মঙ্গলবার, ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ ০০:০০ টা
কেন টেস্টে ভালো করতে পারছেন না টাইগাররা

এটা একটা দুঃস্বপ্ন ছিল

জয়ের জন্য ক্রিকেটারদের মধ্যে একটা ক্ষুধার্ত ভাব থাকা দরকার সেটা দেখিনি। সবার ভিতর এমন এক মানসিকতা থাকবে- যে প্রতিপক্ষকে উড়িয়ে দেব। মনে এই আবেগ কাজ করতে হবে।

এটা একটা দুঃস্বপ্ন ছিল

জয়-পরাজয় অবশ্যই একটা বড় বিষয়। কিন্তু এটিই একমাত্র বিষয় নয়। সবার আগে জরুরি হচ্ছে- আমাদের ক্রিকেটের গ্রাফটা কী অবস্থায় আছে এখন! আমরা হারতেই পারি। কিন্তু দেখতে হবে সার্বিক খেলায় উন্নতি হচ্ছে কি না! গ্রাফটা সঠিক প্রক্রিয়ায় এগিয়ে যাচ্ছে কি না! সম্প্রতি বাংলাদেশ দলের খেলা দেখে মনে হয়েছে, টেস্টে ভালো অবস্থায় নেই আমরা।

আন্তর্জাতিক পর্যায়ে টেস্ট খেলার জন্য যে মানের খেলোয়াড় দরকার আমাদের দলে সে মানের খেলোয়াড়ের যথেষ্ট অভাব। আমরা সেভাবে খেলোয়াড় তৈরি করতে পারিনি। আর যারা আছে তারাও সেভাবে প্রস্তুত হওয়ার সুযোগ পায়নি। দীর্ঘ পরিসরে ম্যাচ না খেলে তো হঠাৎ করে টেস্ট খেলতে নামলেই ভালো ফল করা যায় না।

আমরা এখন ওয়ানডে ভালো খেলি। ওয়ানডের আদর্শ দল। কিন্তু টেস্ট ও টি-২০-তে সেভাবে নিজেদের মেলে ধরতে পারিনি। এর পেছনে- ঘরোয়া লিগের বড় একটা ইমপ্যাক্ট আছে।

আমরা ঘরোয়া লিগে ওয়ানডে ম্যাচ খেলি এবং সেটিকেই সবচেয়ে গুরুত্ব দিই।  এখানে তীব্র প্রতিযোগিতা হয় এবং কোচ, কর্মকর্তা, দর্শক, মিডিয়ার সবার আগ্রহ থাকে বলেই ওয়ানডেতে ভালো করি। যে কারণে চাপের মধ্যে পড়লে বুঝতে পারি ওই মুহূর্তে করণীয় কী! এই চাপটা আমরা ঘরোয়া লিগেই অনুভব করি বলে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে গিয়ে খুব কঠিন কিছু মনে হয় না ওয়ানডেকে।

ঘরোয়া লিগে ওয়ানডেকে যতটা গুরুত্ব দিই, দীর্ঘ পরিসরের ম্যাচকে ততটা গুরুত্ব দিই না। সবকিছু ক্রিকেট বোর্ড নিয়ন্ত্রণ করে, অন্যরা দলকে নিজের মনে করে না। কম্পিটিশনও হয় না।

দেখা যায়, জাতীয় দলের হয়ে যখন টেস্ট খেলতে নামি, তখন চাপে পড়লে সব গুলিয়ে ফেলি। অনভ্যস্ততার কারণে কী করতে হবে তা অনেকেই বুঝতে পারি না! কারণ আমরা ওই রকম চাপে আগে পড়িনি। তখন খুব বেশি অস্থির হয়ে যাই এবং সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগী। যে কারণে আজও আমরা টেস্টে সেভাবে এগোতে পারিনি।

তা ছাড়া জয়ের জন্য ক্রিকেটারদের মধ্যে একটা ক্ষুধার্ত ভাব থাকা দরকার- সেটা দেখিনি। অনেক ক্রিকেটারকে দেখে মনে হয়েছে তাদের মধ্যে যথেষ্ট আত্মবিশ্বাসের ঘাটতি আছে।

সবার ভিতর এমন এক মানসিকতা থাকবে- যে প্রতিপক্ষকে উড়িয়ে দেব। মনে এই আবেগ কাজ করতে হবে। সব সময় খেলতে হবে দল হিসেবে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে মিরাজকে দেখে আমার অনেক ভালো লেগেছে। সে দারুণ খেলেছে। ও লড়াকু মানসিকতাও দেখিয়েছে। অন্যদের মধ্যে সেটা লক্ষ্য করিনি।

