রবিবার, ৪ অক্টোবর, ২০২০ ০০:০০ টা

সালাউদ্দিন চারে চার

রাশেদুর রহমান

সালাউদ্দিন চারে চার
প্রথমে বাফুফের এজিএম এবং পরে নির্বাচনী ভোট অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনী সাধারণ সভা শেষ হয়েছে শান্তিপূর্ণভাবেই। ১৩৯ জন কাউন্সিলরের মধ্যে ১৩৫ জন উপস্থিত ছিলেন সেখানে। ভোট দিয়েছেন ১৩৫ জনই। ভোটের আগে সাধারণ সভা নিয়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন কাউন্সিলররা

উৎসবমুখর পরিবেশ। চারদিক লোকে-লোকারণ্য। অনেকেই গ্রুপ ছবি তুলতে ব্যস্ত। সেলফি তুলছেন কেউ  কেউ। জটলার মতো দাঁড়িয়ে কফির পেয়ালা হাতে অনেকেই মেতেছেন খোশগল্পে। কোথাও চলছে কানাকানি, ফিসফাঁস। বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) নির্বাচনী কংগ্রেসের পরিবেশ দেখলে যে কেউ ভাবতে পারে, কোনো উৎসব চলছে বুঝি! বহুদিনের পুরনো বন্ধুদের মেলাও বলা যায়! উৎসবের আমেজেই গতকাল সোনারগাঁ হোটেলে অনুষ্ঠিত হলো আলোচিত বাফুফে নির্বাচন। সেই নির্বাচনে বিজয়ী হলেন কাজী সালাউদ্দিন ও আবদুস সালাম মুর্শেদী জুটি। আরও চার বছর ফুটবলে চলবে তাদের হুকুমতে।

গতকাল সকাল থেকেই বাফুফের নির্বাচনী ভেন্যু ভোটার, প্রার্থী, নিরাপত্তাবাহিনী আর মিডিয়াকর্মীদের পদচারণায় মুখর হয়ে উঠে। সাবেক তারকা ফুটবলারদেরও অনেকে হাজির হন। এ ছাড়া কোচ, সংগঠকদের অনেকেই হাজির হয়েছিলেন সোনারগাঁ হোটেলে। শুধু ফুটবলেরই নয় হকি, ক্রিকেট, সাঁতারসহ বিভিন্ন ফেডারেশনের কর্মকর্তারা এসেছিলেন বাফুফের নির্বাচনী উত্তাপ দেখতে। প্রথমে বাফুফের এজিএম এবং পরে নির্বাচনী ভোট অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনী সাধারণ সভা শেষ হয়েছে শান্তিপূর্ণভাবেই। ১৩৯ জন কাউন্সিলরের মধ্যে ১৩৫ জন উপস্থিত ছিলেন সেখানে। ভোট দিয়েছেন ১৩৫ জনই। ভোটের আগে সাধারণ সভা নিয়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন কাউন্সিলররা।

সভাপতি পদে সালাউদ্দিন তার প্রতিদ্বন্দ্বীদের ধরাশায়ী করেন। তিনি ৯৪ ভোট পেয়ে পুনর্নির্বাচিত হন। এই পদে বাদল রায় ৪০ ও মানিক ১ ভোট পান। সিনিয়র সহসভাপতি পদে আবদুস সালাম মুর্শেদী ৯১ ভোট পেয়ে পুনর্নির্বাচিত হন। এই পদে শেখ মুহাম্মদ আসলাম ৪৪ ভোট পান। ভোটের লড়াইয়ে সবচেয়ে বড় চমক ছিলেন বসুন্ধরা কিংসের ইমরুল হাসান। সর্বোচ্চ ৮৯ ভোট পেয়ে সহসভাপতি পদে নির্বাচিত হন তিনি। তার বিজয়ের খবর বের হতেই চারদিক প্রকম্পিত হয়ে উঠে, ইমরুল ভাই, ইমরুল ভাই মিছিলে। তাৎক্ষণিকভাবে তাকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানায় সমর্থকরা। বিজয়ের পর ইমরুল বলেন, ‘আমরা ফুটবল উন্নয়নে শুরু থেকেই চেষ্টা করছি। এই জয় আমাদেরকে ফুটবল উন্নয়নে আরও বড় ভূমিকা রাখার প্রেরণা দিবে।’ সহসভাপতি পদে বিজয়ী অন্য দুজন হলেন কাজী নাবিল আহমেদ (৮১) ও আতাউর রহমান মানিক (৭৫)। মহিউদ্দিন ও তাবিথ আওয়াল সমান ৬৫ ভোট করে পেয়েছেন। তাদেরকে ৩১ অক্টোবর পুনরায় নির্বাচনী লড়াইয়ে নামতে হবে।

উৎসবমুখর পরিবেশে ভোটের লড়াই শেষ হওয়ায় স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছেন অনেকেই। এখন নতুন কমিটির কাছে ফুটবলপ্রেমীদের প্রত্যাশা অনেক। নির্বাচনী লড়াইয়ের সব উত্তাপ নিস্তেজ হয়ে গেছে। নির্বাচিত হয়েছেন ২১ জন। আগামী চার বছর তাদের কাঁধে ভর করেই চলবে দেশের ফুটবল। ব্যর্থতা ভুলে সামনে যাবার প্রেরণা জোগাতে পারবেন কী এই কমিটির সদস্যরা! গত ১২ বছরে কাজী সালাউদ্দিনের নেতৃত্বাধীন বাফুফের কার্যনির্বাহী কমিটির কার্যকলাপ নিয়ে অসন্তুষ্ট অনেকেই। তারপরও তার ওপরই আস্থা রেখেছেন ভোটাররা। এই আস্থার প্রতিদান দেওয়ারই সময় এবার।

বাফুফে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল গত এপ্রিলে। তবে ফিফা ও এএফসির অনুমোদনক্রমেই তা বাতিল হয়ে যায় করোনাভাইরাসের কারণে। পরবর্তীতে পরিস্থিতির উন্নতি হতেই নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়। বাফুফে নির্বাচন নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই জল ঘোলা হচ্ছিল। কাজী সালাউদ্দিনের বিপরীতে শক্ত ঘাঁটি প্রস্তুত করছিলেন তরফদার মোহাম্মদ রুহুল আমিন। কিন্তু হঠাৎ করেই নিজেকে সরিয়ে নেন তিনি। পরবর্তীতে বাদল রায় নিজেকে একজন শক্তিশালী প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করেন। কিন্তু তিনিও মনোনয়নপত্র জমা দিয়ে নিজের নাম প্রত্যাহার করেন। অবশ্য সময়ের পর প্রত্যাহারের আবেদন করায় তার নাম ব্যালটে ঠিকই রয়ে যায়। অন্যদিকে শফিকুল ইসলাম মানিকও ফুটবলে বৈপ্লবিক কিছু করার অঙ্গীকারনামা দিয়ে নির্বাচনী লড়াইয়ে নেমে যান।

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর