শুক্রবার, ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ ০০:০০ টা

নির্বিষ স্পিন, পেসে আলো

‘আমার বোলিংয়ে যেহেতু গতি কম, তাই লাইন-লেংথে দিকে বেশি নজর রাখি। আমি খুব ভালো করে জানি, আন্তর্জাতিক পর্যায়ে টিকে থাকতে হলে লাইন এবং লেন্থে ভরসা করা ছাড়া বিকল্প কিছু নেই।’

মেজবাহ্-উল-হক

নির্বিষ স্পিন, পেসে আলো

অস্ট্রেলিয়ার সাবেক তারকা স্পিন-অলরাউন্ডার ব্রাড হগের ইউটিউব চ্যানেল ‘হগ’স ব্লগে নিয়মিত ক্রিকেট নিয়ে আড্ডা চলে। সাম্প্রতিক ক্রিকেট নিয়ে বিভিন্ন আঙ্গিকে চলে ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ। কালকের পর্বে একজন ভারতীয় দর্শক ব্রাড হগকে প্রশ্ন করলেন, আচ্ছা- তিনটি ট্রিকস বলেন, যে তিনটি অ্যাপ্লাই করলে ঘরের মাঠে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় টেস্টে জিতে যাবে ভারত!

হগ বললেন, প্রথমটি হচ্ছে- অধিনায়ক বিরাট কোহলিকে টস জিততে হবে!

দ্বিতীয়টি হচ্ছে- ইংলিশ ব্যাটসম্যানদের ওপর ভারতের স্পিনারদের প্রবল চাপ প্রয়োগ করতে হবে! 

তৃতীয়টি হচ্ছে- রোহিত শর্মা ও আজিঙ্কা রাহানেকে রানে ফিরতে হবে!

-ক্রিকেটের নিখুঁত এই বিশ্লেষক মাত্র তিন বাক্যে উপমহাদেশের মাটিতে জয়ের ছক এঁকে দিয়েছেন। হয়তো ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের জয়ের ব্যাপারে প্রশ্ন করলেও একই উত্তর আসত! সেক্ষেত্রে হয়তো ওপেনার রোহিতের জায়গায় তামিম এবং রাহানের জায়গায় মোহাম্মদ মিথুনকে বসিয়ে দিতেন।

ঢাকা টেস্টের প্রথম দিনের ছবিতে দেখা যাচ্ছে, প্রথম দুই ট্রিকসের আশপাশ দিয়েও যেতে পারেনি টাইগাররা। ক্যাপ্টেন মুমিনুল হক টস জেতেননি, অবশ্য এখানে কোনো কিছু করার হাতও কারও নেই। কিন্তু যে বিষয়টা, দাপট দেখানোর কথা ছিল সেই স্পিনেই হতাশার ছবি। আর তৃতীয় ট্রিকসের সময় এখনো আসেনি। পেস বোলিংয়ে ঠিকই আলো দেখিয়েছেন আবু জায়েদ রাহী। সে কারণেই প্রথম দিনটি সমানে সমান।

উপমহাদেশে টেস্ট ম্যাচে টস সব সময়ই বড় ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়ায়। প্রথম দুই দিন ব্যাট করার জন্য উইকেট যতটা ভালো থাকে শেষের তিন দিন দেখা যায় উল্টো চিত্র।

মিরপুরে টস জিতে সেই সুযোগটাই কাজে লাগিয়েছে উইন্ডিজ। প্রথম দিন শেষে ক্যারিবীয়রা ৫ উইকেট হারিয়ে করেছে ২২৩ রান। আবারও টাইগারদের সামনে দেয়াল হয়ে দাঁড়িয়েছেন এনক্রুমা বোনার। প্রথম টেস্টের শেষ ইনিংসে এই বোনারই কাইল মেয়ার্সের সঙ্গে বিশাল জুটি গড়ে বাংলাদেশকে হতাশার সাগরে ডুবিয়েছেন। টানা দ্বিতীয় ম্যাচে হাফ সেঞ্চুরি তুলে নিয়ে এখনো তিনি উইকেটে রয়েছেন।

ক্যাপ্টেন মুমিনুল হক বলেছিলেন, চট্টগ্রাম টেস্টের ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে এই টেস্টে নিখুঁত খেলার চেষ্টা করবেন। ইঙ্গিত দিয়েছিলেন এক পেসার খেলানোর সিদ্ধান্ত থেকে বেরিয়ে এসে ঢাকা টেস্টে দুই কিংবা তিনজন পেসার খেলাবেন। কিন্তু গতকাল দেখা যায়, ঘুরেফিরে সেই একই চিত্র। প্রথম টেস্টের দল থেকে পরিবর্তন করা হলো তিনজন। কিন্তু দলে পেসার সেই একজনই।

তবে মুস্তাফিজুর রহমানের জায়গায় সুযোগ পাওয়া আবু জায়েদ রাহী প্রথম দিনেই দৃঢ়তা দেখিয়েছেন। দুটি উইকেটও পেয়েছেন। বোলিংয়েও দেখা গেছে বেশ ভেরিয়েশন। অনেকবার ইনসুইং করে ক্যারিবীয়দের বিভ্রান্তও করেছেন।

পার্টটাইম পেসার হিসেবে সাফল্য পেয়েছেন সৌম্য সরকারও। গতকাল ক্যারিবীয় অধিনায়ক ক্রেইগ ব্রাথওয়েটের মহামূল্যবান উইকেটটি তুলে নিয়েছেন।

কিন্তু স্পিনে একমাত্র তাইজুল ছাড়া আর বাকি দুজন (মেহেদী মিরাজ ও নাঈম হাসান) কোনো উইকেট পাননি। সেই চট্টগ্রামের মতো ঢাকাতেও টাইগারদের নির্বিষ স্পিন। মিরাজ-নাঈমরা একের পর এক শট বল করেছেন। স্পিনে শট বল করা মানেই তো ব্যাটসম্যানকে রান করার জন্য আমন্ত্রণ জানানো। ঢাকা টেস্টের প্রথম দিনে এই কাজটিই করেছেন বাংলাদেশের স্পিনাররা।

চট্টগ্রামে হারের পর ঢাকায় ভুল শোধরানোর সুযোগ পেয়েছে টাইগাররা। কিন্তু সেই ম্যাচেও কেন মাত্র একজন পেসার? প্রথম দিনের ছবি দেখে এই প্রশ্ন ওঠা খুবই স্বাভাবিক। কেননা গতকাল ক্যারিবীয় ব্যাটসম্যানরা যে একটুখানি বিপদে বিভ্রান্ত হয়েছিলেন- তা আবু জায়েদ রাহীর বলেই।

দিন শেষে টাইগার পেসার বলেন, ‘আমার বোলিংয়ে যেহেতু গতি কম, তাই লাইন-লেংথের দিকে বেশি নজর রাখি। আমি খুব ভালো করে জানি, আন্তর্জাতিক পর্যায়ে টিকে থাকতে হলে লাইন এবং লেন্থে ভরসা করা ছাড়া বিকল্প কিছু নেই।’

রাহীর সঙ্গে আরেকজন পেসার থাকলে দিনের চিত্রটা অন্যরকম হতে পারত- এমন আফসোস এখন হতেই পারে!

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর