বুধবার, ৬ জানুয়ারি, ২০২১ ০০:০০ টা

এই উইন্ডিজ কি ‘ছোট’ দল

মেজবাহ্-উল-হক

এই উইন্ডিজ কি ‘ছোট’ দল

গতকাল শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের ইনডোরে অনুশীলনের পর পরিশ্রান্ত মুশফিক ফ্লোরে বসে পড়লেন। ওয়ানডে অধিনায়ক তামিম ইকবাল ব্যাটের দিকে তাকিয়ে হয়তো ভাবছেন জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে সিরিজের মতো উইন্ডিজের বিরুদ্ধেও তার ব্যাট হাসবে তো? -বিসিবি

মাশরাফি বিন মর্তুজা ওয়ানডে দলে কেন নেই?

টেস্টে পরীক্ষিত মাহমুদুল্লাহ রিয়াদকে কেন সুযোগ দেওয়া হলো না?

-ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজের জন্য বাংলাদেশের টেস্ট ও ওয়ানডে প্রাথমিক দল ঘোষণার পর এখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের জনপ্রিয় দুই প্রশ্ন!

সব কিছুর পরও কাজটা নির্বাচক মন্ডলীর। তারাই ভালো বুঝবেন, তাদের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা অনুযায়ী কাকে দলে রাখবেন আর কাকে বাদ দেবেন!

স্যোশাল মিডিয়ায় এর আগে হা-হুতাশ ছিল, ওয়েস্ট ইন্ডিজ বাংলাদেশ সফরের জন্য তাদের দ্বিতীয় বা তৃতীয় সারির দল পাঠাচ্ছে!

সত্যিই কি ওয়েস্ট ইন্ডিজের দ্বিতীয় বা তৃতীয় সারির দল বাংলাদেশ সফরে আসছে?

১৩টি স্বাধীন রাষ্ট্র এবং বেশ কিছু দ্বীপ নিয়ে গঠিত ‘ওয়েস্ট ইন্ডিজ’ ক্রিকেট দলে কিছু পরিচিত মুখ নেই বলেই কি সেটা দ্বিতীয় বা তৃতীয় সারির দল হয়ে গেল! হ্যাঁ, এটা ঠিক অভিজ্ঞতায় একটু হয়তো পিছিয়ে এই দলের ক্রিকেটাররা। কিন্তু এই ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ছোট করে দেখার কোনো উপায় নেই বলে মনে করেন জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক ও ক্রিকেট বিশ্লেষক রকিবুল হাসান। গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে তিনি বলেন, ‘ক্রিকেটে দ্বিতীয় সারির দল বলে কিছু নেই। ওয়েস্ট ইন্ডিজের নিয়মিত কিছু ক্রিকেটার আসছেন না। সে কারণে হয়তো অপেক্ষাকৃত কিছুটা দুর্বল মনে হতে পারে। তাই বলে ছোট করে দেখার কোনো উপায় নেই। আমরা কাগজে-কলমে এগিয়ে থেকে আফগানিস্তানের বিরুদ্ধেও হেরেছি। ক্রিকেট অনিশ্চয়তার খেলা। যে কোনো কিছুই হতে পারে। তাই সতর্ক থাকতে হবে।’

-কিছুটা ফ্ল্যাশব্যাকে যাওয়া যাক! এক দশক আগে গেইল-সারওয়ানদের মতো তারকারা ক্যারিবীয় ক্রিকেট বোর্ডের সঙ্গে দ্বন্দ্বের কারণে সরে দাঁড়ান। ২০০৯ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে সেবার সাকিব আল হাসানের নেতৃত্বে বাংলাদেশ দল স্বাগতিকদের হোয়াইটওয়াশ করে আসে।

সেই দলের তরুণ অধিনায়ক ড্যারেন স্যামির জন্য সময়টা ছিল খুবই ভয়ঙ্কর। কিন্তু তারপর কী হলো? সেই গল্পটা কি কারও অজানা? ক্লাইভ লয়েডের পর ওয়েস্ট ইন্ডিজের সবচেয়ে সফল অধিনায়ক এই স্যামি। তার হাত ধরে দু-দুবার টি-২০ বিশ্বকাপের শিরোপা ঘরে তুলেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ২০১২ স্যামির উইন্ডিজ ফাইনালে লঙ্কানদের তাদের ঘরের মাঠে বোকা বানাল, আর সবশেষ আসরে ভারতের মাটিতে শেষ ওভারে ভয়ঙ্কর ইংল্যান্ডকে হারিয়ে শিরোপার হাসি হাসল।

অনেকে তো ক্লাইভ লয়েডের চেয়েও অধিনায়ক হিসেবে ওপরে রাখতে চান স্যামিকে। কারণ, লয়েডের যুগ ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেটের স্বর্ণযুগ। আর এই সময় ‘ঘুণে ধরা’ একটি দলকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন স্যামি।

উইন্ডিজের ছোটদের নিয়েও একটি গল্প আছে। ২০১৬ সালে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের আয়োজক ছিল বাংলাদেশ। আজকের জাতীয় দলের তারকা মেহেদী হাসান মিরাজ তখন অধিনায়ক। টাইগারদের দলটা খুব ভারসাম্যপূর্ণ। প্রস্তুতি ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে উড়িয়ে দিল রীতিমতো। সেই উইন্ডিজের কাছে সেমিফাইনালে হেরেই বিশ্বকাপ যাত্রা থেমে যায় বাংলাদেশের। তারপর উন্ডিজের তরুণরা তো ফেবারিট ভারতকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়নই হয়ে যায়।

ছোটদের দল হোক কিংবা বড়রা- ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলটা সবসময় এমনই। এই দলকে কখনই ছোট করে দেখার উপায় নেই। কারণ কখন, কোন মুহূর্তে তারা ভয়ঙ্কর হয়ে যায় বলা কঠিন। মেরুন জার্সি পরে কারা খেলছেন সেটা বড় বিষয় নয়, আসল বিষয় হচ্ছে দলটির নাম ওয়েস্ট ইন্ডিজ।

নিয়মিত একাদশের ১০-১১ জন আসেনি বলে এই দলটাকে দ্বিতীয় শ্রেণি বা তৃতীয় শ্রেণির দল বলে অতি আত্মবিশ্বাসে ভোগার কোনো কারণ নেই। সাদা পোশাকে ক্যাপ্টেনের জার্সি পরে ক্রেগ ব্রাথওয়েট যে জেসন হোল্ডারকেও ছাড়িয়ে যাবে না তা কে বলতে পারে। কিংবা ‘এ’ দলের পরীক্ষিত দলনেতা জেসন মোহাম্মদ যে কাইরন পাওয়েলের চেয়েও ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করবে না তার গ্যারান্টি কে দেবে!

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর