সোমবার, ৫ অক্টোবর, ২০২০ ০০:০০ টা

নতুন কমিটি, পুরনো প্রত্যাশা

মনোয়ার হক

নতুন কমিটি, পুরনো প্রত্যাশা

টানা তিনবার সভাপতি হয়ে আগেই রেকর্ড গড়েছিলেন কাজী সালাউদ্দিন। এবার চতুর্থবার বাফুফের নির্বাচিত হওয়ায় বুঝিয়ে দিলেন তার জনপ্রিয়তা। সালাউদ্দিনের ফুটবল ক্যারিয়ার ছিল ১৬ বছরে। এবার চার বছরের মেয়াদপূর্ণ করলে সভাপতি হিসেবে তা স্পর্শ করবেন। এ এক বিরল রেকর্ড। আরেক তারকা ফুটবলার আবদুস সালাম মুর্শেদীও টানা চতুর্থ বারের মতো সিনিয়র সহ-সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন। আবাহনী-মোহামেডানের দুই ফুটবলার মাঠে ছিলেন একে অপরের প্রতিদ্বন্দ্বী। কিন্তু সাংগঠনিক ক্যারিয়ারে ঈর্ষণীয় জুটি গড়েছেন তারা। বাফুফের নতুন কমিটিতে এবার নতুনদের দেখা মিললেও অধিকাংশই হচ্ছেন পুরনো মুখ। ঘুরে ফিরে এক যুগে বাফুফেতে প্রায় একই মুখ দেখা যাচ্ছে।

সত্যি বললে সালাউদ্দিন ফুটবলে অভিভাবক হওয়ায় ফুটবলপ্রেমীদের যে প্রত্যাশা ছিল তার পূরণ হয়েছে কমই। মহিলারা এগিয়ে গেলেও পুরুষ জাতীয় দলে উন্নতির চেয়ে অবনতিটাই বেশি হয়েছে। সামান্য সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে সেমিফাইনাল খেলাটাই স্বপ্নে পরিণত হয়েছে। ১২ বছরের সালাউদ্দিনের বড়প্রাপ্তি ছিল ২০১০ সালে এসএ গেমসে সোনা জয়। তাও দলটি অনূর্ধ্ব-২৩। অনূর্ধ্ব-১৫ সাফে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে বাংলাদেশের কিশোররা। এশিয়ান গেমসে সালাউদ্দিনের আমলেই বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো নকআউট পর্বে খেলেছে। তাও এ কৃতিত্ব অনূর্ধ্ব-২৩ দলের। জাতীয় দল ব্যর্থতার বৃত্তেই বন্দী। ১৭ বছর ধরে শিরোপার মুখ দেখছে না। প্রাপ্তি বলতে এতটুকুই বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপে একবার ফাইনাল খেলা।

সালাউদ্দিন সভাপতি প্রার্থী হওয়ায় সোশ্যাল মিডিয়ায় বিতর্কের ঝড় বয়ে যায়। এমনকি অনেক সাবেক ফুটবলাররা এনিয়ে মিডিয়াতে কটূক্তিও করেছেন। তারপরও আস্থা সালাউদ্দিনের ওপরই। যার প্রমাণ সর্বোচ্চ ভোটে জয়ী হয়ে টানা চতুর্থবার সভাপতি হওয়া। সুষ্ঠু ভোটের মাধ্যমে নির্বাচনের চার বছরের মেয়াদে নতুন কমিটি হয়েছে। যেকোনো সময়ে দায়িত্বও বুঝে নেবে তারা। প্রশ্ন হচ্ছে যাদের ঘিরে নির্বাচন সেই ফুটবলাররা নতুন কমিটির কাছে প্রত্যাশাটা করছে কি? কিংবা তাদের চাওয়াটা কি? চার জনের সঙ্গে আলাপ করে একটি ব্যাপার স্পষ্ট হয়েছে নতুন কমিটির কাছে নতুন নয়। প্রত্যাশাটা পুরানই। যা ১২ বছরেও পূরণ করতে পারেননি সালাউদ্দিন।

জাতীয় দলের সাবেক তারকা ফুটবলার ও কোচ সাইফুল বারী টিটু বলেন, ‘নির্বাচনে একটু মন কষাকষি হবেই। এটা সারা বিশ্বে হয়ে থাকে। নির্বাচন শেষ এখন সব ভুলে উন্নয়নে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। সালাউদ্দিন ও সালাম ভাইসহ পুরান কমিটির অনেকে নির্বাচিত হয়েছেন। কে কি ভাববেন জানি না। তারপরও বলব এটা পজিটিভ দিক। ১২ বছরে উনারা ফুটবল নিয়ে কাজ করেছেন। কোথায় সমস্যা বা অগ্রগতির জন্য কাজ করতে হবে তারা জানেন। নতুন কমিটিতে ইমরুল ভাইয়ের মতো মেধাবী সংগঠক এসেছেন। আমার প্রত্যাশা থাকবে চার বছরের কর্মকর্তারা এমন পরিকল্পনা নেবেন যা দেখে সবাই সন্তুষ্ট হবেন। তৃণমূল পর্যায়ে ফুটবলার সন্ধানে নামতে হবে। কোর্চেস ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা আরও উন্নতমানের হতে হবে।’

জাতীয় দলের গোলরক্ষক আশরাফুল ইসলাম রানা বলেন, ‘আমি বিজয়ীদের শুভেচ্ছা জানাই। যারা হেরেছেন তাদেরকেও ধন্যবাদ। সালাউদ্দিন ভাই এমন একজন লোক যার দুয়ার সব সময় খোলা। আমরা যখনি কোনো সমস্যার জন্য আলাপ করতে গেছি তিনি সমাধান করেছেন। সালাম ভাইও পেশাদার লিগটাকে মাঠে রাখতে পেরেছেন। তবে নতুন কমিটির কাছে প্রত্যাশা থাকবে পাইওনিয়ার, তৃতীয়, দ্বিতীয়, প্রথম, চ্যাম্পিয়ন্স লিগ নিয়মিত মাঠে রাখা। ঢাকার বাইরেও লিগ শুরুর উদ্যোগ নিতে হবে। এতে করে নতুন ফুটবলারের সন্ধান মিলবে। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ম্যাচের সংখ্যা বাড়াতে হবে। আশ্চর্য হলেও সত্য ফুটবলে নিজস্ব জিমনেসিয়াম নেই। এবার নির্বাচনে যে জৌলুসতা দেখলাম ইচ্ছা করলেই কোনো বিত্তশালী কর্মকর্তা অল্প দিনের মধ্যে জিমনেসিয়াম তৈরি করে দিতে পারবেন। ভালো লেগেছে ইমরুল ভাইয়ের মতো মেধাবী সংগঠক জয়ী হয়েছেন। ফুটবল উন্নয়নের যোগ্যদের দায়িত্ব ভাগ করে দিতে হবে।’

মাঠ কাঁপানো স্ট্রাইকার নাবীব নেওয়াজ জীবন বলেন, ‘নির্বাচনের মাধ্যমে ফুটবলে নতুন কমিটি হয়েছে। আমার অনুরোধ থাকবে যত দ্রুত সম্ভব ঘরোয়া আসরটা মাঠে নামানো। বসে থাকায় ফিটনেস নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। শুধু পেশাদার নয়, সব লিগই নিয়মিত করতে হবে। আট বিভাগে ফুটবলে আটটি স্টেডিয়াম খুবই জরুরি। সত্যি বলতে কি ফুটবল উন্নয়নে পরিশ্রমের বিকল্প নেই। পরিকল্পনা করেই এগুতে হবে।’

অন্যদিকে জাতীয় মহিলা দলের অধিনায়ক সাবিনা খাতুন বলেন, ‘ফোকাসটা ধরে রাখতে হবে। নিয়মিত লিগ হওয়াটা জরুরি। জাতীয় লিগ হলে নতুন খেলোয়াড়ের সন্ধান মিলবে। আন্তর্জাতিক ম্যাচের সংখ্যা বাড়াতে হবে। সালাউদ্দিন স্যার অবশ্যই আন্তরিক। তারপর অনুরোধ থাকবে সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর বিষয়টি বিবেচনা করতে। এতে উৎসাহটা আরও বেড়ে যাবে।’

সর্বশেষ খবর