রবিবার, ২০ ডিসেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা
অ্যাডিলেড টেস্ট

কোহলিদের ‘গোলাপি’ দুঃখ

৩৬ রানে অলআউট ভারত ॥ অস্ট্রেলিয়ার ৮ উইকেটে জয়

মেজবাহ্-উল-হক

কোহলিদের ‘গোলাপি’ দুঃখ

অস্ট্রেলিয়ার ভয়ংকর বোলিং, গোলাপি বল নাকি ব্যাটিং ব্যর্থতা- কী কারণে দিবারাত্রির অ্যাডিলেড টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে ৩৬ রানে প্যাকেট হয়ে লজ্জায় ডুবল বিরাট কোহলির পরাক্রমশালী ভারত!

-ক্রিকেট বিশ্লেষকদের কাছে এমন আরও বেশ কিছু ‘কারণ’ সামনে আসতে পারে! কিন্তু এটা সত্য যে, উইকেট যেমনই হোক ৩৬ রানে অলআউট হওয়ার পেছনে কোনো যুক্তি চলে না। ভারতের কোনো ব্যাটসম্যান ডাবল ফিগারেই পৌঁছাতে পারেননি। পৃথ্বী শো ৪, মায়াঙ্ক আগারওয়াল ৯, জাসপ্রীত বুমরা ২, চেতেশ্বর পূজারা ০, বিরাট কোহলি ৪, আজিঙ্কা রাহানে ০, হনুমা বিহারী ৮, ঋদ্ধিমান সাহা ৪, রবিচন্দন অশ্বিন ০, উমেশ যাদব ৪*, মোহাম্মদ শামি ১। ১১ ব্যাটসম্যানের স্কোর পাশাপাশি রাখলে মনে হবে ‘মোবাইল ডিজিট’!

অস্ট্রেলিয়ার বোলিং... উফ্! দুই পেসার প্যাট কামিন্স ও জস হ্যাজলউড যে বোলিং করেছেন তার প্রশংসা না করে উপায় আছে! নিউ সাউথ ওয়েলসের ‘গোল্ডেন বয়’ হ্যাজলউড ৫ ওভার বোলিং করে তিন মেডেন নিয়ে ৮ রান দিয়ে শিকার করেছেন ৫ উইকেট। আরেক পেসার প্যাট কামিন্স ১০.২ ওভারে ২১ রানে ৪ উইকেট নিয়েছেন।

এই দুই পেস বোলিং শিল্পীই অ্যাডিলেডে তাদের নিজস্ব ক্যানভাসে তুলির আঁচড় দিয়ে ভারতীয়দের কপালে দুঃস্বপ্নের কালো তিলক এঁকে দিয়েছেন।

হ্যাঁ, টেস্টের ইতিহাসে সব মিলে সর্বনিম্ন স্কোর এটি নয়। তবে ভারতীয়দের ইতিহাসে এক ইনিংসে এটি সর্বনিম্ন দলীয় স্কোরের নতুন লজ্জা! এর আগে ছিল ৪২ রান। ১৯৭৪ সালে অজিত ওয়াদেকারের ভারত ‘হোম অব ক্রিকেট’ লর্ডসে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে এই লজ্জা পেয়েছিল। লজ্জার খাতায় কলঙ্কের তালিকায় ওয়াদেকারকে মুক্ত করে সেখানে নিজের নাম যুক্ত করলেন বিরাট কোহলি। ওয়াদেকারের দলে তবু একজন দুই অঙ্কের কোটায় পৌঁছেছিলেন, কিন্তু কোহলিরা তো সবাই ‘সিঙ্গেল ডিজিটে’ আউট। এক ইনিংসে দলের ১১ জন ব্যাটসম্যানই দুই অঙ্কের কোটায় পৌঁছার আগেই আউট হওয়ার ঘটনা দ্বিতীয়বারের মতো দেখল টেস্ট ক্রিকেট। এর আগে ১৯২৪ সালে বার্মিংহামে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে দক্ষিণ আফ্রিকা এমন লজ্জায় পড়েছিল।

টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে সর্বনিম্ন রানের লজ্জা নিউজিল্যান্ডের। ১৯৫৫ সালে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে কিউইরা অকল্যান্ডে মাত্র ২৬ রানেই অলআউট হয়েছিল। এরপর টানা চারটি সর্বনিম্ন রানের লজ্জার তালিকায় দক্ষিণ আফ্রিকার নাম। ভারতের স্কোরটি যৌথভাবে পঞ্চম সর্বনিম্ন। এই লজ্জায় অস্ট্রেলিয়ার নামও আছে। ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে বার্মিংহামে তারাও ৩৬ রানে অলআউট হয়েছিল।

গোলাপি বলের দুঃখ- অস্ট্রেলিয়া সফরে ভারত দিবারাত্রির টেস্টটি খেলতে চায়নি প্রথমে। অসি ক্রিকেট বোর্ডের চাপাচাপিতে রাজি হয়ে যায়। প্রথম ইনিংসের পর ভারত যখন টেস্টের ড্রাইভিং সিটে তখন হয়তো সমর্থকদের কাছে সিদ্ধান্তটি ‘শাপে বর’ মনে হয়েছিল, কিন্তু এই লজ্জার পর যে অনুতাপ করার সুযোগও আর থাকছে না!

