বুধবার, ২৪ মার্চ, ২০২১ ০০:০০ টা

কবে আসবে সেই ‘প্রথম’

►ফিল্ডিংয়ে ভুলের সমাহার ►নিউজিল্যান্ডের মাটিতে আবারও হার ►এক ম্যাচ আগেই সিরিজ হাতছাড়া

মেজবাহ্-উল-হক

কবে আসবে সেই ‘প্রথম’

দেশের ক্রিকেটাঙ্গনে চলছে যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা, সাকিব আল হাসান বনাম ক্রিকেট বোর্ডের একাংশ।এ লড়াই অনেকটা ক্রিকেট মাঠের মতোই। এক পক্ষ বাউন্সার দিচ্ছেন আরেক পক্ষ সর্বশক্তি দিয়ে ডিফেন্সের চেষ্টা করছেন, আবার নড়েচড়ে বল পেলেই উড়িয়ে মেরে ফেলে দিচ্ছেন গ্যালারিতে।

প্রিয় ক্রিকেট নিয়ে মাঠের বাইরের এমন বিদঘুটে লড়াই দেখতে কার ভালো লাগে!

মাঠের বাইরের এ অস্বস্তি পরিস্থিতি থেকে দৃষ্টি ফিরিয়ে ক্রিকেটামোদীদের মনে স্বস্তি এনে দেওয়ার দারুণ একটা উপলক্ষ পেয়েছিল বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। কিন্তু ক্রাইস্টচার্চে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে কাক্সিক্ষত জয়টা পেলে একদিকে যেমন সিরিজে ফিরত বাংলাদেশ অন্যদিকে ক্রিকেটাঙ্গনে বইত আনন্দের সুবাতাস। কিন্তু ফিল্ডিংয়ে ভুলের সমাহারে স্বপ্নভঙ্গ। নিউজিল্যান্ডের মাটিতে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে মিলল না প্রথম জয়ের দেখা।

কিন্তু দারুণ সুযোগ নষ্ট করে তামিমরা নিজেদের দোষেই হেরে গেল ৫ উইকেটে। সিরিজ হাতছাড়া। টানা দুই ম্যাচে ২-০-তে সিরিজ নিশ্চিত করল নিউজিল্যান্ড। এখন তো নিজেদের প্রিয় ফরম্যাটে হোয়াইটওয়াশ হওয়ার আশঙ্কায় বাংলাদেশ।

স্কোর কার্ড দেখলে মনে হবে নিউজিল্যান্ড সহজেই হারিয়েছে বাংলাদেশকে। কিন্তু পুরো ম্যাচ দেখে থাকলে মনে হবে টাইগাররা যেন জয়টা উপহার হিসেবেই দিয়েছে ব্ল্যাক ক্যাপসদের।

দারুণ ব্যাটিং, বোলিংও খারাপ হয়নি। সে ম্যাচটা কিনা হারতে হলো হযবরল ফিল্ডিংয়ের কারণে। হ্যাগলে ওভালে প্রথমে ব্যাট করে ২৭১ রান। ব্যাটিংয়ে নেতৃত্ব দিলেন অধিনায়ক তামিম ইকবাল নিজেই। ওয়ানডে ক্যারিয়ারে ৫০তম ফিফটি করে রেকর্ডবুকেও ঢুকে গেলেন ড্যাসিং ওপেনার। কথা রাখলেন মোহাম্মদ মিথুনও। তিনিও আরেকটি হাফ সেঞ্চুরি করেছেন।

বোলাররাও মাত্র ৫৩ রানে নিউজিল্যান্ডের প্রথম ৩ উইকেট ফেলে দিয়ে ম্যাচে স্বস্তির বাতাস বইয়ে দিলেন। এরপর ডেভন কনওয়ে ও টম লাথাম ১১৩ রানের জুটি গড়ায় বাংলাদেশের প্রথম জয়ের স্বপ্ন খানিকটা ফিকে হয়ে যায়। আবারও ত্রাণকর্তা হিসেবে এগিয়ে আসেন অধিনায়ক তামিম নিজেই। অসাধারণ এক থ্রোতে কনওয়েকে আউট করে বাংলাদেশকে ম্যাচে ফেরান।

এরপর সব শেষ! হ্যাগলে ওভালে ফিল্ডিংয়ে যে কান্ড ঘটল তা দেশের ক্রিকেটের ইতিহাসে হয়তো সবচেয়ে বাজে ফিল্ডিংয়ের নিদর্শন হয়ে থাকবে!

একের পর এক ঘটতে থাকে অবিশ্বাস্য সব ঘটনা। হঠাৎই বাংলাদেশের ফিল্ডারদের হাত যেন খুবই পিচ্ছিল হয়ে গেল। ক্রিকেটে যেখানে একটি ভুলই ম্যাচকে হাতছাড়া করে দেয় সেখানের একের পর এক ভুল করেই যেতে থাকলেন ফিল্ডাররা।

উইকেটের পেছনে মুশফিকুর রহিমের শিকারি গ্লাভস জিমি নিশামের ক্যাচটা লুফে নিতে পারল না। ক্যাচটা এতটাই সহজ ছিল যে মুশফিককে যেন জায়গা থেকে নড়তেও হয়নি। তাসকিনের করা বল নিশামের ব্যাটকে স্পর্শ করে চলে গিয়েছিল মিস্টার ডিপেন্ডেবলের কাছে। এ লোভনীয় ক্যাচটা ফেলে দিলেন মুশফিক। ক্যাচ মিস ‘পার্ট অব গেম’ হলেও এমন মিস যেন অনেকটা ‘অমার্জনীয় অপরাধ’!

এরপর মেহেদী টম লাথামের যে ক্যাচটি মিস করেন তা আরও সহজ ছিল। বোলিং করার পর উইকেটে দাঁড়িয়ে থেকেও ক্যাচটি নিতে পারলেন না। ৫৯ রানে নতুন জীবন পেয়ে কিউই অধিনায়ক সেঞ্চুরি করে বাংলাদেশকে ম্যাচ থেকেই ছিটকে দিলেন।

একে একে ক্যাচ মিসের খাতায় নাম লেখালেন মোহাম্মদ মিথুন ও মেহেদী হাসান মিরাজও। যদিও তাদের সুযোগ দুটি খুব কঠিন ছিল। কিন্তু বড় দলকে হারাতে হলে হাফ চান্সকেও ফুল চান্স বানিয়ে নিতে হবে।

যে তামিম দারুণ থ্রোতে আউট করে ফিল্ডিংয়ে নজির সৃষ্টি করলেন সেই তিনিও পরে দুটি রানআউটের সুযোগ নষ্ট করলেন। এ ছাড়া মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের ফিল্ডিং মিস ছিল খুবই দৃষ্টিকটু। হাত থেকে ফসকে গিয়ে বাউন্ডারি হয়ে যাচ্ছে। এমন ঘটনা একাধিকবার হয়েছে।

ক্রাইস্টচার্চে ফিল্ডিংয়ে ভুল করাটা যেন ভাইরাসের মতো সব ফিল্ডারকে গ্রাস করে। নিউজিল্যান্ডের মতো ক্রিকেট পরাশক্তির বিরুদ্ধে যেখানে একটি ছোট্ট ভুলই ম্যাচ হারার কারণ হতে পারে সেখানে ভুলের সমাহার ঘটিয়ে কি জয় আশা করা যায়?

এমন ভুলেভরা ফিল্ডিংয়ের ম্যাচে টাইগার ক্যাপ্টেনের কণ্ঠে তাই হতাশাই ঝরল। ম্যাচ শেষে তামিম বলেন, ‘ম্যাচটা জেতা উচিত ছিল। বোলাররা সুযোগ সৃষ্টি করেছে। আমরা সুযোগ লুফে নিতে পারিনি। অবশ্যই আমি হতাশ।’

এমন ম্যাচে হারের পর এখন একটাই প্রশ্ন- নিউজিল্যান্ডের মাটিতে কবে মিলবে সেই ‘প্রথম জয়ে’র দেখা?

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর