মঙ্গলবার, ২২ ডিসেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

হুমকিতে ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ!

নতুন বছরে ‘বাবল’ যন্ত্রণা কি থাকছে

মেজবাহ্-উল-হক

হুমকিতে ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ!

করোনা মহামারীর কারণে অন্য সবকিছুর মতো বদলে গেছে ক্রিকেটের বাস্তবতা। অধিকাংশ টুর্নামেন্ট স্থগিত হয়ে গেছে। গুটিকয়েক যে টুর্নামেন্টও হচ্ছে তা ‘বায়ো-সিকিউর বাবলে’ মাঠে গড়াচ্ছে।

সব দেশের পক্ষে কি ব্যয়বহুল এই সুরক্ষা বলয়ে খেলা আয়োজন করা সম্ভব!

‘বায়ো-সিকিউর বাবলে’ কতদিন চলবে ক্রিকেট?

করোনা থেকে মুক্ত হয়ে ক্রিকেট খেলার জন্য ‘বায়ো-সিকিউর বাবল’ খুবই ভালো পন্থা হলেও এখানে অসুবিধা অনেক। দর্শক না থাকায় আয় যেমন কমে গেছে, তেমনি ব্যয় অনেক বেড়ে যাচ্ছে। তা ছাড়া বায়ো-সিকিউর বাবলের মধ্যে খেলতে অনীহা প্রকাশ করছেন ক্রিকেটাররাও। তাই ২০২১ সালে এই ‘বাবল’ আর থাকছে না বলে বার্তা সংস্থা এএফপির এক প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে। যদি ‘বায়ো-সিকিউর বাবল’ বন্ধ হয়ে যায় তাহলে ক্রিকেট চলবে কীভাবে?

এ বছরের মার্চে নারী টি-২০ বিশ্বকাপের ফাইনালে মেলবোর্নে ৮৬ হাজার দর্শক একসঙ্গে গ্যালারিতে বসে খেলা দেখেছিলেন। এরপর থেকেই গ্যালারিতে প্রবেশ নিষিদ্ধ হয়ে যায়। যদিও সাহস করে অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ড দর্শকশূন্য গ্যালারিতে সিরিজ শুরু করেছিল কিন্তু শেষ করতে পারেনি। মাঝপথে স্থগিত হয়ে যায়। এরপরই আন্তর্জাতিক সূচিতে ব্যাপক প্রভাব পড়ে। এ বছরের ছেলেদের টি-২০ বিশ্বকাপ আয়োজনের কথা ছিল অস্ট্রেলিয়ার, কিন্তু হয়নি। বাংলাদেশেরও বেশ কিছু সফর স্থগিত হয়েছে।

অথচ এ বছরে ক্রিকেট সূচি ছিল ঠাসা। কিন্তু ম্যাচ হয়েছে হাতে গোনা কিছু। সবকিছু এলোমেলো হয়ে গেছে। কয়েক মাস অপেক্ষার পর ক্রিকেটারদের কথা চিন্তা করে এবং ক্ষতি পুষিয়ে নিতে ইংল্যান্ড ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সিরিজ আয়োজন করে। তারা এফটিপির (ফিউচার ট্যুর প্রোগ্রাম) চাপ কমাতে আলাদা করে দুটি দলে খেলা চালিয়ে গেছে। অস্ট্রেলিয়া ও আয়ারল্যান্ডের বিরুদ্ধেও সিরিজ আয়োজন করেছে।

ইংল্যান্ড সফলও হয়েছে। খেলা হয়েছে দুই ভেন্যু সাউদাম্পটন ও ম্যানচেস্টারে। দুই ভেন্যু সংলগ্ন পাঁচ তারকা হোটেল থাকায় সেখানেই ক্রিকেটারদের থাকার ব্যবস্থা করতে পেরেছিল বিধায় ইংল্যান্ডের জন্য কাজটা অনেক সহজ হয়েছে। ইংল্যান্ড ধনী ক্রিকেট বোর্ড বলে ব্যয়ভারও বহন করতে পেরেছে। কিন্তু অপেক্ষাকৃত দুর্বল ক্রিকেট বোর্ডগুলোর পক্ষে কি এমন সময়ে ক্রিকেট চালানো সম্ভব? তাদের কি এত সুযোগ-সুবিধা আছে?

ক্রিকেট কি তবে কেবলই ধনী দেশগুলোর খেলা হয়ে যাচ্ছে! বা যাদের পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা নেই তারা ক্রিকেট খেলা ছেড়ে দেবে?

দক্ষিণ আফ্রিকার মতো দেশ ইংল্যান্ডকে আতিথেয়তা দিতে সমর্থ হয়নি। তা ছাড়া ইংল্যান্ড আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ‘বায়ো-সিকিউর বাবলে’ করতে পারলেও তারা ঘরোয়া লিগ আয়োজনে সাহস পাচ্ছে না। 

এখন আয় যতটুকু আসছে তা কেবলই ব্রডকাস্ট থেকে। খেলা না চললে সে আয়ও আর থাকে না। ২০২০ সালে এক বছরেই সব মিলে সম্প্রচার স্বত্ব থেকে ইসিবি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্রায় ১০০ মিলিয়ন পাউন্ড। ২০২১ সালও যদি এভাবে চলতে থাকে তাহলে ক্ষতির পরিমাণ হয়ে যাবে ২০০ মিলিয়ন পাউন্ড।

যদিও এই সময়ের মধ্যেই ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড সংযুক্ত আরব আমিরাতে আইপিএল আয়োজন করেছে। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডও (বিসিবি) ঘরোয়া টুর্নামেন্ট করে সফল হয়েছে। রুদ্ধদ্বার টুর্নামেন্ট করেছে উপমহাদেশের দুই দেশ শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তানও। কিন্তু সবাইকে ক্ষতির সম্মুখীন হতেই হচ্ছে। ক্রিকেটকে বাঁচিয়ে রাখার স্বার্থেই ম্যাচ আয়োজন করতে হবে। কিন্তু এভাবে কত দিন চলবে?

শেষ পর্যন্ত না হয় ধনী বোর্ডগুলো টিকে থাকল, কিন্তু দুর্বল ক্রিকেট বোর্ডগুলোর ভাগ্যে কী জুটবে? যারা ব্যয় বহন করতে পারবে না তারা কি ক্রিকেট খেলা ছেড়ে দেবে? ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কিত ক্রিকেট বিশ্লেষকরা। ইংল্যান্ডের সাবেক অধিনায়ক মাইকেল ভন বলেন, ‘আমি ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত। যেভাবে ক্রিকেট চলছে তাতে কেবল ধনী দেশগুলোই ক্রিকেট খেলতে পারবে। কারণ বায়ো-সিকিউরে খেলার ব্যয় বহন করা সবার পক্ষে সম্ভব নয়।

এটা তো গেল আয়োজকদের সমস্যা। যারা খেলছেন সেই ক্রিকেটাররাও অস্বস্তিতে আছেন।

অন্য সময়ে খেলোয়াড়রা অনুশীলন কিংবা ম্যাচ খেলার পর হোটেলে গিয়ে আড্ডা দেন। মানসিকভাবে রিফ্রেশমেন্টের জন্য গল্পগুজব করেন। কিন্তু এখন সে উপায় নেই। বায়ো-সিকিউর বাবলে খেলোয়াড়দের রুমবন্দী থাকতে হয় হোটেলে। ছোট রুমে থাকতে থাকতে মানসিকভাবেই তারা অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়েন। রাখ-ঢাক না করে ওয়েস্ট ইন্ডিজের অধিনায়ক তো নিউজিল্যান্ডে হারের পেছনে এটাকেই কারণ হিসেবে দায়ী করেছেন। তিনি বলেন, ‘এমনিতেই দিনের পর দিন বাবলের মধ্যে আছি। তার ওপর রুম ছোট হলে একাকিত্ব বেড়ে যায়।’

বাবলে বিরক্ত হয়েই ইংল্যান্ডের দুই তারকা টম বেন্ডন এবং টম কারান বিগ-ব্যাশ থেকে নাম প্রত্যাহার করে নেন। এ ছাড়া মানসিক অবসাদগ্রস্ততার কারণেই দুর্দান্ত ফর্মে থাকার পরও পাকিস্তানের মোহাম্মদ আমিরের মতো তারকা পেসার মাত্র ২৮ বছর বয়সেই অবসর নিয়েছেন। -সব মিলে ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ নিয়েই যেন ভাবনায় পড়েছেন ক্রিকেট কর্তারা। এমন পরিস্থিতিতে নতুন বছরে ক্রিকেটের অভিভাবক সংস্থা আইসিসি ‘বায়ো-সিকিউর বাবল’ রাখবে কিনা সেটাই প্রশ্ন!

 

সর্বশেষ খবর