শনিবার, ২৮ নভেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

বাংলাদেশ দেখা হলো না ম্যারাডোনার

কাজী সালাউদ্দিন বাফুফে সভাপতি

বাংলাদেশ দেখা হলো না ম্যারাডোনার

২০০৮ সালে বাফুফের সভাপতি নির্বাচিত হই। প্রথমবারের মতো ফুটবলে অভিভাবকের দায়িত্ব পেয়ে বেশ কিছু পরিকল্পনা নিই। যার মধ্যে প্রথমটি ছিল ফুটবল নতুনভাবে জাগাতে হবে। প্রাণ আনতে হবে। শুরু থেকে টার্গেট ছিল একদিনের জন্য হলেও দিয়েগো ম্যারাডোনাকে ঢাকা আনার। দেশে তার কোটি কোটি ভক্ত। ম্যারাডোনাকে আনা মানে চারিদিকে ফুটবলে জোয়ার বয়ে যাবে। ব্যক্তিগত ও এজেন্টদের মাধ্যমে বেশ কবার যোগাযোগ করি। কিন্তু নানা ব্যস্ততায় ম্যারাডোনা শিডিউল দিতে পারেননি। একবার বিশ্বকাপ দেখতে গিয়ে অনেক চেষ্টায় ম্যারাডোনার সঙ্গে কথা বলার সৌভাগ্য হয় আমার। আলাপ খুবই সংক্ষিপ্ত, অথচ তার আন্তরিকতা দেখে অবাক হয়ে যাই। বললাম আপনার কারণে বাংলাদেশে কোটি কোটি আর্জেন্টিনার সমর্থক রয়েছে। ওরা আপনাকে বাংলাদেশে দেখতে চায়। কথাটি শুনে ম্যারাডোনা হাসলেন। বললেন, আমার ইচ্ছা আছে বাংলাদেশে যাওয়ার। সময় পেলে অবশ্যই শিডিউল ঠিক করব।

আসলে বিশ্ববিখ্যাত ফুটবলাররা নানা কাজে এতটা ব্যস্ত থাকেন যে, তাদের ইচ্ছা থাকলেও পছন্দের জায়গায় যেতে পারেন না। দেখলাম ম্যারাডোনা যখন ব্যস্ততার কারণে ঢাকায় আসতে পারছেন না। তখন চেষ্টা করলাম আরেক বিশ্ববিখ্যাত আর্জেন্টাইন ফুটবলার লিওনেল মেসিকে ঢাকায় আনা যায় কিনা। পরে চিন্তা করলাম শুধু মেসি কেন, পুরো আর্জেন্টিনা দলকে আনা যায় কিনা। শুরু করলাম আর্জেন্টিনা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে আলোচনা। সফলও হলাম। পরে আর্জেন্টিনার সঙ্গে খেলবে বলে নাইজেরিয়াও রাজি হয়ে গেল।

২০১১ সালে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে মেসিরা প্রীতিম্যাচে লড়ল আফ্রিকার ঈগলখ্যাত নাইজেরিয়ার বিপক্ষে। দেশের ফুটবলে নতুন প্রাণ সঞ্চার হলো। মেসি আসার পর সাহসটা বেড়ে গেল। ম্যারাডোনাকে ঢাকা আনার চেষ্টা নতুনভাবে শুরু করলাম। ব্যস্ততা আর অসুস্থতার কারণে আনা সম্ভব হচ্ছিল না। মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে বাফুফে নানা কর্মসূচি হাতে নিল। এরমধ্যে অন্যতম ছিল বিশেষ অতিথি হিসেবে ম্যারাডোনাকে আমন্ত্রণ জানাল। এবার কোটি কোটি ভক্তের হৃদয় কাঁপানো ফুটবলার রাজি হয়ে গেলেন। শিডিউলও ঠিক করা হচ্ছিল। ম্যারাডোনা আসবে এরচেয়ে বড় খুশির খবর আর কি হতে পারে। সরকারেরও অনুমতি পেলাম। কিন্তু সর্বনাশা করোনাভাইরাস সব মাটি করে দিল।

তবু আমার চেষ্টা অব্যাহত ছিল। কিন্তু আফসোসটা থেকেই গেল। বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় ফুটবলার ম্যারাডোনাকে আর ঢাকায় আনা গেল না। বিশ্বকে কাঁদিয়ে চলে গেলেন না ফেরার দেশে। যে দেশে এত ভক্ত। ওর হাসিতে সবাই হাসে, ওর বেদনায় সবার চোখ ভিজে যায় সেই বাংলাদেশকে দেখা হলো না দিয়েগোর। এটা ভক্তদের কাছে যেমন কষ্টের আমার জন্যেও বড় বেদনা। সব যখন চূড়ান্ত হতে যাচ্ছিল করোনাভাইরাসে মাটি হয়ে গেল। ম্যারাডোনার বাংলাদেশ দেখা হয়নি। তবু কোটি কোটি ভক্তদের মাঝে তিনি আজীবন মহানায়ক হয়ে থাকবেন। বাংলাদেশ তাকে কখনো ভুলবে না।

সর্বশেষ খবর