শুক্রবার, ৯ অক্টোবর, ২০২০ ০০:০০ টা

নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা

ক্রীড়া প্রতিবেদক

নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা

নারী ক্রীড়াবিদদের জন্য নারী ম্যানেজার ও নারী চিকিৎসকের দাবি অনেক দিনের। কিন্তু তা আর বাস্তবায়িত হয়নি। এস এ গেমস, এশিয়ান গেমস ও কমনওয়েলথ গেমসে নারী ক্রীড়াবিদরা দেশের বাইরে যান। তখন একজন পুরুষ ম্যানেজার, পুরুষ চিকিৎসকই সফর সঙ্গী হন। বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশন ও সংশ্লিষ্ট ফেডারেশনগুলো গুরুত্বসহকারে ব্যাপারটি কখনো দেখেননি। কর্মকর্তারা বলেন, যেখানে সেভ দ্য মিশন ও ম্যানেজার আছেন সেখানে আবার আলাদাভাবে নারীদের দায়িত্ব দেওয়া হবে কেন? কেউ কেউ আবার অর্থের বিষয়টি তুলে ধরেন। অথচ গেমস এলে সরকারি খরচায় কতজন যে অযথা বিদেশে যান তা হিসাব মেলানো মুশকিল।

এ দাবিটা অনেক পুরান। তবে দেশের বিভিন্ন স্থানে ধর্ষণ নিয়ে যে প্রতিবাদের ঝড় বইছে তাতে প্রশ্ন উঠেছে ক্রীড়াঙ্গনে নারীরা কতটা নিরাপদ?  এমন নয় যে ক্রীড়াঙ্গনে এমন ঘৃণিত ঘটনা ঘটেনি। অতীতে জিমন্যাস্টিকস, ভারোত্তোলন, সাঁতার ও অ্যাথলেটিকসে বেশ কজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ আছে। শুধু তাই নয়, তদন্ত করে এমন ঘটনার প্রমাণও পাওয়া গেছে। ব্যস, এ পর্যন্তই। ধর্ষকের বিরুদ্ধে শাস্তির ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। ফেডারেশন থেকে বহিষ্কার করেই সব শেষ। সে ক্ষেত্রে নারী ক্রীড়াবিদদের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্নতো উঠবেই। ঢাকায় যখন মেয়েরা খেলতে আসেন অভিভাকরা নানা কারণে চিন্তিত থাকেন। দেশের বাইরে গেলে তো আতঙ্কে থাকেন।

বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনে অভিভাবক সংস্থা বলা হয় জাতীয় ক্রীড়া পরিষদকে। অথচ এই পরিষদের সাবেক দুই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নারী কেলেঙ্কারির অভিযোগ রয়েছে। দেশে ও বিদেশে এদের বিরুদ্ধে একাধিক নারী ক্রীড়াবিদকে যৌন হয়রানির অভিযোগ রয়েছে। একজন নারী ক্রীড়াবিদ তৎকালীন যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রীর কাছে তাকে যৌন হয়রানির অভিযোগ করেন। বিস্ময় হলেও সত্য কোনো শাস্তি তো দূরের কথা তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটিও গঠন হয়নি। বরং মন্ত্রীর বন্ধু বলে পদোন্নতি দেওয়া হয়।

টেবিল টেনিসে টানা ১৬ বার জাতীয় চ্যাম্পিয়ন হয়ে ইতিহাস গড়েছেন জোবেরা রহমান লিনু। তবে দেশের টেবিল টেনিসে নারীদের প্রথম চ্যাম্পিয়ন তার বড় বোন মুনিরা মোর্শেদ হেলেন। হেলেন বলেন, ‘সমাজের কি করুণ পরিণতি তা লাগাতার ধর্ষণেই প্রমাণ মিলে। আমি চাই ধর্ষক যেই হোক না কেন এমন শাস্তি দেওয়া উচিত অন্যরা যেন এ ঘৃণিত কাজ করতে সাহস না পায়। ক্রীড়াঙ্গনে এখন প্রতিটি খেলায় মেয়েরা অংশ নিচ্ছে। এটা সত্যি এ অঙ্গনে কিছু কর্মকর্তা ও কোচের বিরুদ্ধে নারী কেলেঙ্কারির অভিযোগ রয়েছে। এসব ঘটনায় স্বাভাবিকভাবে অভিভাবকরা আতঙ্কেই থাকেন। পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধার কথা বাদই দিলাম। নারী ক্রীড়াবিদদের নিরাপত্তা যথেষ্ট কি না তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। অবাক লাগে এখনো নারীদের জন্য আলাদা ম্যানেজার বা ডাক্তার নেই। যা অত্যন্ত জরুরি। একজন নারী তো পুরুষ চিকিৎসকের কাছে সবকিছু খুলে বলতে পারবেন না। নিরাপত্তার জন্য মহিলা পুলিশ ও রাখতে হবে।’

গোহাটি এস,এ গেমসে নারীদের সাঁতারে দুই সোনা জয়ী হয়ে রেকর্ড গড়েন মাহফুজা খাতুন শিলা। দেশের এ খ্যাতনামা সাঁতারু বলেন, ‘এক সময় ইভটিজিং যেন রোগে পরিণত হয়েছিল। সরকার শক্ত পদক্ষেপ নেওয়ায় তা অনেকটাই থেমে গেছে। ধর্ষকদেরও এমন শাস্তি দেওয়া উচিত ভবিষ্যতে কেউ যেন এ নোংরামীর পথ বেছে না নেয়। ক্রীড়াঙ্গনে নারীদের ব্যাপারে কর্মকর্তারা বরাবরই সতর্ক। তবু ভয় হয় কখন ঘটে যায়। নিরাপত্তার ব্যাপারে আরও শক্ত পদক্ষেপ নিতে হবে। বিশেষ করে নারী দলে নারী ম্যানেজার ও নারী চিকিৎসক রাখাটা জরুরী হয়ে পড়েছে। আমি যতটুকু জানি রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে এমন নিদের্শনা দেওয়া হয়েছে। তারপরও কেন বাস্তবায়িত হচ্ছে না এটাই প্রশ্ন।’

ব্যাডমিন্টনে দুবারের জাতীয় চ্যাম্পিয়ন এলিনা সুলতানা বলেন, ‘ধর্ষণের ঘটনায় সত্যিই আমরা আতঙ্কিত। এতটা ভয় যে মাঝেমধ্যে প্রশ্ন জাগে ক্রীড়াঙ্গনে আমরা নিরাপদ কি না। ক্রীড়াঙ্গনের এমন ঘৃণিত ঘটনা তো ঘটেছে। তাই দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের কাছে অনুরোধ রাখব নারী ক্রীড়াবিদদের নিরাপত্তা নিয়ে সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেন। তা না হলে সামনে খেলাধুলায় মেয়েদের খুঁজে পাওয়া মুশকিল হবে।’

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর