শনিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ ০০:০০ টা

ঘরের মাঠে পরবাসী টাইগাররা

দুই দিনে ১৪ উইকেট পতন, পেসারদের শিকার ৯টি

মেজবাহ্-উল-হক

ঘরের মাঠে পরবাসী টাইগাররা

এনক্রুমা বোনার প্রথম দিন শেষে বলেছিলেন, ওয়েস্ট ইন্ডিজের টার্গেট ৩৫০ রান। ক্রিকেটীয় ভাষায় ক্যারিবীয়দের স্বীকৃত শেষ জুটিতে বোনারের সঙ্গে ছিলেন জশুয়া সিলভা। যেকোনো একজন ব্যাটসম্যান আউট হলেই শেষ!

সে কারণেই আবু জায়েদ রাহী বেশ আস্থার সঙ্গেই বলেছিলেন, ক্যারিবীয়দের ২৭০-৩০০ রানের মধ্যেই আটকাতে চান।

ছক অনুযায়ী দিনের শুরুতেই পরীক্ষিত বোনারের উইকেট তুলে নেন মেহেদী হাসান মিরাজ। আগের দিনের ৭৪ রানের সঙ্গে গতকাল দলীয় সংগ্রহে আর মাত্র ১৪ রান যোগ করার সুযোগ পেয়েছেন ক্যারিবীয় তারকা।

তখন ক্রিকেটামোদীদের মনে হওয়া খুবই স্বাভাবিক, এরপর পা-ুলিপিটা হয়তো টাইগাররা নিজেদের মতো করেই লিখবে! কিন্তু নাহ! পেসার আলজারি জোসেফকে নিয়েই জশুয়া সিলভা দ্বিতীয় দিনের জন্য নতুন এক চিত্রনাট্য তৈরি করলেন। যেখানে কেন্দ্রীয় চরিত্রে তারাই দুজন!

আট নম্বরে ব্যাট হাতে নামা পেসার জোসেফ খেললেন ৮২ রানের মহামূল্যবান ইনিংস। আর সিলভার ব্যাট থেকে আসে ৯২ রান। সাত ও আট নম্বর ব্যাটসম্যানের লড়াইয়ে নিজেদের টার্গেট পার করে ওয়েস্ট ইন্ডিজ গিয়ে থামলেন ৪০৯ রানে।

আবার ব্যাটিংয়ে নেমে শুরু থেকেই নড়েবড়ে বাংলাদেশ দল। মাত্র ৭১ রানেই পড়ে যায় ৪ উইকেট। সাদমান ইসলামের জায়গায় ইনিংস ওপেন করতে নামা সৌম্য সরকার রানের খাতাই খুলতে পারলেন না। টেস্টের প্রাথমিক দলে না থাকার পরও যে সুযোগ পেয়েছিলেন সৌম্য তা কাজে লাগাতে ব্যর্থ হলেন। আরেক পরীক্ষিত ওপেনার তামিম ইকবাল তবু টেস্ট ম্যাচে ওয়ানডে ম্যাজাজ প্রদর্শন করে ৫২ বলে খেললেন ৪৪ রানের ইনিংস। দলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জায়গা ওয়ানডে ডাউনে ব্যাট হাতে নেমে আবারও ব্যর্থ নাজমুল হোসেন শান্ত। দুই অঙ্কের কোটাতেই পৌঁছাতে পারলেন না। ক্যাপ্টেন মুমিনুল হক দারুণ শুরুর পরও থামলেন মাত্র ২১ রানেই। এরপর শুরু হয় মুশফিকুর রহিম ও মোহাম্মদ মিথুনের লড়াই।

শেষ বিকালের ভয়ংকর এক ঘণ্টা তারা খুবই সতর্কতার সঙ্গে খেলেছেন। অভিজ্ঞ দুই ব্যাটসম্যানই ৬১টি করে বল মোকাবিলা করেছেন। ২৭ রানে অপরাজিত রয়েছেন মুশফিকুর রহিম। ৯ রানে ব্যাট করছেন মিথুন।

দিন শেষে বাংলাদেশের স্কোর ১০৫/৪। এখনো ওয়েস্ট ইন্ডিজের চেয়ে ৩০৪ রানে পিছিয়ে টাইগাররা। ফলোঅন এড়াতে দরকার আরও ১০৫ রান!

ঢাকা টেস্টের প্রথম দিনটা সমানে সমান হলেও দ্বিতীয় দিনটা নিজের করে নিয়েছে ক্যারিবীয়রা। ওয়েস্ট ইন্ডিজের লোয়ার অর্ডার ব্যাটসম্যানরা যেমন বুক চিতিয়ে লড়াই করে তাদের সামর্থ্য বুঝিয়ে দিয়েছেন, বোলাররাও শুরুতেই বাংলাদেশের ইনিংসে আঘাত হেনে স্বাগতিকের চাপে ফেলে দিয়েছেন।

অন্যদিকে বাংলাদেশের বোলিং যেমন ছিল ছন্নছাড়া, ব্যাটিংও যাচ্ছেতাই। তবে এমন বিমর্ষ দিনেও ৪টি করে উইকেট নিয়ে বেশ নজর কেড়েছেন পেসার আবু জায়েদ রাহী ও স্পিনার তাইজুল ইসলাম। সব মিলে প্রথম ইনিংসে ৪৬.২ ওভার বোলিং করেছেন তাইজুল।

বাকি দুই স্পিনার মেহেদী হাসান মিরাজ ও নাঈম হাসানও দীর্ঘ সময় বোলিং করেছেন। কিন্তু ক্যারিবীয় লোয়ার অর্ডার ব্যাটসম্যানদের ওপর প্রভাব বিস্তার করতে পারেননি বললেই চলে। টাইগারদের নখদন্তহীন বোলিংয়ের কারণেই বড় সংগ্রহ করে উইন্ডিজ।

একটা মজার বিষয় হচ্ছে, ঘরের মাঠে বাংলাদেশ নিজের মতো করে উইকেট তৈরি করে দলে মাত্র এক পেসার রাখে টিম ম্যানেজমেন্ট। পেছনে যুক্তি ছিল- এটা সম্পূর্ণ স্পিন ট্র্যাক। সেই স্পিন ট্র্যাকে কীভাবে প্রথম দুই দিনে পতন ঘটা ১৪ উইকেটের মধ্যে ৯টি নিলেন পেসাররা!

গতকাল মিডিয়ার সামনে এসে তামিম ইকবাল উইকেট সম্পর্কে বলেন, ‘আমরা যে পরিকল্পনা করেছি, এই উইকেট তেমন নয়। এটা বোঝার জন্য রকেট সায়েন্স পড়ার দরকার নেই। হোম দল যখন তিনজন স্পিনার নিয়ে খেলে তখন উইকেটে আরও বেশি স্পিন আশা করে। অপ্রত্যাশিতভাবে এটা স্পিন উইকেট হয়নি, সেটা যে কারণেই হোক না কেন!’

তামিম ইকবালের কথায় পরিষ্কার হয়ে যায়, ভুল তথ্যের কারণে এখন ঘরের মাঠেই পরবাসী টাইগাররা!

সর্বশেষ খবর