তবে লজ্জার ইনিংসের পরও কিংবদন্তি শচীন টেন্ডুলকার এখানে কারও দোষ খুঁজতে নারাজ। বরং প্রথম ইনিংসে পিছিয়ে পড়া অস্ট্রেলিয়ার বীরত্বকে অভিবাদন জানিয়েছেন।

ভারতের হারের পর ব্যাটিং জিনিয়াসের টুইট, ‘ব্যাটিং এবং বোলিংয়ে দুর্দান্ত দাপট দেখিয়ে ভারত প্রথম ইনিংসে চালকের আসনে ছিল। দ্বিতীয় ইনিংসে অস্ট্রেলিয়া কী অসাধারণ নৈপুণ্য দেখাল। এটাই তো টেস্ট ক্রিকেটের আসল সৌন্দর্য। অভিনন্দন অস্ট্রেলিয়া।’

টেন্ডুলকারের দ্বিতীয় বাক্যটি প্রত্যেক টেস্ট খেলোয়াড়ের জন্য খুবই শিক্ষণীয় ‘টেস্ট ম্যাচ শেষ হওয়ার আগেই শেষ দেখতে নেই।’

ভারতের দুঃস্বপ্নের দিনে অস্ট্রেলিয়ার ৮ উইকেটে পাওয়া ক্যারিশম্যাটিক জয়টা যেন আড়ালেই থাকছে। তবে এমন হারের পর ভারতীয় দল ভেঙে পড়েছে এমনটা ভাবতে নারাজ স্বয়ং ক্যাপ্টেন কোহলি, ‘আমাদের ভাবনা ছিল দ্রুত রান করা। সেটা করতে গিয়েই টপাটপ উইকেট পড়েছে। ওরা আহামরি খুব ভালো বল করেছে এমন নয়। হয়তো দেখা যাবে, বক্সিং ডে টেস্টেই (দ্বিতীয় টেস্ট) ফল অন্যরকম হয়েছে।’

ভারতের যে সেই সক্ষমতা আছে, তা তো আগেই সফরে দেখিয়েছেন কোহলিরা। অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে টেস্ট সিরিজ জিতেছিল ২-১ ব্যবধানে। কিন্তু এমন একটি লজ্জার পর সত্যিই কী এই সফরে ভারত আর ঘুরে দাঁড়াতে পারবে! কারণ কোহলিও আর থাকছেন না। সন্তানসম্ভবা স্ত্রী আনুশকা শর্মার পাশে থাকতে ভারতে ফিরছেন।

তবে এটা ঠিক, পরের দুই টেস্টে কোহলিকে ছাড়া যদি ভারত ভালোও করে তারপরও গোলাপি বলের এই টেস্টে পাওয়া ৩৬ রানের লজ্জা তাদের কাছে ‘গোলাপি দুঃখ’ হয়েই থাকবে!

 

সাবেকদের মন্তব্য

‘ব্যাটিং এবং বোলিংয়ে দুর্দান্ত দাপট দেখিয়ে ভারত প্রথম ইনিংসে চালকের আসনে ছিল। দ্বিতীয় ইনিংসে অস্ট্রেলিয়া কি অসাধারণ নৈপুণ্য দেখাল। এটাই তো টেস্ট ক্রিকেটের আসল সৌন্দর্য। অভিনন্দন অস্ট্রেলিয়া।’

-- শচীন টেন্ডুলকার ভারত

 

‘দাঁড়ান, কী হলো এটা! আমি একটু গলফ খেলতে গিয়েছিলাম, নয় হোল খেলে এসে দেখি ম্যাচ শেষ! অস্ট্রেলিয়ানরা কি দারুণ বোলিংই না করল! পেস বোলিং আসলেই পার্থক্য গড়ে দেয়!’

------ ওয়াসিম আকরাম পাকিস্তান

 

‘ঘুম থেকে উঠে দেখলাম (ভারতের) স্কোর ৩৬৯। বিশ্বাসই করতে পারছিলাম না। চোখমুখ ধুয়ে তারপর দেখলাম স্কোর আসলে ৩৬/৯। এটাও বিশ্বাস করতে পারছিলাম না, পরে আবার ঘুমিয়ে গেলাম’ 

---- শোয়েব আখতার পাকিস্তান

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর