সোমবার, ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

কোন মাপকাঠিতে জাতীয় পুরস্কার

১৯৭৬ সালে যে ৪ জন ফুটবলার পুরস্কার পান তাদের মধ্যে তিন জন মরহুম হাফিজ রশিদ, মো. শাজাহান ও আব্বাস মিঞা কখনো ঢাকা বা বাংলাদেশে কোথাও খেলেননি

ক্রীড়া প্রতিবেদক

১৯৭২ সালেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঘোষণা দেন যোগ্যতা ও পারফরম্যান্স বিচার করে ক্রীড়াবিদদের জাতীয় পুরস্কার দেওয়া হবে। তিনি ঘোষণা দিলেও তা আর দেখে যেতে পারেননি। ১৯৭৫ সালে তাকে সপরিবারে হত্যা করা হয়। ১৯৭৬ সাল থেকেই জাতীয় পুরস্কার দেওয়া হয়। বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, যোগ্যতা ও পারফরম্যান্স যাচাই করা হবে। বাস্তবে তার কি প্রতিফলন ঘটেছে? এটা ঠিক অনেক যোগ্য ক্রীড়াবিদ ও সংগঠক জাতীয় পুরস্কার পেয়েছেন। আবার অনেক মাঠ কাঁপানো খেলোয়াড় ও মেধাবী সংগঠকের কপালে এ স্বপ্নের পুরস্কার জোটেনি। কারও কারও বক্তব্য না মরলে এ পুরস্কার জুটবে না। কিন্তু মরণোত্তর হিসেবেও তো মিলছে না।

পুরস্কারের জন্য অনেক যাচাই বাছাই করা হয়। এ নিয়ে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ আলাদা কমিটিও করে দিয়েছে। তবু এমন কারও কারও হাতে পদক তুলে দেওয়া হচ্ছে যা নিয়ে ক্রীড়াঙ্গনে বিতর্কের ঝড় বয়ে যাচ্ছে। এমন কি বাণিজ্যের অভিযোগও আছে। আশ্চর্য হলেও সত্যি যে যাদের ঘরোয়া আসরে দলে সেরা একাদশে সুযোগ পাওয়াটা ভাগ্যের ব্যাপার ছিল তারাও ক্রীড়াঙ্গনে দেশের সর্বোচ্চ স্বীকৃত এ পুরস্কার পাচ্ছেন?

আসলে জাতীয় পুরস্কারের শুরুটাই হয় বিতর্ক দিয়ে। ১৯৭৬ সালে যে ৪ জন ফুটবলার পুরস্কার পান তাদের মধ্যে তিন জন মরহুম হাফিজ রশিদ, মো. শাজাহান ও আব্বাস মিঞা কখনো ঢাকা বা বাংলাদেশে কোথাও খেলেননি। বাংলাদেশের ক্রীড়া অবদানের জন্য পুরস্কার অথচ পেলেন কি না ভারত থেকে আসা তিন ফুটবলার।

জাতীয় পুরস্কার এখন অনেকের কাছে মূল্যহীন হয়ে পড়েছে। সাইড লাইনে বসে থাকা খেলোয়াড়রা পাচ্ছেন অথচ পরীক্ষিত ক্রীড়াবিদ ও ত্যাগী সংঠকরা বঞ্চিত হচ্ছে। এ ব্যাপারে ক্রীড়া পরিষদ কিংবা ক্রীড়ামন্ত্রণালয় পদক্ষেপই নিচ্ছে না। সাবেক নন্দিত ফুটবলার ও কোচ গোলাম সারওয়ার টিপু বলেন, ‘আমি যেভাবে পুরস্কার পেয়েছি তা নিজেও মেনে নিতে পারিনি। ১৯৭৯ সালে ঢাকায় কলকাতা মোহামেডান ও ঢাকা মোহামেডান প্রীতিম্যাচে অংশ নেয়। আমি সে দিন জীবনের শেষ ম্যাচ খেলি। ৩০ মিনিট খেলে আমি যখন অবসরে ঘোষণা করি তখনই অনেকে ফুলের মালা দিতে ছুটে আসেন। সেদিন ম্যাচ উপভোগ করেন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান। এ দৃশ্য দেখে জিয়া ক্রীড়া পরিষদের এক কর্মকর্তার কাছে জানতে চেয়েছিলেন কে এই খেলোয়াড় কেনই বা তাকে ফুলের মালা দেওয়া হচ্ছে? যখন শুনলেন অবসরের কথা। জিয়া নাকি বলেছিলেন ও তাহলে বড় খেলোয়াড় ছিল। জাতীয় পুরস্কারের তালিকায় যেন ওর নাম থাকে। রাষ্ট্রপতির নির্দেশ আর কেউ ফেলতে পারেন? এক মাস পরেই পেয়ে গেলাম জাতীয় পুরস্কার। অথচ এ পুরস্কার আমার আগে বশির ভাই, মারি ভাই ও হাফিজ ভাইয়ের পাওয়া উচিত ছিল। এখনো একই অবস্থা যোগ্যদের ঠিক মতো মূল্যায়ন না করে দেওয়া হচ্ছে জাতীয় পুরস্কার।

সর্বশেষ খবর