বুধবার, ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ ০০:০০ টা

এমন জয় কিংসকেই মানায়

দুই লাতিনের হ্যাটট্রিক

এমন জয় কিংসকেই মানায়

বাঘকে খোঁচা মারলে যা হয়। বসুন্ধরা কিংস সেই হিংস্র রূপটাই যেন ধারণ করল। আগের ম্যাচে শেখ জামাল ধানমন্ডির বিপক্ষে ড্র করে পেশাদার লিগে প্রথম পয়েন্ট হারায়। এ ড্রয়ের ঝাল মেটাল আরামবাগের বিপক্ষে। জয়ে ফিরেছে তাও আবার রেকর্ড গড়ে। আর্জেন্টাইন রাউল ও ব্রাজিলিয়ান রবসনের হ্যাটট্রিকে ৬-১ গোলে তারা আরামবাগকে হারিয়েছে।

ম্যাচে কিংসই ছিল ফেবারিট। তাদের জয়টি ছিল স্বাভাবিক। তবে এই আরামবাগের রেকর্ড আছে পিছিয়ে থেকেও বড় দলকে কাঁদানো। ১৯৮৫ সালের ম্যাচের ছবি এখনো আমার চোখে ভাসে। আমি তখন মোহামেডানে। সুপার লিগে আরামবাগের বিপক্ষে সেই ম্যাচ। শুরুতেই আমরা গোল করে বসি। তাই সমর্থকরাও চাপে ছিল না। অপেক্ষায় ছিল কত ব্যবধানে আমরা জয়ী হয়ে মাঠ ছাড়ব।

অথচ সব এলোমেল করে দিল আরামবাগ। দ্বিতীয়ার্ধে তারা যেন ম্যাজিক প্রদর্শন করল। পিছিয়ে থেকেও ২-১ গোলে জিতল তারা। আর এ হারই আমাদের সর্বনাশ হয়ে গেল। শিরোপা আমাদের হাত থেকে ফসকে চলে গেল আবাহনীর ঘরে। সেই থেকে আরামবাগ পরিচিত হয়ে উঠে জায়ান্ট কিলার নামে। কথাটি তোলার যুক্তিও রয়েছে। গতকাল কুমিল্লায় ভাষা সৈনিক ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত স্টেডিয়মে ৩ মিনিটের মাথায় রাউলের গোলে কিংস এগিয়ে যায়। স্টেডিয়ামে নয় আমি টি-স্পোর্টসে খেলাটি দেখি। গোল করে বসুন্ধরা একতরফা খেলছিল। মনে হচ্ছিল বড় ব্যবধানেই জিতবে তারা। অথচ খেলার ধারা বিপরীতে আরামবাগ সমতা আনে। তখুনি কেন জানি ৮৫ সালের ছবিটা ভেসে উঠছিল।

আরামবাগের নিহাত জামানের গোলটির প্রশংসা করতে হয়। কিংসের শক্ত ডিফেন্স লাইনও এ সময়ে আলোচিত গোলরক্ষক আনিসুর রহমান জিকোকে বোকা বানিয়ে যেভাবে জালে বল পাঠান এক কথায় অসাধারণ। ভাবছিলাম যে আরামবাগ শুধুই হেরে চলেছে তারা কি অঘটন ঘটাবে? না কমিটমেন্ট ও জেদ যদি থাকে সেখানেই মনোবল ধরে রাখা যায়। বসুন্ধরা তা দেখাল। একটা কথা কি বসুন্ধরার জয়ের পেছনে বিদেশিদের অবদান বেশি। তবে কোচ অস্কারকে ধন্যবাদ দিতে হয় বিদেশি ও দেশিদের সমন্বয় করে খেলাচ্ছেন। কোথাও কোনো গ্যাপ দেখছি না। যা এখন পর্যন্ত অন্য বড় দলের মধ্যে খুঁজে পাচ্ছি না। বিদেশির কথা যখন উঠেছে তখন এখুনি বলা দরকার। এক সময় লিগে নালজেগার, এমেকা, ঝুকভ,পাকির আলী, প্রেমলাল, বিজন তাহেরিদের মতো মানসম্পন্ন ফুটবলাররা খেলে গেছেন।

পেশাদার লিগ শুরুর পর এমন বিদেশি আসতে থাকে যা দেখে সবাই বিরক্ত হয়ে উঠে। আমিও অনেক সাক্ষাৎকারে বলেছি অযথা এই মানের বিদেশি এনে অর্থ অপচয় করার অর্থ কি? বসুন্ধরাকে ধন্যবাদ জানাই তারা সেই রীতিটা ভেঙেছে। অভিষেকেই তারা উড়িয়ে আনে বিশ্বকাপ খেলা কলিনড্রেসকে। এমন বিদেশিই আনা দরকার যিনি দলকে সার্ভিস দেবেন এবং তাদের কাছ থেকে স্থানীয়রা শিক্ষা পাবে।

ইমরুল হাসান ভাইকে স্যালুট তার যোগ্য নেতৃত্বে বসুন্ধরা শুধু নিজ সাফল্য নয় দেশের ফুটবলে উন্নয়ন নিয়ে কাজ করছে। আর বসুন্ধরা গ্রুপকে আমি ফুটবলে অক্সিজেনই বলব। মৃত প্রায় ফুটবলকে এই প্রতিষ্ঠানটি জাগিয়ে রেখেছে। বসুন্ধরা কিংস তাদের নিজের দল। অন্য বড় দুই দল শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্র ও শেখ জামাল ধানমন্ডির সব দায়িত্ব তারা নিয়েছে। ফুটবলাররা খুঁজে পেয়েছে স্বস্তির ঠিকানা।

অনেকে আমার লেখা দেখে বলতে পারেন ম্যাচের বদলে অন্য প্রসঙ্গ কেন? আমি বলব এটাই আসল বক্তব্য। বসুন্ধরা গ্রুপ ফুটবলের দিকে নজর দেওয়াতে এ জনপ্রিয় খেলা ধ্বংসের হাত থেকে বেঁচে গেছে। কী করছে না তারা! বিশ্বমানের ক্রীড়া কমপ্লেক্সও তৈরি করছে। গতকাল রাউল ও রবিনহো হ্যাটট্রিক করেছেন। কখনো কি তারা নিজে গোল করার জন্য সুযোগ নষ্ট করেছেন? তারা সমন্বয় করে খেলেছেন। এখানেই বসুন্ধরার সঙ্গে অন্য দলের পার্থক্য।

ফুটবল লিগে এর আগেও জোড়া হ্যাটট্রিক হয়েছে। তবে এই প্রথম এক ম্যাচে দুই বিদেশির হ্যাটট্রিক দেখলাম।  আসলে এমন জয় বসুন্ধরাকেই মানায়। রাউল ও রবিনহো যে গোলগুলো করেছেন তা দেখে স্থানীয় খোলোয়াড়দের শেখার আছে। ফাঁকা নেটেও গোলের বদলে তারা বল উড়িয়ে মারছে। যা দেখে মনে হয় ক্রিকেটের ছক্কা।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর