শনিবার, ২৩ জানুয়ারি, ২০২১ ০০:০০ টা

অদ্ভুত ক্রিকেটে উড়ন্ত জয়

মেজবাহ্-উল-হক

মিরপুরের আকাশ ততটা গুমট ছিল না। কুশায়া ভেদ করে মাঝে-মধ্যেই উঁকি দিচ্ছিল সূর্য। কিন্তু এমন দিনে ‘অদ্ভুত’ এক ক্রিকেট ম্যাচের প্রদর্শনী হলো ‘হোম অব ক্রিকেট’ মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে। গ্যালারিতে দর্শক নেই। স্টেডিয়ামের বাইরেও চিরচেনা সেই হইচই নেই। নিরাপত্তারক্ষীদেরও যেন কোনো কাজ নেই। কেবল ঠাঁয় দাঁড়িয়ে থাকা। ম্যাচের দিনে বড় ‘অচেনা দৃশ্য’ মিরপুরে। প্রাণ ছিল না মাঠের খেলাতেও।

টস জিতে প্রথমে ব্যাটিং নেয় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ঝিমিয়ে পড়ে স্কোর কার্ড। ছক্কা-চারের ফুলঝুড়ি তো দূরের কথা স্কোরকার্ডে রানই উঠছে না! আবার নিয়মিত বিরতিতে উইকেট পড়ছে

কিন্তু বোলারের সেলিব্রেশন নেই। এমন ‘ভুতুড়ে’ দিনে কিনা মাঠের আম্পায়ার গাজী সোহেলও মনোযোগ হারিয়ে ফেললেন। মুস্তাফিজের করা ৪০তম ওভারে ৫ বলেই ‘ওভার’ ঘোষণা করলেন। কী অদ্ভুত! এক বল আগেই ওভার ঘোষণার বিষয়টি লেগ আম্পায়ার সরফুদ্দৌলারও চোখে পড়ল না!

কেবল, ম্যাচ চলাকালীন অফিশিয়াল স্কোরাররা অসঙ্গতির বিষয়টি স্বীকার করে নিয়ে মিডিয়াকে বললেন, এটা একটা ‘ভুল’ ছিল। এ অদ্ভুত ক্রিকেটের দিনে এক ম্যাচ হাতে রেখে ক্যারিবীয়দের বিরুদ্ধে সিরিজ জয় নিশ্চিত করল বাংলাদেশ। প্রথমে ব্যাট করে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৪৩.৪ ওভারে টেনেটুনে ১৪৮ রান তোলে। বাংলাদেশ জিতে যায় কাঁটায় কাঁটায় ১০০ বল হাতে রেখেই। হাফ সেঞ্চুরি করেন অধিনায়ক তামিম ইকবাল। এ ম্যাচে লড়াইয়ের ‘ল’ও ছিল না! উত্তেজনা সেটা আবার কি! তবে ম্যাচের শুরুতে যে অবস্থা ছিল তাতে ১৪৮ রানের ‘টোটাল’ স্কোরকে বেশ স্বাস্থ্যবানই মনে হবে।

গতকাল শুরু থেকেই ক্যারিবীয়দের ইনিংস যেন ‘অপুষ্টিতে’ ভুগছিল। সেরা ৫ ব্যাটসম্যান আউট হয়ে যান দলীয় ৪১ রানে। প্রথম ম্যাচের মতো এ ম্যাচেও প্রথম ইনিংসেই জয়-পরাজয়ের মীমাংসা অনেক হয়ে যায়। ১৪৯ রানের টার্গেট আজকাল টি-২০তেই কিছু না, সেখানে ৫০ ওভারের ম্যাচে তো নিছক ‘দুধ-ভাত’ মাত্র! বাংলাদেশের ওপেনার লিটন দাস যেভাবে আগ্রাসী ব্যাটিং শুরু করেছিলেন তাতে মনে হচ্ছিল ১৫ ওভারেই খেলা শেষ হবে! কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে ২৪ বলে ২২ রান করে আউট হয়ে যাওয়ায় ইনিংসে ৩৩.২ ওভার পর্যন্ত খেলতে হয়েছে। অবশ্য এমন ম্যাচে জয়ের চেয়েও যেন বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের বড় দায়িত্ব ছিল উইকেটে যতটা সময় ক্ষেপণ করা যায়, আর কি! কারণ, ব্যাটসম্যানদের অনুশীলন তো প্রয়োজন!

তবে কাল দুর্দান্ত বোলিং করেছেন মুস্তাফিজুর রহমান। ৪৮টি ডেলিভারির মধ্যে ডট বল করেছেন ৩৯টি। সঙ্গে তিনটি মেডেন এবং দুই উইকেট। ৮-৩-১৫-২ যেকোনো পেসারের জন্য স্বপ্নের বোলিং ফিগার! তবে মুস্তাফিজের জন্য বড় খুশির খবর হচ্ছে আবারও সেই আগের মতো মুস্তাফিজের হাত থেকে বেড়িয়ে আসছে এক একটি ‘ডেঞ্জার ডেলিভারি’। নিজের খেয়াল খুশি মতো বল সুইং করছেন, স্লোয়ার দিচ্ছেন, কাটার দিয়ে ব্যাটসম্যানকে বোকা বানাচ্ছেন। এ মুস্তাফিজকে অনেক দিন মিস করেছে বাংলাদেশ।

রুবেল হোসেন এ ম্যাচেও কোনো উইকেট পাননি। তবে একটু বেশি রান দিলেও একটি উইকেট পেয়েছেন হাসান মাহমুদ। এ ম্যাচেও ছিল স্পিনারদের ক্যারিশমা। মেহেদী হাসান মিরাজ ২৫ রানে নিয়েছেন ৪ উইকেট। ওয়ানডেতে ক্যারিয়ারসেরা বোলিং করে ম্যাচসেরার পুরস্কারও জিতলেন। এর আগে মিরাজের ক্যারিয়ারসেরা ছিল ২৯ রানে ৪ উইকেট। সেটাও এই উইন্ডিজের বিরুদ্ধেই। এ ম্যাচে অলরাউন্ড পারফম করেছেন সাকিব আল হাসান। যদিও তুলনামূলকভাবে একটু বেশি রান দিয়েছেন। ১০ ওভার বোলিং করে নিয়েছেন ২ উইকেট। তবে বল হাতে খেলেছেন অপরাজিত ৪৩ রানের ইনিংস।

বাংলাদেশের ৭ উইকেটের জয়ের দিনে নিশ্চিত হয়ে গেল ওয়ানডে সিরিজ। ক্যারিবীয়দের বিরুদ্ধে টানা তৃতীয় সিরিজ জয়। সঙ্গে টানা সাত ওয়ানডে জয়ের রেকর্ড তো হলোই!

 

ওয়েস্ট ইন্ডিজ : ১৪৮/১০, ৪৩.৪ ওভার (সুনীল ৬, ওটলি ২৪, জশুয়া ৫, ম্যাকার্থি ৩, জেসন ১১, কাইল ০, বোনার ২০, পাওয়েল ৪১, রেইফার ২, আলজারি ১৭, আকিল ১২;

মেহেদি ৪/২৫, মুস্তাফিজ ২/১৫, সাকিব ২/৩০, হাসান ১/৫৪)।

বাংলাদেশ : ১৪৯/৩, ৩৩.২ ওভার (লিটন ২২, তামিম ৫০, নাজমুল ১৭, সাকিব ৪৩*, মুশফিক ৯*; রেইফার ১/১৮, জেসন ১/২৯, আকিল ১/৪৫)।

ফল : বাংলাদেশ ৭ উইকেটে জয়ী।

ম্যাচসেরা : মেহেদি হাসান (বাংলাদেশ)।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর