শুক্রবার, ৮ জানুয়ারি, ২০২১ ০০:০০ টা

সেন্ট কিটসের সেই ‘কামব্যাক’ ম্যাচ

উইন্ডিজের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ ১

মেজবাহ্-উল-হক

সেন্ট কিটসের সেই ‘কামব্যাক’ ম্যাচ

‘মোমেন্টাম’ হারিয়েও কীভাবে সিরিজ জয় করা যায় ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে সে ‘দীক্ষা’ টাইগাররা পেয়েছিলেন ২০১৮ সালে ওয়ানডে সিরিজের শেষ ম্যাচে সেন্ট কিটস অ্যান্ড নেভিসে।

ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফর ছিল কোচ স্টিভ রোডসের প্রথম অ্যাসাইনমেন্ট। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে টেস্ট সিরিজের প্রথম দুই টেস্টেই খুব বাজেভাবে হেরে যায় বাংলাদেশ। প্রথম টেস্টের প্রথম ইনিংসে নর্থ সাউন্ডে মাত্র ৪৩ রানে অলআউট হয়ে যেন মানসিকভাবে ‘বিপর্যস্ত’ হয়ে পড়েছিলেন টাইগাররা।

কিন্তু ওয়ানডে সিরিজের প্রথম ম্যাচেই জিতে ‘চাঙ্গা’ সাকিব আল হাসানের বাংলাদেশ। অসাধারণ ব্যাটিং করেন তামিম ইকবাল। এরপর দ্বিতীয় ম্যাচে আবারও হার। প্রায় জেতা ম্যাচে ৩ রানে হেরে যান টাইগাররা। এ হারের পর বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা যেন ‘মোমেন্টাম’ হারিয়ে ফেলেন। তীরে এসে তরী ডুবে যাওয়ায় টাইগাররা যেন মানসিকভাবে বিধ্বস্ত হয়ে যান।

তবে সেন্ট কিটস অ্যান্ড নেভিসে সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচে বাংলাদেশের জন্য ‘টনিক’ হিসেবে কাজ করে নিয়মিত অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজার উপস্থিতি।

স্ত্রীর অসুস্থতার কারণে প্রথম দুই ম্যাচে খেলতে পারেননি নড়াইল এক্সপ্রেস। শেষ সিরিজের শেষ ম্যাচে ম্যাশ এমন একসময় দলের সঙ্গে যোগ দিলেন যখন বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা আত্মবিশ্বাস হারাতে বসেছেন।

দলের সঙ্গে যোগ দিয়েই মাশরাফির প্রথম কাজ সতীর্থদের মানসিকভাবে চাঙ্গা করা। দারুণভাবে সে কাজটিই করলেন তিনি। টেস্ট সিরিজের ব্যর্থতা এবং ওয়ানডে সিরিজের দ্বিতীয় ‘ম্যাচের ছবি’ সবার মন থেকে মুছে ফেলতে বললেন। মাশরাফির এ টোটকাতেই যেন দারুণ কাজ হয়ে গেল।

সেন্ট কিটসে বদলে গেল বাংলাদেশ। টাইগাররা টস জিতে ব্যাট করতে নেমে ৩০১ রান করে। দুর্দান্ত এক সেঞ্চুরি করেন ড্যাসিং ওপেনার তামিম ইকবাল। ঝড়ো হাফ সেঞ্চুরি করলেন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। রান পেলেন মাশরাফি-সাকিবও। সম্মিলিত প্রয়াসে বড় স্কোর গড়ে ম্যাশের দল।

তার পরও জয় নিশ্চিত ছিল না। কেননা প্রতিপক্ষের ব্যাটিং লাইনআপে ছিলেন ক্রিস গেইল, এভিন লুইস, শাই হোপের মতো মারকুটে ব্যাটসম্যান। তরুণ শিমরন হেটমায়ার তো দ্বিতীয় ম্যাচেই ক্যারিবীয়দের জিতিয়ে সমীহ আদায় কওে নিয়েছিলেন। কিন্তু শেষ ম্যাচে সাকিব-মিরাজের ঘূর্ণি আর মাশরাফি-মুস্তাফিজ-রুবেলের পরীক্ষিত বোলিং আটকে দেয় স্বাগতিকদের। ঘরের মাঠে গেইল-হোপরা আশা জাগালেও টাইগারদের বিরুদ্ধে হার মানতেই হয়।

বিদেশের মাটিতে অসাধারণ ‘কামব্যাকে’ সিরিজই জিতে যায় বাংলাদেশ। ওয়ানডে সিরিজের দুর্দান্ত এ কামব্যাকই টি-২০ সিরিজে টাইগারদের উজ্জীবিত করে। সে সফরের আগে আফগানিস্তানের মতো ‘পুঁচকে’ দলের বিরুদ্ধে টি-২০-তে ‘হোয়াইটওয়াশ’ হওয়া বাংলাদেশ চমকে দেয় টি-২০ বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের। গেইল-হোল্ডারদের ভয়ংকর ওয়েস্ট ইন্ডিজ কিনা তাদের ঘরের মাঠে টি-২০ সিরিজও হারে বাংলাদেশের কাছে।

আসলে ওয়ানডে সিরিজের শেষ ম্যাচে পাওয়া সে জয়ই বদলে দিয়েছিল টাইগারদের। তাই বলার অপেক্ষা রাখে না, ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ দল যত জয়ই পাক, ‘কামব্যাক ম্যাচ’ হিসেবে ওয়ানডে সিরিজের শেষ ম্যাচে সেন্ট কিটস অ্যান্ড নেভিসে পাওয়া জয়টি টাইগারদের রেকর্ডবুকে লেখা থাকবে সোনার হরফে!

সর্বশেষ খবর