বৃহস্পতিবার, ২৬ নভেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

আরিফুল যেন বিশ্বকাপের ব্রাথওয়েট

বঙ্গবন্ধু টি-২০ কাপের প্রথম দিনে চার বছর আগের বিশ্বকাপ ফাইনালের সেই দৃশ্যটি যেন মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে ফিরিয়ে আনলেন জেমকন খুলনার আরিফুল হক। তিনি হাঁকালেন চার ছক্কা। যেন হেরে যাওয়া ম্যাচে খুলনাকে এনে দিলেন দারুণ এক জয়ের স্বাদ

মেজবাহ্-উল-হক

আরিফুল যেন বিশ্বকাপের ব্রাথওয়েট

মনে পড়ে, ২০১৬ টি-২০ বিশ্বকাপ ফাইনালের শেষ ওভারের নাটকীয় দৃশ্যটি?

কী দারুণ কার্লোস ব্রাথওয়েটের দানবীয় ছক্কাগুলো! একে একে চারটি বল কত সহজেই আছড়ে ফেললেন গ্যালারিতে।

শেষ ওভারে ইংলিশদের স্তব্ধ করে দিয়ে কলকাতার ইডেন গার্ডেনে ক্যারিবীয়দের ‘ক্যালিপসো’ নৃত্যের কথা কি ক্রিকেটামোদীরা চাইলেও ভুলতে পারবেন! এমন এক ড্রামাটিক পরিসমাপ্তি যেন কারও কল্পনায়ও ছিল না।

বঙ্গবন্ধু টি-২০ কাপের প্রথম দিনে চার বছর আগের সেই দৃশ্যটি যেন মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে ফিরিয়ে আনলেন জেমকন খুলনার আরিফুল হক। তিনি হাঁকালেন চার ছক্কা। যেন হেরে যাওয়া ম্যাচে খুলনাকে এনে দিলেন দারুণ এক জয়ের স্বাদ।

টি-২০ বিশ্বকাপের ফাইনালের শেষ ওভারে জয়ের জন্য ওয়েস্ট ইন্ডিজের দরকার ছিল ১৯ রান। ইংলিশরা ধরেই নিয়েছিলেন তারা শিরোপা জিততে যাচ্ছেন। কারণ, বল করবেন অভিজ্ঞ বেন স্টোকস। আর যাই হোক, স্টোকসের ওভারে তো আর যাচ্ছেতাই করা সম্ভব নয়। তাই শেষ ওভার শুরুর আগেই ড্রেসিংরুমের ক্রিকেটাররা বাইরে চলে আসেন।

তারপর ঘটে যায় মহানাটকীয় সেই ঘটনা। চার বলে চার ছক্কা।

টি-২০ ম্যাচ বরাবরই অনিশ্চয়তায় ভরা। তাই বলে বাংলাদেশি কোনো ব্যাটসম্যান শেষ ওভারে এমন কা- ঘটাবেন- তা যেন কল্পনায়ও ছিল না কারও।

বরং টি-২০ ক্রিকেটে বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানদের নিয়ে এক অপবাদ ছিল, ঠিকঠাক ছক্কা মারতে না পারার। ক্যারিবীয়রা যেখানে শৌর্য প্রদর্শন করে বল গ্যালারিতে ফেলেন, সেখানে টাইগাররা বড় রান তাড়া করতে চারের শরণাপন্ন হন। স্ট্যামিনার ঘাটতির বিষয়টি তো আছেই। কিন্তু আরিফুল সব ধারণাই পাল্টে দিলেন। টাইগার ব্যাটসম্যানরাও যে ছক্কা ঝড়ে দলকে জিতিয়ে দিতে পারেন -সেই দৃষ্টান্তই স্থাপন করলেন খুলনার এই তারকা।

মজার বিষয় হচ্ছে, একদিক দিয়ে কিন্তু ব্রাথওয়েটের চেয়েও আরিফুলের কাজটা অনেক কঠিন ছিল। কারণ, ম্যাচে খুলনার দরকার ছিল শেষ ওভারে ২২ রান। তা ছাড়া যেখানে ব্রাথওয়েটের অন্য প্রান্তে ছিলেন ৮৫ রানে অপরাজিত মারলন স্যামুয়েলস, সেখানে আরিফুলের সঙ্গী ছিলেন বোলার শহীদুল ইসলাম। আরিফুল বুঝতে পেরেছিলেন, যা করার তাকেই করতে হবে। পুরো চাপ এবং দায়িত্ব তাই নিজের কাঁধে তুলে নেন। সে কারণে প্রথম দুই ছক্কার পর সিঙ্গেলস নেওয়ার সুযোগটাও কাজে লাগাননি। বরং স্ট্রাইক রোটেট করে আরও দুই ছক্কা হাঁকিয়ে দলকে জিতিয়ে মাঠ ছাড়েন।

অন্যদিকে আরিফুলের বীরত্বের দিনে শেষ ওভারে ফরচুন বরিশালের বোলার মেহেদী হাসান মিরাজের অবস্থা হয়েছিল যেন ঠিক বেন স্টোকসের মতোই -কিংকর্তব্যবিমূঢ়। হয়তো কিছু সময়ের জন্য নির্বাকই হয়ে গিয়েছিলেন। কারণ দিনটি যে খুবই বাজে গেছে তার। জাতীয় দলের এই তারকা ব্যাট হাতে ইনিংস ওপেন করতে নেমে প্রথম বলেই আউট হয়ে যান। তারপর শেষ ওভারে পড়ে যান মহাঝামেলায়। অবশ্য মিরাজের কি-ইবা করার ছিল। তিনি তো সর্বোচ্চ চেষ্টাই করেছেন।

ক্রিকেট এমনই, কখনো কখনো এমন কিছু ক্যারিশম্যাটিক ঘটনা ঘটে যায়, তাতে কারও নিয়ন্ত্রণ থাকে না। চার বছর আগে বিশ্বকাপের ফাইনালে ইংলিশ অধিনায়ক ইয়ন মরগানও তো শেষ ওভারে বল তুলে দিয়েছিলেন তার সেরা বোলারের হাতে। তাতেও তো রক্ষা হয়নি। তাই মিরাজের জায়গায় অন্য কেউ থাকলেও হয়তো একই অবস্থা হতো। কারণ আরিফুল যেন হয়েছিলেন বিশ্বকাপের সেই ব্রাথওয়েট!

সর্বশেষ খবর