বুধবার, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

‘নওশের তোরা দেশের নয়নের মণি’

ক্রীড়া প্রতিবেদক

‘নওশের তোরা দেশের নয়নের মণি’

১৯৭২ সালের শেষের দিকে হবে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নিজেই ফোন করলেন বাফুফের সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেমকে। বললেন, যারা মুক্তিযুদ্ধে এত ত্যাগ স্বীকার করলেন এই স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের সব কর্মকর্তা ও খেলোয়াড়কে আমি দেখতে চাই। তৎকালীন ঢাকা স্টেডিয়ামে আয়োজন করা হলো স্বাধীন বাংলা ও বাছাই একাদশের এক প্রীতিম্যাচ। বঙ্গবন্ধু সেই ম্যাচ পুরোটাই উপভোগ করেন। ম্যাচের আগে স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের ম্যানেজার তানভীর মাজহার ইসলাম তান্না ও অধিনায়ক জাকারিয়া পিন্টু দলের খেলোয়াড়দের পরিচয় করিয়ে দিচ্ছিলেন। সারিবদ্ধভাবে সবাই দাঁড়িয়ে আছেন স্বাধীন বাংলার সেই ঐতিহ্যবাহী জার্সি পরে। বঙ্গবন্ধু একে একে সবার সঙ্গে হাত মেলাচ্ছেন আর কুশল বিনিময় করছেন। সেই দৃশ্য দেখে গ্যালারি ভরা দর্শকরা করতালি দিচ্ছেন।

বঙ্গবন্ধু এক পর্যায়ে নওশেরুজ্জামান নওশেরের সামনে দাঁড়ালেন। হাত মেলানোর সময় রসিকতা করে বললেন, একসেরও না তিনসেরও না। একেবারে নয়সের। তোর এত ওজন। এরপর বঙ্গবন্ধু আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েন। বললেন, শোন নওশের তোরা সবাই আমার দেশের নয়নের মণি। মুক্তিযুদ্ধে তোদের অবদান চির স্মরণীয় হয়ে থাকবে। যুদ্ধ না করলেও  তোরা ফুটবল খেলে মুক্তিযুদ্ধে যে সহযোগিতা করেছিস এ ঋণ কখনো শোধ করা যাবে না। এরপর তান্নাকে কাছে ডেকে বললেন, তোরাও দেশের বীর মুক্তিযোদ্ধা। রাষ্ট্রীয়ভাবে তোদের মর্যাদা ও সম্মান করা হবে। পৃথিবীর কোনো স্বাধীনতা যুদ্ধে এতগুলো খেলোয়াড় সহযোগিতা করেছে কিনা তা আমার জানা নেই। বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন স্বাধীন বাংলা দলকে রাষ্ট্্রীয়ভাবে পুরস্কৃত করা হবে। তোদের নাম স্মরণীয় রাখতে ঢাকা স্টেডিয়ামের পাশে স্মৃতিফলক তৈরি করা হবে।

আফসোস স্বাধীনতার ৪৯ বছর পরও রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বাধীন বাংলা দলের স্বাধীনতা বা জাতীয় পুরস্কার মেলেনি। তান্না আক্ষেপ করে বলেন, যখনি কোনো স্বাধীন বাংলার সদস্য মৃত্যুবরণ করেন তখনি প্রসঙ্গটি উঠে আসে। নওশের না ফেরার দেশে চলে গেছেন তাই আমাদের নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। এ নিয়ে আসলে কথা বলতেও ইচ্ছা করে না। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি পেয়েছে। অবহেলা শুধু স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের ক্ষেত্রে। মুক্তিযুদ্ধে আমরা জানের ঝুঁকি নিয়ে ফুটবল খেলেছি। মুক্তিযুদ্ধে সহায়তায় জন্য ১৬ লাখ টাকার ফান্ড জোগাড় করে দিয়েছি। বঙ্গবন্ধু নিজেই বলে গেছেন তোদের ঋণ শোধ করতে পারব না। এরপরও কেন তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য। তাহলে কি মুক্তিযুদ্ধে আমাদের কোনো অবদানই নেই। অবাক লাগে দেশের এতবড় ফুটবলার হয়েও নওশের পাননি জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কার।

তান্না ক্ষোভের সঙ্গে বললেন, যতই তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা হোক না কেন বঙ্গবন্ধুকন্যা  প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আপা মুক্তিযুদ্ধে আমাদের অবদানের কথা ভোলেননি। নওশেরের চিকিৎসায় তিনি সহযোগিতা করেছেন। চিকিৎসকদের নির্দেশ দিয়েছিলেন নওশেরকে সুস্থ করে তুলতে সর্বোচ্চ চেষ্টাটা করবেন। মনে রাখবেন আমি আছি নওশেরের পাশে। তবুও নওশেরকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি। প্রশ্ন হচ্ছে প্রধানমন্ত্রী যেখানে স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলকে গুরুত্ব দিচ্ছেন সেখানে আমরা এত অবহেলিত কেন?

সর্বশেষ খবর