বৃহস্পতিবার, ৩ সেপ্টেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

হাওরের মেয়েদের বিশ্বজয়ের স্বপ্ন

মাসুম হেলাল, সুনামগঞ্জ

হাওরের মেয়েদের বিশ্বজয়ের স্বপ্ন

ব্যতিক্রমী কিছু করার প্রত্যয় থেকে কিশোরীদের নিয়ে ‘স্বপ্নচূড়া’ গড়ে তুলেছি। আমাদের উদ্যোগকে যে যেভাবেই দেখুক, আমি এই কিশোরীদের স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে সবটুকু উজাড় করে দেব

হাওর-ভাটির প্রত্যন্ত অঞ্চল সুনামগঞ্জের দিরাইয়ে মেয়েদের ফুটবল ক্লাব গঠন করে খেলাধুলার উন্নয়নে আশার আলো জ্বালিয়েছেন রাকিব আহমেদ। তাকে সহযোগিতা করছেন লিজা রানী তালুকদার নামের এক কিশোরী। তাদের যৌথ প্রচেষ্টায় ৫০ জন কিশোরীকে নিয়ে গড়ে উঠেছে ফুটবল ক্লাব ‘স্বপ্নচূড়া’।

রাকিব নিজে ছিলেন ফুটবলার। কিন্তু পারিপার্শ্বিকতার কারণে জাতীয় পর্যায়ে খেলতে পারেননি। নিজের মনের ইচ্ছাকে মেয়েদের মাধ্যমে প্রস্ফূটিত করতেই হাওরে এমন অভিনব উদ্যোগ নেন। রাকিব নিজেই এই ক্লাবের প্রশিক্ষক। স্বপ্নচূড়ার কিশোরীদের স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে দিন-রাত কাজ করে যাচ্ছেন তিনি।

সামাজিক, অর্থনৈতিক ও পারিপার্শ্বিক শত বাধা-বিপত্তি পাশ কাটিয়ে তাদের প্রশিক্ষণ দিয়ে যাচ্ছেন নিয়মিত। রাকিবের বিশ্বাস স্বপ্নচূড়া প্রিমিয়ার লিগে খেলবে। দলের কিশোরীরা খেলবে জাতীয় দলেও। আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও তারা সাড়া ফেলবে। এই হাওরের মেয়েরাই একদিন বিশ্বজয় করবে!

ক্লাব প্রতিষ্ঠায় রাকিবকে দারুণভাবে সহযোগিতা করেছেন লিজা রানী। মেয়েদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে তাদের উদ্বুদ্ধ করেছেন। লিজার বাড়ি দিরাই উপজেলার তাড়ইল ইউনিয়নের ভাঙ্গাডর গ্রামে। স্বপ্নচূড়া ক্লাবের সেরা ফুটবলারও সে। বিভাগীয় পর্যায়ে খেলার অভিজ্ঞতাও আছে। করোনা মহামারীর সময় যখন ক্রীড়া বিশ্ব স্থবির হয়ে ছিল তখনো স্বপ্নচূড়ার মেয়েরা দুর্গম পথ পাড়ি দিয়ে ক্লাবে গিয়ে অনুশীলন করেছে।

বাড়ি থেকে মাঠে পৌঁছাতে এক ঘণ্টারও বেশি সময় নৌকায় যেতে হয়। এ ছাড়া ঝড়-বৃষ্টি ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ তো আছেই। কোনো প্রতিকূল পরিস্থিতিই এই হাওরের মেয়েদের দমাতে পারেনি। তারা নিয়মিত অনুশীলন করে চলেছে।

লিজা বলেন, ‘একজন ভালো খেলোয়াড় হওয়ার লক্ষ্য, তাই অলসতাকে পাত্তা দেই না। সমাজের মানুষের নানা কটূ কথার পরেও পরিবার অনেক আশা নিয়ে আমাদেরকে খেলতে দিয়েছে। প্রশিক্ষক রাকিব স্যারের কাছে মনোযোগ দিয়ে ফুটবলের কলাকৌশল শেখার চেষ্টা করি।’

দলের আরেক সদস্য একা দাশ। এই কিশোরী প্রতিদিন ৯ কিলোমিটার দূর থেকে নৌকায় ও গাড়ি করে অনুশীলন করতে মাঠে আসে। এমন আরও অনেক কিশোরী আসে যারা স্বপ্ন নিয়ে আরও অনেক দূর-দুরান্ত থেকে আসে স্বপ্নচূড়ায়। জাতীয় পর্যায়ে ফুটবল শৈলী প্রদর্শন করার পাশাপাশি স্বপ্নচূড়ার কিশোরীরা স্বপ্ন দেখে আন্তর্জাতিক অঙ্গন মাত করে দেওয়ার।

ইতিমধ্যে ক্লাবের সদস্য আয়েশা, পূর্ণিমা, পলি, একা, মৌ ও ঝুবলী সিলেট বিভাগের হয়ে খেলেছেন জাতীয় লিগে।

২০১৯ সালে গঠিত হয় স্বপ্নচূড়া স্পোর্টিং ক্লাব। সমাজের নানা জনের নেতিবাচক মন্তব্য উপেক্ষা করে ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে ক্লাবের সদস্য সংখ্যা। প্রতিষ্ঠার ১ বছরের মাথায় বাংলাদেশ মহিলা প্রিমিয়ার ফুটবল লিগে অংশগ্রহণের সুযোগ পেয়েছিল স্বপ্নচূড়া। তবে পরবর্তীতে তাদের বাদ দেয় বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন। অবশ্য সামনের মৌসুমে লিগ খেলার ব্যাপারে আশাবাদী ক্লাবের কোচ রাকিব আহমদ।

তিনি জানান, ‘ব্যতিক্রমী কিছু করার প্রত্যয় থেকে কিশোরীদের নিয়ে স্বপ্নচূড়া ফুটবল ক্লাব গড়ে তুলেছি। প্রথম প্রথম অভিভাবকরা মেয়ে দিতে চাননি। কিন্তু ধীরে ধীরে সেই পরিস্থিতির উন্নতি হয়। এখন ক্লাবে ৬০ থেকে ৭০ জন কিশোরী প্রশিক্ষণ নিচ্ছে। আমাদের উদ্যোগকে যে যেভাবেই দেখুক, আমি এই কিশোরীদের স্বপ্ন বাস্তবে রূপ দিতে আমার সবটুকু উজাড় করে দেব।’

 

সর্বশেষ খবর