেছে নিয়েছিলাম। বঙ্গবন্ধুর ছেলে অথচ কামালের চলাফেরা ছিল অতি সাধারণ মানুষের মতো। কখনো তাকে রাগতে দেখিনি। খুব অল্প বয়সেই আমি ওয়ারীর হয়ে প্রথম বিভাগ লিগে খেলি। পরের বছর মোহামেডানে। ১৯৭২ সালে স্বাধীনতা কাপে মোহামেডান চ্যাম্পিয়ন হয়। সেমিতে হ্যাটট্রিক ও ফাইনালে দুই গোল করে সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হই। এর পর আমারই গোলে প্রীতি ম্যাচে ঢাকা একাদশ হারায় ভারতের বিখ্যাত দল মোহনবাগানকে। সেই থেকে আমি পরিচিত হয়ে উঠি।

১৯৭২ সালে লিগ শুরুর চিন্তাভাবনা চলছে। দল বদলের তারিখও ঘোষণা হয়েছে। আমি মোহামেডানেই থাকার সিদ্ধান্ত নিয়ে রাখি। ওই সময় ফুটবলারদের প্রথম চয়েজই ছিল মোহামেডান না হয় বিআইডিসি। এপ্রিলের মাঝামাঝি সময় হঠাৎ করে শেখ কামাল আমাকে বললেন, তূর্য তোকে আমার দলে খেলতে হবে। বন্ধুরা আমাকে তূর্য বলেই ডাকত। যাক কামালের কথা শুনে অবাক হয়ে গেলাম। তোর আবার কোন দল। ও বলল, ইকবাল স্পোর্টিং কিনে ফেলেছি। আমরা আবাহনী ক্রীড়াচক্র নামেই প্রথম বিভাগে খেলব। দেখলাম টিপু ভাই, অমলেশসহ অনেক নামকরা খেলোয়াড়কে কামাল চূড়ান্ত করে ফেলেছে। আমিও রাজি হয়ে গেলাম। মাঠে নামল আবাহনী। ১৯৭৪ সালে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর কামাল আমাকে বললেন, তূর্য আমাকে কথা দে আমি যদি মারাও যাই তুই কখনো আবাহনী ছাড়বি না। সেদিন বড্ড আবেগপ্রবণ দেখাচ্ছিল কামালকে। বন্ধুকে কথা দিলাম যত দিন খেলব আবাহনীতেই থাকব। কামালের অনুরোধ ফেলি কী করে? ১৯৭৫ সালে আমরা যখন মারদেকা কাপ খেলতে প্লেনে উঠছি। আমি সেবার জাতীয় দলের ক্যাপ্টেন। তখন কামাল প্লেন ছাড়ার আগে সবার সঙ্গে দেখা করল। আমাকে বলল, দোস্ত ফিরে আয় সিনিয়রদের সঙ্গে আলাপ করে ফুটবল নতুনভাবে সাজাতে হবে। প্লেন ছাড়ার সময় হয়ে গেছে। তার পরও কেন জানি কামাল আমার হাত ছাড়তে চাচ্ছিল না। আমি তাকে বললাম, ফিরে এসে আমরা আলোচনায় বসব। আফসোস বন্ধুকে আর পেলাম না। মালয়েশিয়ায় বসেই জানতে পারলাম ৩২ নম্বরে নির্মম হত্যার কথা। পরের দিন আমাদের খেলা বলে ভোরে অনুশীলন করছিলাম। দেখলাম এক শিখ ভদ্রলোক আমাদের দিকে এগিয়ে আসছেন। উনি আবার অ্যাডিডাস কোম্পানির জার্সি ও বুট বিক্রি করতেন। ভাবলাম উনি নতুন কিছু নিয়ে এসেছেন। কিন্তু তিনি বেশ হতাশ হয়ে বললেন, তোমরা জান কি, তোমাদের জাতির পিতাসহ তার পরিবারকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। বিশ্বাস হচ্ছিল না তার কথা। পরে বাংলাদেশ হাইকমিশনে গিয়ে জানতে পারলাম এই নির্মম ঘটনা সত্য।

সর্বশেষ খবর