মঙ্গলবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা
স্বাধীনতার আগের গল্প শেষ পর্ব

রকিবুলকে দেখা মাত্রই গুলির নির্দেশ

‘পরের দিন দেখলাম আমার বিরুদ্ধে আর্মি আইনে দেশদ্রোহী মামলা করা হয়েছে। ঘোষণা দেওয়া হয়েছে আমাকে দেখা মাত্রই গুলির নির্দেশ।’

ক্রীড়া প্রতিবেদক

রকিবুলকে দেখা মাত্রই গুলির নির্দেশ

ক্রিকেটেও দাবিয়ে রাখা হয়েছিল বাঙালিদের। যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানি ক্রিকেটারদের সুযোগ মিলছিল না পাকিস্তান জাতীয় দলে। সেই ষড়যন্ত্রের দাঁতভাঙা  জবাব দিয়েছিলেন রকিবুল হাসান। শেষ পর্যন্ত ঠিকই তার ঠাঁই হয়েছিল তৎকালীন পাকিস্তান দলে। ১৯৭১ সালে ঢাকায় খেলতে আসে আন্তর্জাতিক একাদশ। সেখানে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের একমাত্র ক্রিকেটার হিসেবে পাকিস্তান জাতীয় দলে খেলেন তিনি। মাঠে নেমেই বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ফেলেন বাঙালি এ কিংবদন্তি ক্রিকেটার। তৎকালীন ঢাকা স্টেডিয়ামে ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হয়। দিনটি ছিল ২৬ ফেব্রুয়ারি। ব্যাট হাতে রকিবুল মাঠে নামার সময় গ্যালারি ভরা দর্শকরা করতালি দিয়ে তাকে অভিনন্দন জানান। কারণ তার ব্যাটে বাঙালি জাতির গৌরবের স্লোগান জয় বাংলা লেখা স্টিকার লাগানো ছিল। পুরো স্টেডিয়াম অবাক। অনেকে বলতে থাকেন রকিবুল এই দুঃসাহসিক কাজ করল কিভাবে?

রকিবুল সেদিনের ম্যাচের স্মৃতিচারণ করে বলেন, ‘আগের দিন অর্থাৎ ২৫ ফেব্রুয়ারিতেই সিদ্ধান্ত নিলাম জয় বাংলা স্টিকার লাগিয়ে মাঠে নামব। পূর্বাণী হোটেলে ৭১০ নম্বর রুমে থাকতাম। হাতে জয় বাংলা স্টিকার নিয়ে সেদিন রুমে ঢুকলাম। বাঙালি প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে  পাকিস্তান জাতীয় দলে খেলব বলে অনেক বন্ধু আমাকে শুভেচ্ছা জানাতে এসেছে। পরে এলেন শেখ কামাল ও মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন। কামাল বললেন, কি রে তোর হাতে কী? আমি বললাম, জয় বাংলার স্টিকার। এটা ব্যাটে লাগিয়েই মাঠে নামব। ইয়াহিয়া খান ও ভুট্টো বঙ্গবন্ধুকে ক্ষমতা দিতে যে টালবাহানা করছে তার নীরব প্রতিবাদ জানাব ব্যাটে জয় বাংলা লিখে। কামাল বললেন, সাবাস দোস্ত, তুই দেখিয়ে দে বাঙালি কতটা সাহসী জাতি। কামাল নিজেই আমার ব্যাটে জয় বাংলা স্টিকার লাগিয়ে দিলেন। আমি গর্ববোধ করি ক্রিকেটের মাধ্যমে আমি বিশ্বকে বোঝাতে সক্ষম হয়েছিলাম স্বাধীনতার কথা। বিবিসিসহ বিশ্ব মিডিয়া গুরুত্বসহকারে আমার সাহসিকতার কথা প্রচার করেছিল।’

রকিবুল জানান, ‘পরের দিন দেখলাম আমার বিরুদ্ধে আর্মি আইনে দেশদ্রোহী মামলা করা হয়েছে। ঘোষণা দেওয়া হয়েছে- আমাকে দেখা মাত্রই গুলির নির্দেশ। অস্বীকার করব না, আমি কিছুদিন গা ঢাকা দিয়েছিলাম। ২৭ মার্চ কারফিউ কিছুটা শিথিল হলে আমি পাকিস্তান আর্মির হাতে নিহত হওয়া মুশতাক ভাইয়ের লাশ দাফন করে বাসায় ফিরছিলাম। পথে দেখা হয় তখন ইস্টএন্ডে খেলা ফুটবলার দিপু ভাইয়ের সঙ্গে। তিনি ক্রিকেটও খেলতেন। উনিই আমাকে বললেন, রকিবুল যেভাবে হোক তুমি ঢাকা ছাড়। না হলে পাকিস্তানি আর্মিরা তোমাকে মেরে ফেলবে। চলে গেলাম গোপালগঞ্জে নিজ গ্রামে। দেখলাম শেখ শহিদুল ইসলাম ভাইকে। কিছুদিন  সেখানেই থাকলাম। পরে তিনি বললেন, তুই ভারতে যা, ফুটবলের মতো স্বাধীন বাংলা ক্রিকেট দলও গড়তে হবে। তুই থাকবি ক্যাপ্টেন। দল গড়ার কাজ শুরু করে দিলাম। কিন্তু ১৬ ডিসেম্বর বিজয় লাভ করায় তা আর প্রয়োজন হয়নি।’ 

সর্বশেষ খবর