ক্রিকেটে একজন ক্যাপ্টেনের বিশাল দায়িত্ব। যেটা হয়তো বাইরে থেকে বোঝা যায় না। সবাই কিন্তু ক্যাপ্টেন হতে পারে না। ক্যাপ্টেন হতে হলে আলাদা গুণ থাকতে হয়। যেটা মাশরাফির মধ্যে দেখেছি। মুমিনুলকে দেখে আমার মনে হয়েছে, সে ক্যাপ্টেন্সি খুব একটা এনজয় করছে না। আমি ওকে বিকেএসপিতে খুব কাছ থেকে দেখেছি। আমার মনে হয়েছে, ও আরও বড় মাপের ক্রিকেটার হবে। সে যোগ্যতা তার আছে। কিন্তু অধিনায়ক হবে এটা কখনই ভাবিনি। আমার মনে হয়, টেস্টে ক্যাপ্টেন হিসেবে সে বেস্ট চয়েস না। দলে ক্যাপ্টেন হওয়ার মতো আরও ভালো ক্রিকেটার আছে। হয়তো তাদের কাউকে কাউকে বোর্ড চায় না, কিংবা বোর্ড চাইলেও কেউ কেউ নিজেই অধিনায়ক হতে চায় না।

ঢাকা টেস্টে কেন একজন পেসার? চট্টগ্রাম টেস্টে হারার পর আমাদের মনে হয়েছিল ঢাকায় অন্তত দুজন পেসার দলে থাকবে। কিছু দিন আগে টি-২০ টুর্নামেন্টে ভালোই খেলেন। এখানে একজন বাঁহাতি ও একজন ডানহাতি স্পিনারে পাশাপাশি দুজন পেসার নিলে ভালো হতো। সেখানে স্পিনার বেশি নিতে গিয়ে এক পেসার খেলানোর সিদ্ধান্তটা ভুল মনে হয়েছে। তা ছাড়া আমাদের সব স্পিনারের মানও কিন্তু সেই পর্যায়ের নয়।

আমাদের শক্তির জায়গা হচ্ছে ব্যাটিং। ঢাকার উইকেট সাড়ে তিন দিন পর্যন্ত বেশ ভালো ছিল। তাই ওয়েস্ট ইন্ডিজের ৪০০ করার পরও আমাদের ৩৫০-৪০০ রান করার সুযোগ ছিল। কিন্তু আমরা পারিনি। উইকেটে সেট হয়ে গিয়েও আউট হয়েছি। টেস্টে সেট হয়ে গেলে দুই তিনজন ব্যাটসম্যানই যথেষ্ট। তাই যখন একজন ব্যাটসম্যান ৫০ কিংবা ৭০ রান করবেন তার দায়িত্ব আরও বেড়ে যায়। কিন্তু আমাদের হয়েছে উল্টো। বড় কোনো জুটিই হয়নি।

ক্রিকেটারদের একটা বিষয় মনে রাখতে হবে, টিম ম্যানেজমেন্ট বা ক্যাপ্টেনের নির্দেশনা মানতে গিয়ে নিজের খেলা ভুলে গেলে চলবে না। নিজের আসল দায়িত্ব নিজেকেই নিতে হবে। তার নিজের খেলা কোচ কিংবা ক্যাপ্টেন গিয়ে খেলে দিয়ে আসতে পারবে না। বাইশগজে গিয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিজেকেই নিতে হবে।

সাকিবের অভাবটা ছিল। কিন্তু আমরা অস্ট্রেলিয়া সফরে ভারতকে দেখেছি প্রথম টেস্টে ৩৬ রানে অলআউট হওয়ার পর তাদের সেরা খেলোয়াড় ক্যাপ্টেন বিরাট কোহলি দেশে ফিরে এসেছেন। সেই দলটাই সিরিজ জেতে দারুণভাবে। তাই সাকিব ইনজুরিতে পড়ার পর বাংলাদেশের ক্রিকেটারদেরও উজ্জীবিত হওয়ার কথা ছিল। কারণ সাকিবের অভাব পূরণের জন্যই বাড়তি দায়িত্ব নিতে হতো। সেটা কেউ পারেনি।

সব শেষে বলতে হয়, হার-জিত খেলারই অংশ। এটা নিয়ে খুব বেশি সমালোচনা করলে আরও খারাপ হতে পারে। ক্রিকেটারদের উচিত হবে এটা ভুলে যাওয়া। মনে করতে হবে, এটা একটা দুঃস্বপ্ন ছিল। তা না হলে আরও খারাপ হতে পারে ভবিষ্যতে।

এই অবস্থায় টিম ম্যানেজমেন্টের দায়িত্ব, ক্রিকেটারদের মানসিক অবস্থা কী তা জানার চেষ্টা করা! সে অনুযায়ী কৌশল প্রণয়ন করতে হবে। হতাশা নিয়ে বসে থাকলে চলবে না। সামনে তো এগিয়ে যেতেই হবে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর