স্কোর বোর্ডে ১.৩ ওভার শেষে বাংলাদেশের রান বিনা উইকেটে ১২। টার্গেট ১৬ ওভারে ১৪৮ রান। নেপিয়ারের ম্যাকলিন পার্কে দ্বিতীয় টি-২০ ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের ছুড়ে দেওয়া টার্গেট পাহাড়সম নয়। তাই একটু দেখেশুনে খেলছিলেন দুই টাইগার ওপেনার নাঈম শেখ ও লিটন দাস। কিন্তু হঠাৎই দুই আম্পায়ার খেলা থামিয়ে নতুন টার্গেটের কথা জানান দুই ওপেনারকে। নতুন টার্গেট ১৬ ওভারে ১৭০! এক টার্গেটকে সামনে রেখে খেলা শুরুর পর নতুন টার্গেট পেয়ে বিস্ময়ে চোখ বড় হয়ে যায় লিটন ও নাঈমের। তাতেই বাংলাদেশের হারের বৃত্ত ভাঙাটা কঠিন হয়ে পড়ে। তারপরও সৌম্য সরকারের ধুন্ধুমার ব্যাটিংয়ে যা একটু লড়াই করেছে মাহমুদুল্লাহ বাহিনী। কিন্তু হারের বৃত্ত ভাঙতে পারেনি। বৃষ্টি আইনে (ডাক ওয়ার্থ লুইস মেথড) হেরে যায় ২৮ রানে। ১ এপ্রিল, বৃহস্পতিবার অকল্যান্ডের তৃতীয় ম্যাচ হাতে রেখেই সিরিজ নিশ্চিত করে নেয় নিউজিল্যান্ড। এ নিয়ে চলতি মৌসুমে টানা চারটি টি-২০ সিরিজ জিতেছে ব্ল্যাক ক্যাপসরা। এর আগে দলটি হারিয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ, পাকিস্তান ও অস্ট্রেলিয়াকে। বাংলাদেশ ওয়ানডে সিরিজে হোয়াইটওয়াশ হয়েছে নিউজিল্যান্ডে। এবার টি-২০ সিরিজেও হোয়াইটওয়াশের শঙ্কা দেখা দিল।
অন্য যে কোনো সময়ের তুলনায় ভালো প্রস্তুতি নিয়ে এবার নিউজিল্যান্ড সফরে যায় বাংলাদেশ। তাসমান পাড়ের দেশটিতে জয়ের স্বপ্ন নিয়ে দেশটিতে পা রাখে টাইগাররা। ওয়ানডে সিরিজে হোয়াইটওয়াশ হলেও টি-২০ অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ নতুন ইতিহাস রচনার প্রত্যাশা করেছিলেন। প্রথম টি-২০ ছিল একতরফা। গতকাল দ্বিতীয় টি-২০ ম্যাচে স্বাগতিকরা শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক ক্রিকেট খেলতে থাকে। স্বাগতিকদের ব্যাটিংয়ের মধ্যে বৃষ্টি হানা দেয় দুবার। প্রথমবার ২৫ মিনিট বন্ধ ছিল। দ্বিতীয়বার বন্ধ হয়ে যায় যখন নিউজিল্যান্ডের স্কোর ১৭.৫ ওভারে ৫ উইকেটে ১৭৩। দলটির পক্ষে সর্বোচ্চ ৫৮ রান করেন গ্লেন ফিলিপস। ৩১ বলের ইনিংসটিতে ছিল ৫টি চার ও ২ ছক্কা। টাইগার বোলারদের মধ্যে দুরন্ত বোলিং করেন তিন তরুণ নাসুম আহমেদ, শরীফুল ইসলাম ও মেহেদি হাসান। ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ম্যাচ খেলতে নামা বাঁ হাতি স্পিনার ৪ ওভারের স্পেলে কোনো উইকেট না পেলেও রান দেন মাত্র ২৫। শরীফুল অভিষেক ম্যাচে ৪ ওভারের ৫০ রান দিলেও গতকাল ছিলেন দুর্দান্ত। ৩ ওভারে মাত্র ১৬ রান দিয়ে তুলে নেন ডেভন কনওয়ের উইকেট। মেহেদি ২ উইকেট নেন। তাসকিন ও সাইফুদ্দিন ছিলেন খরুচে। বাংলাদেশ খেলতে নামে ১৬ ওভারে ১৪৮ রানের টার্গেটে। ১.৩ ওভারে বিনা উইকেটে ১২ রান তোলার পর নতুন টার্গেট দেয় টাইগারদের। কিন্তু সৌম্য ছাড়া বাকি আর কোনো ব্যাটসম্যান কিউই বোলারদের বিপক্ষে সাবলীল ছিলেন না। সেজন্য ৫ ওভারের পাওয়ার প্লেতে ১ উইকেটে ৩৭ রানের বেশি করতে পারেনি। নাঈম ৩৫ বলে ৩৮ রান করেন। তিন নম্বরে ব্যাট করে সৌম্য ৫১ রান করেন মাত্র ২৭ বলে। তাতে ৩টি ছক্কা ছাড়াও ছিল ৫টি চার। অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ ১২ বলে ৪ চারে ২১ রান করলেও ১৬ ওভারে ৭ উইকেটে ১৪২ রানের বেশি করতে পারেনি বাংলাদেশ।
বৃষ্টি আইনে (ডিএল মেথড) দুবার টার্গেট দেয়ায় ম্যাচ শেষে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন ম্যাচ রেফারি জেফ ক্রো। বিষয়টি নিউজিল্যান্ড থেকে নিশ্চিত করেছেন জালাল ইউনুস।স্কোর কার্ড
নিউজিল্যান্ড ইনিংস
রান বল ৪/৬
গাপটিল ক তাসকিন ব সাইফুদ্দিন ২১ ১৮ ২/১
ফিন অ্যালেন ক নাঈম ব তাসকিন ১৭ ১০ ২/১
কনওয়ে ক মিথুন ব শরিফুল ১৫ ৯ ২/০
ইয়াঙ স্ট্যাম্প লিটন ব মেহেদি ১৪ ১৭ ০/১
ফিলিপস অপরাজিত ৫৮ ৩১ ৫/২
মার্ক চ্যাপম্যান ক ব মেহেদি ৭ ৮ ১/০
মিচেল অপরাজিত ৩৪ ১৬ ৬/০
অতিরিক্ত : (নো ২, ও ২, বা ১, লে/বা ২) ৭
মোট : (৫ উইকেট, ১৭.৫ ওভার) ১৭৩
উইকেট পতন : ৩৬/১ (অ্যালেন, ৩.৬ ওভার), ৫৫/২ (গাপটিল, ৫.৬ ওভার), ৫৫/৩ (কনওয়ে, ৬.১ ওভার), ৯৪/৪ (ইয়াঙ, ১১.৪ ওভার), ১১১/৫ (চ্যাপম্যান, ১৩.৪ ওভার)।
বোলিং : নাসুম ৪-০-২৫-০-৬.২৫; সাইফুদ্দিন ৩-০-৩৫-১-১১.৬৭; তাসকিন ৩.৫-০-৪৯-১-১২.৭৮; শরিফুল ৩-০-১৬-১-৫.৩৩; মেহেদি ৪-০-৪৫-২-১১.২৫।
বাংলাদেশ ইনিংস
(টার্গেট : ডিএল মেথডে ১৬ ওভারে ১৭১)
রান বল ৪/৬
নাঈম ক গাপটিল ব ফিলিপস ৩৮ ৩৫ ৪/০
লিটন ক ফিলিপস ব বেনেট ৬ ৫ ১/০
সৌম্য ক মিলনে ব সাউদি ৫১ ২৭ ৫/৩
মাহমুদুল্লাহ ব মিলনে ২১ ১২ ৪/০
আফিফ ব মিলনে ২ ৪ ০/০
মিথুন ক কনওয়ে ব সাউদি ১ ২ ০/০
মেহেদি অপরাজিত ১২ ৬ ০/১
সাইফুদ্দিন ক সাউদি ব বেনেট ৩ ৬ ০/০
তাসকিন অপরাজিত ০ ০ ০/০
অতিরিক্ত : (নো ১, ও ৫, বা ১, লে/বা ১) ৮
মোট : (৭ উইকেট, ১৬ ওভার) ১৪২
উইকেট পতন : ১৩/১ (লিটন, ১.৬ ওভার), ৯৪/২ (সৌম্য, ১০.১ ওভার), ১১০/৩ (নাঈম, ১২.১ ওভার), ১২৩/৪ (মাহমুদুল্লাহ, ১৩.৩ ওভার), ১২৪/৫ (আফিফ, ১৩.৫ ওভার), ১২৬/৬ (মিথুন, ১৪.১ ওভার), ১৩৭/৭ (সাইফুদ্দিন, ১৫.৪ ওভার)।
বোলিং : সাউদি ৪-০-২১-২-৫.২৫; বেনেট ৩-০-৩১-২-১০.৩৩; মিলনে ৩-০-৩৪-২-১১.৩৩; সোধি ৩-০-৩৪-০-১১.৩৩; ফিলিপস ৩-০-২০-১-৬.৬৭।
ফল : নিউজিল্যান্ড ডিএল মেথডে ২৮ রানে জয়ী। ম্যাচসেরা : গ্লেন ফিলিপস।