সোমবার, ৭ সেপ্টেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

দুই তারকাকে ঘিরে যত কথা

ক্রীড়া প্রতিবেদক

দুই তারকাকে ঘিরে যত কথা

কাজী সালাউদ্দিন ও আবদুস সালাম মুর্শেদী বাংলাদেশের ফুটবলে উজ্জ্বল মুখ। দুজনই ফুটবল ক্যারিয়ারে ইতি টেনেছেন অনেক আগে। তবে এখনো তাদের মাঠের নৈপুণ্য চোখে ভাসে। তারকা ফুটবলার ছিলেন তারা। কিন্তু সালাউদ্দিনের কদর ছিল আলাদা। ক্রীড়াঙ্গনে প্রথম সুপারস্টারের খ্যাতিটা পেয়েছেন তিনি। অনেক ফুটবলার খেলেছেন এবং খেলছেন। কিন্তু ফুটবলার হিসেবে সালাউদ্দিনের জনপ্রিয়তা কেউ ছুঁতে পারেননি। ভবিষ্যতে পারবেন কি না সংশয় রয়েছে। শুধু ফুটবলার নন, কোচ হিসেবেও সফল সালাউদ্দিন। প্রশ্ন হচ্ছে সংগঠক হিসেবে তিনি কতটা সফল। একই প্রশ্ন সালামকে ঘিরেও। মাঠে যতটা দাপট দেখাতে সক্ষম হয়েছিলেন, সংগঠক হিসেবে ফুটবলকে তিনি কী দিতে পেরেছেন। যা নিয়ে প্রশংসা করা যায়?

সালাউদ্দিনই প্রথম ব্যক্তি যিনি টানা তিন মেয়াদ অর্থাৎ এক যুগ ধরে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে)-এর নির্বাচিত সভাপতি। একই চিত্র সালামের ক্ষেত্রেও। ১২ বছর ধরে তিনি ফেডারেশনের সিনিয়র সহসভাপতি। ৩ অক্টোবর অনুষ্ঠিতব্য বাফুফের নির্বাচনে দুজনই চেনা পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন অনেকটা নিশ্চিত। ধারণা করা হচ্ছে টানা চতুর্থবার তারাই তাদের চেনা চেয়ারে বসতে যাচ্ছেন। একটা ব্যাপার লক্ষণীয় যে, দুজনেই ফুটবল ক্যারিয়ারকে পেছনে ফেলে দিয়েছেন সংগঠক হিসেবে। ১৯৬৯ সালে প্রথম বিভাগ ফুটবল লিগে ওয়ারি থেকে সালাউদ্দিনের ক্যারিয়ার শুরু। এরপর ঐতিহ্যবাহী মোহামেডানে খেলে তার প্রিয় ক্লাব আবাহনী থেকেই অবসর নেন। ১৫ বছর ফুটবল খেলেন সালাউদ্দিন। যার মধ্যে টানা এক যুগ আবাহনীতে। তাই তো সালাউদ্দিনকে সবাই আবাহনীর লোক বলে চেনে ও জানে।

অন্যদিকে ১৯৭৭ সালে আজাদ থেকেই ঢাকা ফুটবলে ক্যারিয়ার শুরু সালামের। বিজেএমসি হয়ে এরপর প্রিয় মোহামেডান থেকেই ১৯৮৬ সালে তার অবসর। দীর্ঘ সময় সাদা-কালোর জার্সি গায়ে চড়িয়েছেন বলে তার পরিচয় মোহামেডানের ঘরের লোক বলেই। সালাউদ্দিন কিংবা সালাম স্বীকার করেন তারকা বা পরিচিতি লাভ করার পেছনে আবাহনী ও মোহামেডানের অবদান চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। কিন্তু এ কথা কি তারা বলবেন সংগঠক হিসেবে সফল না ব্যর্থ। গ্রেট ফুটবলার হয়ে তারা গুরুত্বপূর্ণ চেয়ারে বসে এ জনপ্রিয় খেলাকে কী দিতে পেরেছেন?

আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ফুটবলের মান অতীতেও বাহবা পাওয়ার মতো ছিল না। কিন্তু ক্রীড়াপ্রেমীরা তো আশা করেছিলেন খ্যাতনামা খেলোয়াড়রা যখন হাল ধরেছেন ফুটবলের চেহারা পাল্টাবে। কোনো তর্ক বা বিতর্ক নয়, বাস্তবতা দেখলেই বোঝা যাবে ফুটবলের উন্নয়ন না অবনতি। উন্নয়নের অনেক প্রতিশ্রæতি দেওয়া হয়েছে। ব্যস, এতটুকুই। ফুটবল দিন দিন পেছনের দিকে হাঁটছে। এতটা খারাপ অবস্থা যে, সামান্য সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে সেমিফাইনাল খেলাটাই স্বপ্নে পরিণত হয়েছে। চারদিকে শুধু হাহাকার ও শূন্যতা। হুট করে পরিবর্তন করা সম্ভব নয়- এটাও ঠিক কথা। কিন্তু এক যুগ তো একেবারে কম সময় নয়। কী পেয়েছে ফুটবল?

ফুটবলে বর্তমান পরিস্থিতির জন্য শুধু যে সালাউদ্দিন বা সালাম দায়ী তাও বলাটা ভুল। অন্যরা তাহলে কী করলেন? আসলে গুরুত্বপূর্ণ দুই পদ বলেই দোষটা চলে আসে সভাপতি ও সিনিয়র সহসভাপতির ওপর।

সাংগঠনিক ক্যারিয়ারে নিষ্প্রভ হলেও ফুটবল ক্যারিয়ারে তারা ছিলেন অপ্রতিরোধ্য। স্বাধীনতার পর প্রথম হ্যাটট্রিকের কৃতিত্ব সালাউদ্দিনের। তারই গোলে বিদেশি দলের বিরুদ্ধে প্রথম জয় এসেছিল। বাংলাদেশের প্রথম ফুটবলার হিসেবে বিদেশে পেশাদার লিগ খেলার অভিজ্ঞতা রয়েছে তার। স্বাধীনতার পর লিগে প্রথম সর্বোচ্চ গোলদাতা তিনিই। আবাহনীর অনেক ট্রফি জয়ের পেছনে তার অবদান ভোলার নয়। অন্যদিকে সালামও কম যান না। ১৯৮২ সালে ২৭ গোল দিয়ে লিগে নতুন রেকর্ড গড়েন তিনি। যা এখনো অটুট রয়েছে। বিদেশের মাটিতে প্রথম হ্যাটট্রিক ও ডাবল হ্যাটট্রিকের কৃতিত্ব তার। যত দিন খেলেছেন দর্শকদের মন জয় করেছেন। ফুটবলার হিসেবে উজ্জ্বলতার স্বাক্ষর রাখলেও সংগঠক হিসেবে সালাউদ্দিন বা সালামকে ম্লানই বলা যায়। অতীত ঝেড়ে ফেলে দুই কিংবদন্তি ফুটবল উন্নয়নে সামনে নতুনত্ব আনতে পারবেন কি না সেটাই দেখার অপেক্ষা।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর