রবিবার, ২৯ নভেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

যেখানে ম্যারাডোনাই সেরা

রাশেদুর রহমান

যেখানে ম্যারাডোনাই সেরা

১০ নম্বর জার্সিতে ফুটবলের ইতিহাসে অনেক মহাতারকাই খেলেছেন। পেলে, পুসকাস, মিশেল প্লাতিনি, জিকো, জিনেদিন জিদানসহ আরও অনেক নামকরা ফুটবলার ১০ নম্বর জার্সি গায়ে জড়িয়েছেন। কিন্তু ম্যারাডোনার মতো এতটা উঁচুতে কেউই উঠতে পারেননি

দিয়েগো ম্যারাডোনা। ফুটবল ইতিহাসে সর্বকালের সেরা শিল্পী হিসেবে তাকে মেনে নেওয়া হয়। অবশ্য অনেকের কাছে পেলেই সর্বকালের সেরা। সর্বকালের সেরা হিসেবে কিছুটা বিতর্ক থাকলেও একটা স্থানে ম্যারাডোনার কাছাকাছি কেউ নেই। আর্জেন্টিনার জার্সিতে চারটা বিশ্বকাপে অংশ নিয়েছেন তিনি। এর মধ্যে তিনটাতেই ছিলেন অধিনায়ক। দুইবার বিশ্বকাপের ফাইনালে তুলেছেন দলকে প্রায় একক নৈপুণ্যে। একবার চ্যাম্পিয়ন করেছেন। এমন অনন্য রেকর্ড ১০ নম্বর জার্সিতে আর কারও নেই।

১০ নম্বর জার্সিতে ফুটবলের ইতিহাসে অনেক মহাতারকাই খেলেছেন। পেলে, পুসকাস, মিশেল প্লাতিনি, জিকো, জিনেদিন জিদানসহ আরও অনেক নামকরা ফুটবলার ১০ নম্বর জার্সি গায়ে জড়িয়েছেন। কিন্তু ম্যারাডোনার মতো এতটা উঁচুতে কেউই উঠতে পারেননি।

১৯৭৮ সালের বিশ্বকাপেই অভিষেক হতে পারত ম্যারাডোনার। কিন্তু সেসময় তার বয়স ছিল মাত্র ১৭ বছর। এত কম বয়সী একজনকে বিশ্বকাপ দলে রাখতে চাননি আর্জেন্টাইন কোচ। ১৯৮২ সালে বিশ্বকাপে ম্যারাডোনা ছিলেন তারকা। কিন্তু সেবার লাল কার্ড দেখে মাঠ ছাড়তে হয়েছিল তাকে। ১৯৮৬ সালে এক বিস্ময়কর ঘটনার জন্ম দেন ম্যারাডোনা। প্রায় একক নৈপুণ্যে একটা দলকে বিশ্বকাপ শিরোপা উপহার দেন। ফুটবল ইতিহাসের সেরা সেরা দলগুলোকে অবলীলায় হারিয়ে দেয় ম্যারাডোনার আর্জেন্টিনা। অধিনায়ক হিসেবে তার হাতে উঠে বিশ্বকাপের সোনালি ট্রফি। ১৯৯০ সালেও বিশ্বকাপটা হতে পারত ম্যারাডোনার। ফাইনালে তুলেছিলেন দলকে। কিন্তু সেবার রেফারির বিতর্কিত সিদ্ধান্তে শিরোপা হারায় আর্জেন্টিনা। ১৯৯৪ সালেও ম্যারাডোনার নেতৃত্বে বিশ্বকাপ খেলতে যায় আর্জেন্টিনা। এবারেও ষড়যন্ত্র করে তাকে বিশ্বকাপের মঞ্চ থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়। শূন্য হাতেই বাড়ি ফেরে আর্জেন্টিনা। কিন্তু ততদিনে ফুটবল ইতিহাসে নিজের নামটা সোনালি হরফে লিখে নেন ম্যারাডোনা। আর্জেন্টিনার মানুষের মনে আসন গেড়ে নেন। ফুটবল জীবনের পরও নানা ঘটনা-দুর্ঘটনায় দিয়েগো ম্যারাডোনা বার বার সংবাদের শিরোনাম হয়েছেন। নায়ক থেকে খলনায়ক হয়েছেন। কিন্তু ভক্তদের হৃদয় থেকে তার নাম কখনো মুছে যায়নি। গত বুধবার ম্যারাডোনার মৃত্যুর পর ভক্তদের কান্না-আহাজারিই বলছিল, তিনি কতোটা প্রিয় ছিলেন।

১০ নম্বর জার্সিতে পেলে খেলেছেন। তার সম্মানে নিউইয়র্ক কসমস ১০ নম্বর জার্সিটা স্থায়ীভাবে তুলে রেখেছে। ওটা আর কাউকে পড়তে দেয় না তারা। পেলে তিনটা বিশ্বকাপ জিতেছেন। কিন্তু তার সঙ্গে খেলেছেন গ্যারিঞ্চ, ভাভা, ডিডি, মারিও জাগালোদের মতো তারকারা। যারা প্রয়োজনে একাই ম্যাচ জিতিয়ে দিতে পারতেন। কোনো ম্যাচে পেলে আলো ছড়াতে না পারলেও ব্রাজিলের জয় পেতে কষ্ট হতো না তাদের জন্য। এককভাবে একটা দলকে খ্যাতির শিখরে পৌঁছে দেওয়ার দিক দিয়ে ফেরেনচ পুসকাস পেলের চেয়ে অনেক এগিয়ে। তিনি প্রায় একক চেষ্টায় হাঙ্গেরিকে বিশ্বকাপের ফাইনালে তুলেছেন ১৯৫৪ সালে। এছাড়াও আরও অনেক খ্যাতি রয়েছে পুসকাসের। গোলমেশিন হিসেবে তার বেশ নাম ছিল। কিন্তু ম্যারাডোনার মতো নেতা হিসেবে তিনি বিশ্বকাপ জিততে পারেননি। সে কারণে পেলে কিংবা পুসকার ম্যারাডোনার পিছনেই পড়ে আছেন এই তালিকায়।

দশ নম্বর জার্সিতে খেলে বিশ্বজোড়া খ্যাতি পেয়েছেন জিনেদিন জিদান, মিশেল প্লাতিনি, সাদা পেলে খ্যাতি জিকো, রিভালদো, রোনালদিনহোসহ আরও অনেকে। কিন্তু এদের কেউই ম্যারাডোনার কাছাকাছিও যেতে পারেননি। বিশ্বকাপজয়ী হিসেবে জিদান, রোনালদিনহো এবং রিভালদোরা অনেকের কাছেই স্বপ্নের নায়ক। কিন্তু মিশেল

প্লাতিনি যেমন বলেছেন, জিদান ফুটবল নিয়ে যা করত ম্যারাডোনা কমলা দিয়েই তা করতে পারতেন। এখানেই ম্যারাডোনার শ্রেষ্ঠত্ব বুঝা যায়।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর