রবিবার, ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ ০০:০০ টা

শেষ বিকেলে আশার আলো

‘টেস্টে অনেক কিছুই হতে পারে। আমরা কেউ তো স্বপ্নেও ভাবিনি চট্টগ্রাম টেস্টে হারব। ভাবনায় ছিল হয় জিতব, নয়তো ড্র হবে। কিন্তু ওরা জিতে গেল। তাই এখানে আমাদের বিশ্বাস হারানোর কিছু নেই। যদিও কঠিন, কিন্তু সকালের সেশনে দ্রুত ওদের অলআউট করতে পারলে ফল অন্যরকমও হতে পারে।’

মেজবাহ্-উল-হক

শেষ বিকেলে আশার আলো

ছবি : রোহেত রাজীব

যে দলের প্রথম ছয় ব্যাটসম্যান আত্মাহুতি দিয়ে বাইশগজ ছাড়েন সে দলের স্কোর বোর্ডে আর কতই বা রান উঠবে?

তারপরও প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশ ২৯৬ রান করেছে সাত নম্বর জুটিতে লিটন দাস ও মেহেদী হাসান মিরাজের দৃঢ়তায়। তাদের ১২৬ রানের জুটিতেই ফলোঅন এড়ায় বাংলাদেশ।

লিটন দাস খেলেছেন ৭১ রানের দারুণ এক ইনিংস। মিরাজের ব্যাট থেকে এসেছে মহামূল্যবান ৫৭ রান। চট্টগ্রাম টেস্টে প্রথম ইনিংসে যে বাংলাদেশের স্কোর ৪০০ পার হয়েছিল সেখানেও দাপট ছিল এই জুটির। লিটন খেলেছিলেন ৬৯ রানের ইনিংস, মিরাজ তার আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি তুলে নিয়েছিলেন। সাত ও আটে নামা দুই ব্যাটসম্যান আবারও টাইগারদের বিপদ থেকে রক্ষা করলেন।

যদিও এখনো বিপদ কাটেনি। কারণ ঢাকা টেস্টের ফল কোন দিকে যাবে তা -দোদুল্যমান। গতকাল দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে ৩ উইকেটে ৪১ রান করেছে সফরকারীরা। ওয়েস্ট ইন্ডিজের লিড ১৫৪ রান। হাতে রয়েছে আরও ৭ উইকেট। আজকের সকালের সেশনই বলে দেবে ঢাকা টেস্টের স্টিয়ারিং কারা ধরতে যাচ্ছেন।

উইকেটে কোনো জু জু নেই, ক্যারিবীয়দের বোলিংও আহামরি কিছু হয়নি বলে আগের দিনই বলেছেন ওপেনার তামিম ইকবাল। এমনকি দেশসেরা ওপেনার সরাসরি বলেছেন, প্রথম দিন চার ব্যাটসম্যান আউট হয়েছেন নিজেদের ভুলে।

গতকাল ঠিক একই ফাঁদে পা দিলেন দুই অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান মুশফিকুর রহিম ও মোহাম্মদ মিথুন। দলের শেষ ভরসা এই দুই অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যানের আত্মাহুতি দলকে আরও বিপদে ফেলে দেয়।

গতকাল এই জুটিকে নিয়েই আশায় বুক বেঁধেছিল বাংলাদেশ। ক্যারিবীয়রাও বুঝতে পেরেছিল ভালো কিছু করতে হলে সকালের সেশনেই দেখাতে হবে চমক। সেটা দেখালেনও ক্যারিবীয় স্পিনার রাকিম কর্নওয়াল।

মোহাম্মদ মিথুনের জন্য শর্ট মিড উইকেটে মেয়ার্সকে ফিল্ডিংয়ে আনলেন। তারপরও কেন যে ফ্লিক খেলে সেই মেয়ার্সের হাতে ক্যাচ দিলেন মিথুন- এর ব্যাখ্যা একমাত্র তিনিই জানেন!

মিথুন আউট হওয়ার পর তার দায়িত্বটা আরও যেন বেড়ে যায় মুশফিকুর রহিমের। ‘মিস্টার ডিপেন্ডেবল’ বেশ আস্থার সঙ্গে হাফসেঞ্চুরিও পূরণ করলেন। কিন্তু এরপরই এলোমেলো খেলতে থাকেন। কাঁটায় কাঁটায় ৫০ রানে লেগ-বিফোর হতে পারতেন কর্নওয়ালের বলে। কিন্তু সেবার আম্পায়ার্স কলের বদৌলতে রক্ষা। ৫৪ রানের মাথায় অযথাই রিভার্স সুইপ খেলতে গিয়ে আউট।

দলের বিপদের সময় কেউ কি এমন ঝুঁকিপূর্ণ শট খেলে? মিস্টার ডিপেন্ডেবল যেন নিজের ক্যারিশম্যাটিক শট ‘রিভার্স সুইপ’ দেখাতে গিয়ে বিপদকে আমন্ত্রণ জানালেন।

১৫৫ রানে ছয় উইকেট হারানোর পর ধ্বংসস্তূপ থেকে নতুন করে লড়াই শুরু করেন লিটন-মেহেদী। তাদের লড়াইয়েই শেষ পর্যন্ত ফলোঅনের লজ্জা থেকে রক্ষা। তবে শেষটা আরও ভালো হতে পারত যদি শেষের ১৫ রান করতেই ৪ উইকেট না হারাত বাংলাদেশ।

মিরপুরের উইকেটে ক্যারিবীয় স্পিনার-পেসাররা বাংলাদেশের উইকেট ভাগাভাগি করে নিয়েছেন। দুই পেসার শ্যানন গ্যাব্রিয়েল ও আলজারি জোসেফ মিলে ৫টি, বাকি ৫টি একাই নিয়েছেন স্পিনার কর্নওয়াল। ক্যারিবীয় স্পিনার দেখিয়ে দিলেন, সঠিক লাইনলেংথে বোলিং করলে উইকেট পাওয়া কঠিন নয়।

বাংলাদেশের স্পিনাররা যেখানে ‘পছন্দের উইকেট’ নয় বলে ব্যর্থতার মিছিলে যোগ দিয়েছেন সেখানে উল্টো পথে হাঁটলেন তিনি। নিজের ক্যারিশম্যাটিক বোলিংয়ের পেছনে রহস্য সম্পর্কে কর্নওয়াল বলেন, ‘পিচ অনেক স্লো। তবে এখানে চট্টগ্রামের চেয়ে বেশ বাউন্স। এই পিচে উইকেট পেতে হলে আপনাকে ধৈর্য ধরতে হবে। বল করতে হবে স্ট্রেইট। সঙ্গে স্পিন ও বাউন্সের ওপর ভরসা করতে হবে।’

তৃতীয় দিনের শেষ বিকালে দ্রুত ক্যারিবীয়দের ৩ উইকেট নিয়ে যেন আশার আলো জ্বালালেন স্পিনাররা। দিন শেষে মিরাজও ইতিবাচক ইঙ্গিতই দিলেন, ‘টেস্টে অনেক কিছুই হতে পারে। আমরা কেউ তো স্বপ্নেও ভাবিনি চট্টগ্রাম টেস্টে হারব। ভাবনায় ছিল হয় জিতব, নয়তো ড্র হবে। কিন্তু ওরা জিতে গেল। তাই এখানে আমাদের বিশ্বাস হারানোর কিছু নেই। যদিও কঠিন, কিন্তু সকালের সেশনে দ্রুত ওদের অলআউট করতে পারলে ফল অন্যরকমও হতে পারে।’

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর