শিরোনাম
মঙ্গলবার, ১২ জানুয়ারি, ২০২১ ০০:০০ টা

যেখানে শুধুই বসুন্ধরা কিংস

মনোয়ার হক

যেখানে শুধুই বসুন্ধরা কিংস

১৯৪৮ সালের মার্চে প্রথমবারের মতো ঢাকা ফুটবল মাঠে গড়ায়। প্রথমে প্রথম বিভাগ, পরে প্রিমিয়ার। এরপর পেশাদার লিগের আগমন। ৭৩ বছরের ইতিহাসে তিন লিগে চ্যাম্পিয়ন দলের সংখ্যা কম নয়। ভিক্টোরিয়া, জিমখানা, বিজিপ্রেস, আজাদ, ওয়ান্ডারার্স, মোহামেডান, বিজেএমসি, আবাহনী, মুক্তিযোদ্ধা, ব্রাদার্স ইউনিয়ন, শেখ জামাল, শেখ রাসেল ও বসুন্ধরা কিংস শিরোপা জিতেছে। ঢাকার ক্লাবগুলো অংশ নেওয়ায় তখন ঢাকা ঘরোয়া ফুটবলই বলা হতো। পেশাদার লিগ শুরুর পর তা এখন ঢাকাকেন্দ্রিক নয়। পেশাদার চ্যাম্পিয়নকেই এখন বাংলাদেশ সেরা বলা হয়। বর্তমানে শুধু চট্টগ্রাম আবাহনী অংশ নিলেও এক সময় চট্টগ্রাম মোহামেডান, খুলনা আবাহনী, ফেনী সকার ও সিলেটের ক্লাব অংশ নিত।

৭৩ বছরের ইতিহাসে লিগ ছাড়াও বিভিন্ন ক্লাব টুর্নামেন্টেও শিরোপা জিতেছে। দেশের বাইরে ট্রফি জয়েরও রেকর্ড রয়েছে। দলীয় বা ব্যক্তিগত পর্যায়ে রেকর্ড একেবারে কম নয়। তবে সবকিছুকে পেছনে ফেলে বসুন্ধরা কিংস ঘরোয়া ফুটবলে যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে তা অবিশ্বাস্যই বলা যায়। ফুটবলে আগমনের পর মাত্র তিন বছরের মধ্যে ছয়টি শিরোপা জিতে নিয়েছে। ৭৩ বছরে যা অন্য ক্লাবের পক্ষে সম্ভব হয়নি। এখন যে অবস্থা তাতে মনে হচ্ছে শিরোপায় পিছু ছাড়ছে না কিংসের।

২০১৭ সালে চ্যাম্পিয়নশিপ লিগ দিয়ে শিরোপা শুরু বসুন্ধরার। দেশের সবচেয়ে মর্যাদাকর আসর পেশাদার লিগে এসেই চ্যাম্পিয়ন হয়ে ইতিহাস গড়ে। সেই সঙ্গে স্বাধীনতা কাপের ট্রফিও ঘরে উঠেছে। গত বছর লিগ বাতিল হলেও ট্রফি শূন্য থাকেনি তাদের। প্রথমবারের মতো ঠিকই ফেডারেশন কাপ জিতে নিয়েছে। শুধু কি তাই প্রথমবারের মতো নারী লিগে অংশ নিয়ে কোনো পয়েন্ট হারানো ছাড়াই চ্যাম্পিয়ন। প্রতিপক্ষদের জালে ১১৯ গোল। এখানেই থেমে থাকেনি কিংসের মেয়েরা। অধিনায়ক সাবিনা খাতুন এক লিগে আট হ্যাটট্রিকসহ সর্বোচ্চ ৩৫ গোল। গোলের সংখ্যাটা আহামরি না হলেও এক লিগে কারোর ৮ হ্যাটট্রিকের কৃতিত্ব তা কি চাট্টিখানি কথা।

এবার মৌসুমেই প্রথম ট্রফি ফেডারেশন কাপে সব ম্যাচ জিতে চ্যাম্পিয়ন। টানা তিন ফাইনাল খেলে টানা দুবার শিরোপা জয়। শিরোপা যেন নেশায় পরিণত হয়েছে কিংসের ফুটবলারদের। সামনে তো আরও আয়োজন পড়ে আছে। এক্ষেত্রে সংখ্যাটা বাড়ার সম্ভাবনাই বেশি।

ফুটবল ইতিহাসে শুরু থেকেই অনেকে শক্তিশালী দল গড়েছে। কিন্তু বসুন্ধরার এ নজিরবিহীন সাফল্য কেন? অনেকে বলতে পারেন যেখানে জাতীয় দলের ৭/৮ জন ফুটবলার। সঙ্গে সেরা সেরা বিদেশি। সেখানেতো সাফল্য আসবেই। এমনতো আরও ক্লাবের বেলায় হয়েছে। সেখানে শুধু বসুন্ধরা কিংসই শিরোপা উৎসবে ভাসছে, এর পেছনে রহস্যটা কি? বসুন্ধরা কিংসের সভাপতি ইমরুল হাসান। সংগঠক হিসেবে তার আবির্ভাব ঘটে এই ক্লাব থেকেই। ক্যারিশমা ও নেতৃত্বের গুণে ইমরুল

এখন দেশের ক্রীড়াঙ্গনে পরিচিত ও জনপ্রিয় মুখ। যার প্রমাণ প্রথমবার অংশ নিয়েই বাফুফের নির্বাচনে সর্বোচ্চ ভোটে সহ-সভাপতি পদে জিতে।

ইমরুল বলেন, ‘এমন সাফল্যে আমরা অভিভূত। সাফল্যের জন্য সবার আগে দরকার শৃঙ্খলা। বসুন্ধরা কিংস প্রতিটি ক্ষেত্রে তা মেনে চলে। পেশাদারিত্ব মেনেই টিম পরিচালিত হয়। কোচ, ফুটবলার সবার সমন্বয়ে আমরা টিম বসুন্ধরায় পরিণত হয়েছি। ভালো দল গড়লেই সাফল্য আসবে তা আমি বিশ্বাস করি না। এখানে সবার সহযোগিতা দরকার। কিংসের প্রতিটি পদে সবাই তা করছে। আরেকটা কথা না বললেই নয় হুট করে আমরা বিদেশি ফুটবলার আনার সিদ্ধান্ত নেই না। অনেক বায়োডাটা জমা পড়ে। তা দেখার জন্য বোর্ড রয়েছে। তারা সেখান থেকে শর্ট লিস্ট করে কোচের কাছে জমা দেন। এখানে পূর্ণ স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে কোচকে। তিনি লিস্ট থেকে প্রথমে অনুশীলনে পারফরম্যান্স দেখেন। যোগ্য হলেই বিদেশিদের চূড়ান্ত করা হয়।’

জাতীয় দলের সাবেক নন্দিত ফুটবলার  শেখ মো. আসলাম বলেন, ‘ফুটবলে কর্পোরেট হাউসের দল গড়াটা সময়ের দাবি নয়। এটা ফুটবলারদের স্বপ্নে পরিণত হয়েছিল। কারণ ফুটবলাররা চান তাদের রুটি-রুজিটা ঠিক রাখা। অর্থ না পেলে খেলবে কীভাবে? বসুন্ধরা কিংসই সেই স্বপ্ন পূরণ করেছে। মাত্র তিন বছরে ট্রফি আর ট্রফি। ৭৩ বছরে অন্যদের পক্ষে যা হয়নি মাত্র তিন বছরে ইতিহাসের পর ইতিহাস গড়ে দেখিয়ে দিয়েছে কিংস। আমি বলব ফুটবলারদের ভরসার এখন প্রধান ঠিকানাই বসুন্ধরা কিংস।’

সর্বশেষ খবর