মঙ্গলবার, ১০ নভেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

টেস্ট অভিষেকের ২০ বছর

ক্রীড়া প্রতিবেদক

ক্যারিয়ারে টেস্ট খেলেছেন মাত্র ১৩টি। উল্লেখ করার মতো পারফরম্যান্স নেই। সেঞ্চুরি মাত্র একটি। ওই এক সেঞ্চুরিতেই টেস্ট ক্রিকেট ইতিহাসের সোনালি পাতায় চিরস্থায়ী হয়েছেন আমিনুল ইসলাম বুলবুল। আজ থেকে ২০ বছর আগে ২০০০ সালের ১০ নভেম্বর বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে (তৎকালীন ঢাকা স্টেডিয়াম) বাংলাদেশের অভিষেক টেস্ট খেলেছিল ভারতের বিপক্ষে। ওই টেস্ট খেলেই বাংলাদেশ নাম লিখেছিল ক্রিকেটের কুলীন শ্রেণিতে। দুই দশক আগে টেস্ট অভিষেকের পর বাংলাদেশ এখন নিয়মিত টেস্ট খেলছে ভারত, অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, পাকিস্তান, অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, নিউজিল্যান্ড, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, শ্রীলঙ্কা, আফগানিস্তানের বিপক্ষে। সময়ের চোরা স্রোতে এখন পর্যন্ত টাইগাররা টেস্ট খেলেছে ১১৯টি। জয় সাকল্যে ১৪টি, হার ৮৯ এবং ড্র ১৬টি। দলগত পারফরম্যান্সের আড়ালে ব্যক্তিগতভাবে সেরা ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান। প্রথম সেঞ্চুরিয়ান বুলবুল হলেও টেস্ট এখন পর্যন্ত তিন তিনটি ডাবল সেঞ্চুরি করেছেন মুশফিকুর রহিম। পরিসংখ্যানের বিচারে তিনিই সেরা ব্যাটসম্যান। অভিষেক টেস্টে ৬ উইকেট নিয়ে দুর্জয় বাজিমাত করলেও টাইগারদের সেরা বোলার সাকিব। দেশের প্রথম বোলার হিসেবে তিনি ২০০’র উপরে (২১০) উইকেট তার।

১৯৯৭ সালে আইসিসি ট্রফি জেতার পরই বাংলাদেশের ক্রিকেটার ও সংগঠকরা স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন সাদা পোশাকে টেস্ট খেলার। এরপর সাংগঠনিক দক্ষতায় টেস্ট খেলার স্বীকৃতি পায় বাংলাদেশ। ২০ বছর আগে ১০ নভেম্বর পুরো পৃথিবীকে আকৃষ্ট করে খেলতে নামে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে। দুই দলের ক্রিকেটারদের বরণ করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বাংলাদেশের অধিনায়ক নাইমুর রহমান টস করে ভারতের অধিনায়ক সৌরভ গাঙ্গুলীর সঙ্গে। অভিষেক টেস্টেই টস জিতে ইতিহাসে নাম লিখেন তিনি। প্রথম ব্যাটিংয়ে ১৫৩.৩ ওভারে ৪০০ রান করে টাইগাররা। ৪৪ রানে দ্বিতীয় উইকেটে পতনের পর ক্রিজে আসেন বুলবুল। দলীয় ৩৮৫ রানে আগারকারের বলে শ্রীনাথের তালুবন্দী হওয়ার আগে নামের পাশে লিখে নেন ১৪৫ রানের ঐতিহাসিক ইনিংসটি। ১২৯.৩ ওভার ক্রিকেট থাকাকালীন তিনি বল খেলেছেন ৩৮০ বল। ছক্কা না থাকলেও চার ছিল ১৭টি। অভিষেক টেস্টের প্রথম ইনিংসে ৪০০ রান করলেও দ্বিতীয় ইনিংসের চিত্র ছিল পুরোপুরি ভিন্ন। সুনীল জোসীর ঘূর্ণিতে দ্বিতীয় ইনিংসে টাইগাররা বিধ্বস্ত হয় মাত্র ৯১ রানে। হেরে যায় ৯ উইকেটে। হারলেও দুই দশক আগের টেস্টটি এখন বাংলাদেশের ক্রিকেটের সর্বোচ্চ প্রাপ্তি।

অভিষেক টেস্টের পর সময় গড়িয়েছে দুই দশক। এই সময়ে টাইগাররা টেস্ট খেলেছে ১১৯টি। আয়ারল্যান্ড ছাড়া বাকি সবগুলো দেশের বিপক্ষেই টেস্ট খেলেছে। সবচেয়ে বেশি টেস্ট খেলেছে ‘দ্বীপরাস্ট্র’ শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। দেশটির বিপক্ষে ২০ টেস্ট খেলে জয় মাত্র একটি। সেই জয়টি আবার নিজেদের ১০০ নম্বর টেস্টে। বেশি জয় আফ্রিকান প্রতিনিধি জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ১৭ টেস্টে ৭ বার। অস্ট্রেলিয়া এবং ইংল্যান্ডের বিপক্ষে জয় একটি মাত্র করে। জয় নেই ভারত, পাকিস্তান, নিউজিল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা, আফগানিস্তানের বিপক্ষে। সবচেয়ে বড় জয় ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ইনিংস ও ১৮৪ রানে। রানের বিচারে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ২২৬ রানে। ২০০৫ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে জয়টিই বাংলাদেশের প্রথম টেস্ট জয়। 

টেস্টে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের দলগত সর্বোচ্চ স্কোর ১৯৬ ওভারে ৬৩৮, শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ২০১৩ সালে। সর্বনিম্ন স্কোর ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ৪৩, ২০১৮ সালে। ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ স্কোর টেস্টে তিনটি ডাবল সেঞ্চুরি হাঁকানো মুশফিকের। চলতি বছর মিরপুরে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ২১৯ রানের হার না মানা ইনিংস খেলেন তিনি। সবচেয়ে বেশি রানও তার, ৭০ টেস্টের ১৩০ ইনিংসে রান ৪৪১৩। সেঞ্চুরি ৭টি। ৯ সেঞ্চুরি নিয়ে সবার উপরে তামিম ইকবাল। ৬০ টেস্টে তামিমের রান ৪৪০৫। উইকেটের সংখ্যায় শীর্ষে সাকিব। ৫৬ টেস্টে উইকেট ২১০টি। বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের মধ্যে শয়ের উপর উইকেট রয়েছে আর মাত্র তাইজুল ২৯ টেস্টে ১১৪ এবং মোহাম্মদ রফিক ৩৩ টেস্টে ১০০টি। দেশ সেরা অলরাউন্ডার সাকিবের টেস্টে রান ৩৮৬২ এবং উইকেট ২১০টি। সবচেয়ে কম ১৭ বছর ৬১ দিনে সেঞ্চুরির রেকর্ড মোহাম্মদ আশরাফুলের। 

চলতি বছর আরও অনেকগুলো টেস্ট খেলার কথা ছিল। কিন্তু প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের জন্য দুটি টেস্ট খেলেছে। ২০২১ সাল থেকে পূর্ণোদ্যমে মাঠের লড়াইয়ে নামবেন মুশফিক, সাকিব, তামিমরা।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর