রবিবার, ২১ মার্চ, ২০২১ ০০:০০ টা

নিউজিল্যান্ডে আরেক দুঃস্বপ্ন

নিউজিল্যান্ডের মাটিতে ‘প্রথম’ জয় পাওয়া হলো না। পণ্ড হয়ে গেল তামিমের জন্মদিনের পার্টিও। জয়ের আবহে গা ভাসিয়ে এমন শোচনীয় হার পুরো দলের জন্য ‘দুঃস্বপ্ন’ ছাড়া আর কিছু নয়!

মেজবাহ্-উল-হক

ঘুরেফিরে সেই একই চিত্র। আবারও ব্যাটিং ধস। যথারীতি সেই বিশাল ব্যবধানে হার। নিউজিল্যান্ডের মাটিতে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে আগের ১৩ ম্যাচের মতো গতকাল আরও একবার নিজেদের প্রিয় ফরম্যাটে প্রচণ্ড ধাক্কা খেলেন টাইগাররা।

তামিম ইকবাল এবার কিছু করে দেখানোর প্রত্যয় নিয়ে দেশ ছেড়েছিলেন। ক্যাপ্টেনের সঙ্গে সুর মিলিয়ে কোচ রাসেল ডমিঙ্গোও বলেছিলেন, এবার কিছু হতে চলেছে! কুইন্সটাউনের অপরূপ সৌন্দর্যের মাঝে টাইগারদের ‘সেলফি’ ‘ফটোসেশনে’র তোড়জোড় দেখে মনে হচ্ছিল, ডানেডিনেই বুঝি বহু কাক্সিক্ষত ‘প্রথম’ জয়ের দেখা পাচ্ছে বাংলাদেশ! কিন্তু, না! শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ দলের অবস্থা গ্রাম-বাংলার জনপ্রিয় সেই প্রবাদের মতো ‘যে লাউ সেই কদু’!

আবারও লজ্জা। আবারও ৮ উইকেটে পরাজয়।

এবার টাইগারদের দুঃখ ১৩১! যদিও নিউজিল্যান্ডের মাটিতে এমন অনেক দুঃখই আছে। এই কুইন্সটাউনে ২০০৭ সালে একবার ৯৩ রানে অলআউট হওয়ার লজ্জাও আছে। যদিও সেই বাংলাদেশ আর আজকের এই বাংলাদেশ দল এক নয়।

টাইগাররা এখন ওয়ানডেতে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত শক্তি হিসেবে দাবি করছে। পারফরম্যান্সে তা বুঝিয়েও দিচ্ছে।

এর আগের সিরিজের কথাই বলা যাক। ঘরের মাঠে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে টেস্টে হোয়াইটওয়াশ হলো টাইগাররা, সেই ওয়েস্ট ইন্ডিজকে কিন্তু একই সফরে ওয়ানডেতে ৩-০ ব্যবধানে হারিয়েছে বাংলাদেশ।

তামিম ইকবালের উজ্জীবিত সেই দলটাই নিউজিল্যান্ডে গিয়ে ডানেডিনে প্রথম ম্যাচে প্রচণ্ডভাবে ‘হোঁচট’ খেল।

গতকাল বাংলাদেশ ম্যাচ থেকে ছিটকে গেছে প্রথম ইনিংসেই। যেখানে খেলা হলো সেই কুইন্সটাউনের অপূর্ব সুন্দর মাঠ ইউনিভার্সি ওভাল হচ্ছে কিউইদের ব্যাটিং স্বর্গ। সেখানে ব্ল্যাক ক্যাপসদের দলীয় সর্বোচ্চ ৩৬০। তা ছাড়া ওই মাঠে গড় দলীয় স্কোর হচ্ছে ২৬১ রান। সেখানে কি আর ১৩১ রান করে প্রতিপক্ষকে চ্যালেঞ্জ জানানো যায়!

এরপর যা হওয়ার তাই হয়েছে। ৫০ ওভারের ম্যাচে ২১.২ ওভারেই শেষ। অবশ্য ওপেনার মার্টিন

গাপটিল যেভাবে শুরু করে দিয়েছিলেন, তার চার ৪টি বিশাল ছক্কা দেখে

মনে হচ্ছিল টি-১০ মনে করেই ম্যাচটি শেষ করেন কিনা!

অবশ্য এমন ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের ব্যাটিং ইনিংস নিয়ে আলোচনার কিছু নেই। টাইগারদের যা হারানোর তা প্রথম ইনিংসেই হারিয়েছে। শুরুটা হয়েছিল অধিনায়ক তামিম ইকবালের আউট দিয়ে। তারপর একের পর এক পড়তে থাকে উইকেট। সিনিয়র-জুনিয়র সবাই যেন স্রোতে গা ভাসিয়ে দিয়ে আউট হয়ে প্যাভিলিয়নে ফিরলেন। কিউই পেসারদের বাউন্সের সঙ্গে নিজেদের মানিয়েই নিতে পারলেন না তামিমরা।

বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের খেলা দেখে মনে হচ্ছিল, যেন বহুকাল আগে তারা ওয়ানডে খেলেছেন। ফরম্যাটটির সঙ্গে তাদের খুব একটা পরিচয় নেই। অথচ নিউজিল্যান্ডই কিন্তু ওয়ানডে খেলতে নেমেছে এক বছর পর। গত বিশ্বকাপের পর তারা সর্বসাকুল্যে ওয়ানডে খেলেছে মাত্র চারটি। এই ম্যাচে একসঙ্গে তাদের তিন ক্রিকেটারের অভিষেক হয়েছে। শুধু তাই নয়, এই সিরিজে নিউজিল্যান্ডের সেরা দুই ব্যাটসম্যান নেই। তাদের নিয়মিত অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসনের অনুপস্থিতিতে বাংলাদেশের সামনে দারুণ সুযোগ ছিল। সেখানে উল্টো ‘অসহায়’ আত্মসমর্পণ করলেন টাইগাররা!

বাংলাদেশের ইনিংসে প্রথম আঘাত হানেন পেসার ট্রেন্ট বোল্ড। এরপর তিনি আরও তিন উইকেট নিয়ে ম্যাচসেরাই হয়ে গেলেন। অন্য বোলাররাও দেখালেন তাদের আগ্রাসী চেহারা। কী চমৎকার সুইং। তবে টাইগাররা নাস্তানাবুদ হয়েছেন তাদের বাউন্সে।

এই ডানেডিনেই ২০০৮ সালে টেস্ট অভিষেক হয়েছিল তামিম ইকবালের। কাল ছিল টাইগার ক্যাপ্টেনের জন্মদিন। আর এমন বিশেষ দিনেই কিনা তামিমকে ড্রেসিংরুমে ফিরতে হলো অপয়া-১৩-তে আউট হয়ে। হয়তো তখনই বুঝেছিলেন দিনটি তার নয়। তারপর তো রীতিমতো নাস্তানাবুদ।

নিউজিল্যান্ডের মাটিতে ‘প্রথম’ জয় পাওয়া হলো না। পণ্ড হয়ে গেল তামিমের জন্মদিনের পার্টিও। জয়ের আবহে গা ভাসিয়ে এমন শোচনীয় হার পুরো দলের জন্য ‘দুঃস্বপ্ন’ ছাড়া আর কিছু নয়!

সর্বশেষ খবর