বৃহস্পতিবার, ১৪ জানুয়ারি, ২০২১ ০০:০০ টা

ক্রিকেট স্বর্গে বাঘের গর্জন

মেজবাহ্-উল-হক

ক্রিকেট স্বর্গে বাঘের গর্জন

ইংল্যান্ড ক্রিকেটের ‘জন্মদাতা’ হলেও তাদের এক নম্বর খেলা কিন্তু ক্রিকেট নয়! সেখানে ফুটবল ও অ্যাথলেটিকসের পর ক্রিকেটের জনপ্রিয়তা। তবে একটি কাউন্টি এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম। সেটি হচ্ছে সমারসেট। যেখানে সাধারণ মানুষ ক্রিকেট ছাড়া আর কিছু বোঝে না। সে কারণে অনেকে সমারসেট কাউন্টিকে ‘ক্রিকেট স্বর্গ’ বলেও ডাকে!

২০১৯ বিশ্বকাপে এই ক্রিকেট স্বর্গেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের মুখোমুখি হয়েছিল বাংলাদেশ। ২০১১ বিশ্বকাপে ‘৫৮’ রানের লজ্জার পর ২০১৫ বিশ্বকাপে ক্যারিবীয়দের সঙ্গে দেখা হয়নি টাইগারদের। তাই ইংল্যান্ড বিশ্বকাপে উইন্ডিজের বিরুদ্ধে ম্যাচটি ছিল বাংলাদেশের জন্য প্রতিশোধের।

মহাগুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজের দেওয়া ৩২২ রানের এভারেস্টসম টার্গেটকে রীতিমতো তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিয়েছে বাংলাদেশ। ৭ উইকেটের বিশাল জয়, তা আবার ৫১ বল হাতে রেখে। সেদিন ‘ক্রিকেট স্বর্গ’ সমারসেট দেখেছে বাঘের গর্জন।

-ফ্ল্যাশব্যাকে যাওয়া যাক! কী ঘটেছিল সেই ম্যাচে!

অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা টস জিতে গেইল-লুইসদের প্রথমে ব্যাটিংয়ের আমন্ত্রণ জানান। রানের খাতা খোলার আগে ‘ভয়ংকর’ গেইলকে আটকে দিতে পারলেও লুইস, শাই হোপ ও হেটমায়াররা মিলে ৩২১ রান করেন। প্রথম ইনিংসের পর স্কোর বোর্ডে টার্গেট ৩২২ দেখেও মনোবল হারাননি বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা। কারণ প্রতিশোধের ম্যাচ বলে কথা!

আট বছর আগে বিশ্বকাপে লজ্জাজনকভাবে হারের ক্ষতটা যে ঠিকঠাক শুকায়নি। বরং উইন্ডিজের বিরুদ্ধে তা আত্মবিশ্বাসের জ্বালানি হিসেবে কাজ করে। বাইশগজে টাইগারদের অগ্নিমূর্তি অবয়ব দেখে যেন গ্যালারির দর্শকরাও বুঝে গেল ‘আজ কিছু হতে চলেছে’! তাই তো ৮ হাজার কিলোমিটার দূরের এক স্টেডিয়ামের গ্যালারিতে অনবরত ‘বাংলাদেশ’ ‘বাংলাদেশ’ গর্জন উঠল।

নিজেদের আত্মবিশ্বাস এবং দর্শকের এমন উদাত্ত সমর্থনকে পুঁজি করে দুই তারকা সাকিব আল হাসান ও লিটন কুমার দাস যেন উইন্ডিজের ৩২২ রানের টার্গেটকে স্রেফ ‘ডাল-ভাত’ বানিয়ে দিলেন। একটা সময় তো উইন্ডিজের পরীক্ষিত পেসাররা বল ফেলার জায়গাই পাচ্ছিলেন না। দুই পাশ থেকে একের পর এক বাউন্ডারি। এমন হাই স্কোরিং ম্যাচে বাংলাদেশ কিনা কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে পৌঁছে যায় ৫১ বল বাকি থাকতেই। বিশ্বকাপে টাইগারদের বিস্ময়কর এক জয়।

লিটন দাস খেলেন ৬৯ বলে হার না মানা ৯৪ রানের সাইক্লোন এক ইনিংস। ৮টি বাউন্ডারির সঙ্গে ৪টি বিশাল ছক্কা।

দলের প্রধান ভরসা সাকিব আল হাসান খেলেন ৯৯ বলে অপরাজিত ১২৪ রানের অসাধারণ এক ইনিংস। ওই ম্যাচে সাকিব এতটাই সাবধান ছিলেন যে, তিনি একবারের জন্যও ছক্কার আশায় বল শূন্যে ভাসাননি। তবে বাউন্ডারি হাঁকিয়েছেন ১৬টি।

১৩৩ রানে দলীয় তৃতীয় উইকেট পতনের পর সাকিব-লিটন অপরাজিত ১৮৯ রানের জুটি গড়ে দলের জয় নিশ্চিত করেই বাইশগজ ছাড়েন। এমন জয়ে বিশ্ব ক্রিকেটকে যেন নতুন এক বার্তা দেয় টাইগাররা। যদিও শেষ পর্যন্ত ২০১৯ বিশ্বকাপ মিশনটা আশানুরূপ হয়নি, তবে ক্যারিবীয়দের বিরুদ্ধে প্রতিশোধের ম্যাচে সেই ‘আগ্রাসী’ জয় স্বর্ণাক্ষরেই লেখা থাকবে বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে।

সর্বশেষ খবর