রবিবার, ১০ জানুয়ারি, ২০২১ ০০:০০ টা

ফাইনালে দুই সেরার লড়াই আজ

ভেন্যু : বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়াম, ঢাকা

ক্রীড়া প্রতিবেদক

ফাইনালে দুই সেরার লড়াই আজ

ফাইনালের আগে হালকা অনুশীলনে ব্যস্ত কিংসের ফুটবলাররা -রোহেত রাজীব

বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে ফেডারেশন কাপের ফাইনাল খেলতে নামছে বসুন্ধরা কিংস ও সাইফ স্পোর্টিং। আজ বিকালে ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হবে। সরাসরি সম্প্রচার করবে টি-স্পোর্টস। সেমিফাইনালে বসুন্ধরা কিংস হারিয়েছে শক্তিশালী প্রতিপক্ষ আবাহনীকে (৩-১ গোলে)। অন্যদিকে  চট্টগ্রাম আবাহনীকে ৩-০ গোলে হারিয়েছে সাইফ স্পোর্টিং।

ফেডারেশন কাপে বসুন্ধরা কিংস টানা তৃতীয় ফাইনাল খেলতে নামছে। প্রথমবার ফাইনালে আবাহনীর কাছে হারলেও গতবার রহমতগঞ্জকে হারিয়ে ফেডারেশন কাপ জয় করেছে তারা। টানা দ্বিতীয়বারের মতো ফেডারেশন কাপ জয়ের সুযোগ অস্কার ব্রুজোনের দলের সামনে। অন্যদিকে প্রথমবার ফেডারেশন কাপের ফাইনাল নিশ্চিত করেছে সাইফ স্পোর্টিং। অস্টম দল হিসেবে ফেডারেশন কাপ জয়ের সুযোগ তাদের সামনে। এর আগে বসুন্ধরা কিংস ছাড়াও ফেডারেশন কাপ জয় করেছে আবাহনী, মোহামেডান, মুক্তিযোদ্ধা, ব্রাদার্স ইউনিয়ন, শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাব এবং শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্র।

ফাইনালটা বেশ উত্তেজনাপূর্ণ হতে পারে আজ। অন্তত গতকাল ম্যাচপূর্ব সংবাদ সম্মেলনে দুই কোচের বক্তব্য শুনে তাই মনে হয়েছে। বসুন্ধরা কিংসের কোচ অস্কার ব্রুজোন প্রতিপক্ষকে সম্মানের চোখেই দেখছেন। ফাইনালকে চ্যালেঞ্জিং মনে করছেন তিনি। অন্যদিকে সাইফের কোচ পল পুট বসুন্ধরা কিংসকে সেরা দল হিসেবেই ঘোষণা করেছেন। তার মতে, বাংলাদেশের ফুটবলে দারুণ একটা মানদ  তৈরি করেছে বসুন্ধরা কিংস।

ফেডারেশন কাপে বসুন্ধরা কিংস চারটি ম্যাচ খেলেছে। প্রতিটাতেই তারা নিজেদের যোগ্যতার প্রমাণ দিয়েছে। ৯টি গোল করার বিপরীতে মাত্র ১টি গোল হজম করেছে। অন্যদিকে সাইফ স্পোর্টিং খেলেছে পাঁচ ম্যাচ। গ্রুপ পর্বে তিনটি এবং সেমিফাইনালে জিতলেও কোয়ার্টার ফাইনালের বাধা পাড়ি দিয়েছে তারা টাইব্রেকার জিতে। ১৫টি গোল করার বিপরীতে ৩টি গোল হজম করেছে সাইফ স্পোর্টিং।

দুটি দলই আক্রমণভাগে দারুণ শক্তিশালী। বসুন্ধরা কিংসের ফরোয়ার্ড লাইনে আছেন রাউল অস্কার বেসেরা, জনাথন ফার্নান্দেজ এবং রবসনের মতো তারকারা। ল্যাটিন শক্তির উপর আস্থা রাখতে পারেন কিংস কোচ অস্কার ব্রুজোন। গত চার ম্যাচের প্রতিটাতেই ল্যাটিনদের গোলে জয় পেয়েছে বসুন্ধরা কিংস। রাউল ৪টি, ফার্নান্দেজ ও রবসন দুটি করে গোল করেছেন। তাদের সঙ্গে মতিন মিয়া, মাহবুবুর রহমান সুফিল, বিপলু আহমেদ, মাশুক মিয়া জনি বাড়তি শক্তি যোগ করেন। ডিফেন্স লাইনে ইরানের খালেদ শাফিই ছাড়াও আছেন দলের অধিনায়ক তপু বর্মণ, বিশ্বনাথ ঘোষ। গোলবারের সামনে দাঁড়িয়ে অতন্দ্র প্রহরীর ভূমিকা পালন করেন আনিসুর রহমান জিকো। ভারসাম্যপূর্ণ একটি দল বসুন্ধরা কিংস।

সাইফ স্পোর্টিং গোল করার দিক দিয়ে এবার ফেডারেশন কাপে সবার উপরে অবস্থান করছে। তবে দলটার ডিফেন্স লাইনে প্রায়ই ফাঁক-ফোকর চোখে পড়ে। তবে ডিফেন্সের এই অভাব পুষিয়ে দেওয়ার জন্য দলটাতে আছেন নাইজেরিয়ার ফরোয়ার্ড জন ওকুলি এবং কেনেথ ইকেচুকু। তাদেরই স্বদেশি এমানুয়েল ডিফেন্স লাইনে খেললেও প্রায়ই ফরোয়ার্ড লাইনে অবদান রাখেন। দুটি গোল করেছেন ফেডারেশন কাপে। একটি কোয়ার্টার ফাইনালে মোহামেডানের বিপক্ষে। অপরটি সেমিফাইনালে চট্টগ্রাম আবাহনীর বিপক্ষে। সাইফের নাইজেরিয়ান ফরোয়ার্ড কেনেথ ইকেচুকু ফেডারেশন কাপে ৫ গোল করেছেন। গোলাদাতার তালিকায় তিনিই শীর্ষে।

কিংসের ডিফেন্স লাইনের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হবে ইকেচুকুর গোল আটকে রাখা। তাছাড়া উজবেকিস্তানের মিডফিল্ডার সিরোজুদ্দিন রাখমাতুল্লায়েভও দারুণ ফুটবল খেলছেন। তবে সাইফ আজ মিডফিল্ডার আল আমিনকে ছাড়াই খেলতে নামবে। ইনজুরিতে আক্রান্ত আল আমিন।

বসুন্ধরা কিংসের মেয়েরা গত মাসেই লিগ জয় করেছে। এক মাসের মধ্যেই দ্বিতীয় শিরোপা উঠতে পারে বসুন্ধরা কিংসের শোকেসে।

 

ফাইনাল হবে চ্যালেঞ্জিং

সাইফ স্পোর্টিং অত্যন্ত ভালো দল। তারা যোগ্যতা দিয়েই ফাইনাল পর্যন্ত এসেছে। তাছাড়া আমরা ৭ জানুয়ারি ১২০ মিনিটের  সেমিফাইনাল খেলেছি। ৭২ ঘণ্টার মধ্যে আবার ম্যাচ  খেলাটা কঠিন। ফাইনালে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হবে। আমরা গত মৌসুমে  ফেডারেশন কাপ জিতেছি। সেই ধারাবাহিকতা রাখতে চাই এবারেও। কোচ আমাদেরকে ফাইনালটা জেতার জন্যই তৈরি করেছেন।

 

 

 

বসুন্ধরা শক্তিশালী প্রতিপক্ষ

প্রথমবারের মতো আমরা সেমিফাইনালে খেলার সুযোগ পাই। তারপর ফাইনালেই উঠে গেলাম। এখন আরেকটি ইতিহাস গড়ার হাতছানি আমাদের সামনে। এখন শিরোপা আমরা প্রত্যাশা করতেই পারি। তবে বসুন্ধরা কিংস খুব শক্তিশালী প্রতিপক্ষ। ফেরারি গাড়ির সঙ্গে টয়োটার তুলনা হয় না। তারা হচ্ছে ‘ফেরারি’, চ্যাম্পিয়ন হওয়ার মতো দল।

 

 

 

ফাইনালে ‘ফেবারিট’ বলে কোনো শব্দ নেই

ফাইনালে আজ বসুন্ধরা কিংস ও সাইফ স্পোর্টিং লড়বে। ভালো লাগছে তিন বছরে ফাইনালে তিন নতুন দলের দেখা মিলবে। এক সময়ে মোহামেডান-আবাহনী ছাড়া ফাইনাল ভাবাই যেত না।

ফেডারেশন কাপ ফুটবলে মোহামেডান, আবাহনী, শেখ জামাল ও শেখ রাসেলের হয়ে ফাইনাল খেলার অভিজ্ঞতা রয়েছে আমার। চ্যাম্পিয়নের স্বাদও পেয়েছি চার দল থেকে। একটা কথা না বললেই নয়, ফাইনাল ফাইনালই। এর সঙ্গে অন্য ম্যাচের তুলনা চলে না। এখানে চাপ মুক্ত থাকাটাই বড় কথা। আমি যখন ফাইনাল খেলেছি পুরোপুরি চাপমুক্ত ছিলাম তা বলব না। কিন্তু ম্যাচের আগেই যদি চিন্তা ঢুকে যায় কী হবে আজ। চ্যাম্পিয়ন হতে পারব কিনা? তা হলেতো আর স্বাভাবিক খেলাটা খেলা যাবে না। চাপ মুক্তভাবে খেলতে পারলে সেরাটা দেওয়া সম্ভব। চাপমুক্ত থাকলেই জয় আসবে এমনটাও নয়। তবে যত চাপ ততই হারের ভয়টা থাকবে।

ফাইনালের আগের দিন কোচ আমাদের বলতেন, নির্ধারিত সময়ে জেতার চেষ্টা করবে। অতিরিক্ত ৩০ মিনিটে কি কৌশল আঁটতে হবে তাও ব্রিফ করতেন। বলতেন, ম্যাচটি স্বাভাবিকভাবে নাও। নইলে অতিরিক্ত সময়ে সুবিধা করতেই পারবে না। ফাইনালে আজ বসুন্ধরা কিংস ও সাইফ স্পোর্টিং লড়বে। ভালো লাগছে তিন বছরে ফাইনালে তিন নতুন দলের দেখা মিলবে। এক সময়ে মোহামেডান-আবাহনী ছাড়া ফাইনাল ভাবাই যেত না।

বসুন্ধরা ও সাইফ যোগ্য দল হিসেবেই ফাইনালে উঠেছে। তারপরও আমি কিংসকে এগিয়ে রাখব। এটা ঠিক ফাইনালে ফেবারিট বলে কোনো শব্দ নেই। আসলে কিংসকে এগিয়ে রাখার কারণ হচ্ছে তারা প্রতিটি পজিশনেই দারুণ শক্তিশালী। কোনো শূন্যতা নেই। অলআউট ফুটবল খেলছে তারা। সাইফেরও শক্তি কম নয়। তাদের রক্ষণভাগ ও মধ্যমাঠে কিছুটা দুর্বলতা রয়েছে। এ সুযোগ কাজে লাগাতে চাইবে কিংস। তারপরও বলব এটা ফাইনাল। জয়ের ব্যাপারে কেউ নিশ্চিত করে বলতে পারবে না। দুই দলের একটাই ভয় অতিরিক্ত চাপে না পড়ে যায়।

সর্বশেষ খবর