স্মৃতিই হয়ে গিয়েছিলেন! কিন্তু জিদ এবং আগ্রহ যে নতুন জীবন দিতে পারে কাউকে, তার জ্বলন্ত প্রমাণ খাদের কিনারায় চলে যাওয়া ডান হাতি ফাস্ট বোলার তাসকিন আহমেদ। ২৬ বছর বয়স্ক ফাস্ট বোলার পাঁচ বছর পর জাতীয় দলে ফিরে আলো ছড়াচ্ছেন। পাল্লেকেলেতে আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের দ্বিতীয়টিতে গতকাল বল হাতে আগুন ঝরিয়েছেন। গতি, বাউন্স ও সুইংয়ে নাকাল করেছেন শ্রীলঙ্কান ব্যাটসম্যানদের। তাসকিনের আগুনে বোলিংয়ে ছিটকে পড়া টেস্টে ফিরেছে বাংলাদেশ। প্রথম টেস্টে নিজেকে মেলে ধরে তাসকিন টিম ম্যানেজমেন্টকে আস্থাশীল করেছিলেন। দ্বিতীয় টেস্টে এবার প্রমাণ দিয়েছেন সামর্থ্যরে। দ্বিতীয় দিন শেষে ৩২.৫-৭-১১৯-৩ স্পেলই বলে কতটা উজ্জ্বল ছিলেন তাসকিন।
স্পেলটি আরও বর্ণময় হতো, যদি না স্লিপে একাধিক ক্যাচ মিস হতো। তারপরও পাল্লেকেলের মরা উইকেটে তাসকিনের আগুনে বোলিংয়ের প্রশংসায় পঞ্চমুখ টিম লিডার খালেদ মাহমুদ, ‘দারুণ বোলিং করেছে তাসকিন। উইকেট স্লো, তারপরও সেখানে লঙ্কান ব্যাটসম্যানদের সমীহ আদায় করেছে।’ প্রথম দিন যে শ্রীলঙ্কার স্কোর ছিল ২৯১/১, গতকাল বৃষ্টিতে খেলা বন্ধ হওয়ার আগ পর্যন্ত স্কোর ছিল ৬ উইকেটে ৪৬৯। গতকাল খেলা হয়েছে ৬৫.৫ ওভার এবং স্কোর বোর্ডে রান যোগ হয়েছে ১৭৮। টেস্টের প্রথম দিন ছিলেন উইকেটশূন্য। গতকাল নতুন রূপে নিজেকে মেলে ধরেন ডান হাতি ফাস্ট বোলার। দুর্দান্ত বোলিং করে দিনটিকে নিজের করে নেন। দিন শেষে দিনটিকে তাসকিনের বলাই যায়। অবশ্য প্রতিপক্ষ দলের বাকি তিন উইকেটের একটি করে নেন অভিষিক্ত শরীফুল ইসলাম, বাঁহাতি স্পিনার তাইজুল ইসলাম ও অফ স্পিনার মেহেদী হাসান মিরাজ।
তিন উইকেটের একটি ছিল লঙ্কান অলরাউন্ডার অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুসের। তাসকিনের সুইংয়ে বেসামাল ম্যাথুস সাজঘরে ফেরেন মাত্র ৫ রানে। অথচ শূন্য রানেই সাজঘরে ফিরতে পারতেন। কিন্তু তাসকিন রিভিউ চাননি। তার গুড লেন্থে পড়া আউট সুইংটি খেলতে পারেননি ম্যাথুস। ফরোয়ার্ড খেলতে গিয়ে মিস করেন বলের লাইন। বল ব্যাটের কানা ছুঁয়ে গ্লাভসবন্দী হয় লিটন দাসের। আউটের আবেদন করেছিলেন তাসকিন ও লিটন। কিন্তু আম্পায়ার আউট দেননি। ফলে হাসিমুখে কিছু একটা বলে বোলিং প্রান্তে ফিরে যান তাসকিন। যদি রিভিউ নিতেন, তাহলে নিশ্চিত করেই ম্যাথুসের উইকেটটি লেখা হতো তার নামের পাশে। অবশ্য অল্প পরেই ম্যাথুসকে আউট করেন।২০১৭ সালে অভিষেক তাসকিনের। ওই বছরই টেস্ট খেলেন ৫টি। কিন্তু ২২ বছর বয়সী পেসার আন্তর্জাতিক টেস্ট ক্রিকেটের চাপ সামলাতে পারেননি। তাই ৫ টেস্টে ৭ উইকেট নেওয়ার পর ছিটকে পড়েন জাতীয় দল থেকে। অবশ্য ইনজুরিও অন্যতম কারণ ছিল। প্রায় স্মৃতি হয়ে যাওয়া তাসকিন ২০২০ সালে করোনাকালে নিজেকে প্রস্তুত করেন। করোনাকালে সবাই যখন ঘরবন্দী, তখন তিনি মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধ, ধানমন্ডি ৪ নম্বর মাঠ, আবাহনী মাঠে অনুশীলন করে নিজেকে প্রস্তুত করেন। চলতি বছরে ঘরের মাঠে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ দিয়ে মাঠে ফেরেন। পাঁচ বছর ফিরে আসার চাপ সামলাতে পারেননি। কিন্তু নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডে ও টি-২০ সিরিজে আক্রমণাত্মক মেজাজে বোলিং করে ব্যাটসম্যানদের নাভিশ্বাস তুলে ছাড়েন। সেই ধারাবাহিকতা ধরে রাখেন শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে।