জেসন গিলেস্পির কথা মনে আছে!
অস্ট্রেলিয়ার এই গতি তারকা ২০০৬ সালে চট্টগ্রাম টেস্টে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ‘নাইটওয়াচম্যান’ হিসেবে ব্যাট করতে নেমে ডাবল সেঞ্চুরি করেছিলেন।
বাংলাদেশের আবুল হাসান রাজু তার অভিষেক টেস্টে ১০ম ব্যাটসম্যান হিসেবে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে ব্যাট করতে নেমে খুলনায় ক্যারিশম্যাটিক এক সেঞ্চুরি করেছিলেন।কিন্তু তাসকিন আহমেদ সেঞ্চুরি করেননি। তবে জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে ৭৫ রানের এক জাদুকরি ইনিংস খেলে যেন রূপকথা লিখে ফেললেন।
আরেক ব্যাটসম্যান মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ অপরাজিত ১৫০ রানের নান্দনিক ইনিংসে যেন এক শৈল্পিক ভাষায় টেস্টে তাকে উপেক্ষার প্রতিবাদ জানালেন।
মাহমুদুল্লাহ ও তাসকিনের ১৯১ রানের জুটিতে নবম উইকেট টেস্টে নতুন রেকর্ড গড়ল বাংলাদেশ। এর আগের রেকর্ড জুটিতেও মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ছিলেন ২০১২ সালে খুলনা আবুল হাসান রাজুর সঙ্গে গড়েছিলেন ১৮৪ রানের জুটি।
আর একটুখানি বিশ্বরেকর্ডই হয়ে যেত। মাত্র ৪ রান দূরে থাকতে জুটিটি ভেঙে যায়।
টেস্টের ইতিহাসে নবম উইকেটে রেকর্ড জুটিটি ১৯৫ রানের।
১৯৯৮ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার দুই ব্যাটসম্যান মার্ক বাউচার ও প্যাট সিমকক্স পাকিস্তানে বিশ্বরেকর্ড গড়েছেন। তবে গতকাল মাহমুদুল্লাহ-তাসকিন দ্বিতীয় সর্বোচ্চ জুটি পাকিস্তানের আসিফ ইকবাল ও ইনতিখাব আহমেদের ১৯০ রানের জুটির রেকর্ড ভেঙেছেন।
তাসকিন আহমেদ ও মাহমুদুল্লাহর ব্যাটিং ক্যারিশমায় হারারে টেস্টে প্রথম ইনিংসে ৪৬৮ রানের পাহাড় গড়েছে বাংলাদেশ। প্রথম দিন ৯৫ রানের ইনিংস খেলে ক্যারিশমা দেখিয়েছেন লিটন দাস।
টেস্টে সবচেয়ে দুর্বল দল এখন জিম্বাবুয়ে। সেই দলের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানরা যেন অসহায় আত্মসমর্পণ করেন। মাত্র ১৩২ রানে সেরা ৬ ব্যাটসম্যানকে হারানোর পর লিটন-মাহমুদুল্লাহ-তাসকিন মিলে বাংলাদেশকে পৌঁছে দেন নিরাপদে।
তাসকিন আহমেদের ৭৫ রানের ইনিংসটি ছিল দেখার মতো। ১১টি বাউন্ডারিতে সাজানো ঝলমলে এক ইনিংস। এত দিন বাংলাদেশ দলে একটা আক্ষেপ ছিল, লেজের ব্যাটসম্যান রান করতে পারেন না। কিন্তু তাসকিন তা ভুল প্রমাণ করে দিলেন। যে উইকেটে সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিম, সাইফ, শান্ত, সাদমানের মতো ব্যাটসম্যান বাইশগজে থিতুই হতে পারেন না সেখানে তিনি জিম্বাবুয়ের বোলারদের বিরুদ্ধে বীরত্ব দেখিয়ে খেললেন জাদুকরি এক ইনিংস।
মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ নাকি টেস্টের জন্য আর চলে না! সে কারণে এই ক্লাসিক ব্যাটসম্যানকে আর টেস্ট স্কোয়াডেই রাখা হয় না। নির্বাচকরা তাকে আর টেস্ট ক্রিকেটার হিসেবে মনেই করেন না। কিন্তু তামিমের ইনজুরির কারণে বাধ্য হয়েই তাকে নেওয়া হয়। বিষয়টা অনেকটা এমন, হাতেও অপসন নেই তাছাড়া যেহেতু দলের সঙ্গে আছেন তাই নেওয়া। এমন কি ম্যাচের আগের দিনও মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ একাদশে সুযোগ পাবেন কিনা নিশ্চিত ছিলেন না। সেই মাহমুদুল্লাহই খেললেন ১৫০ রানের ক্যারিশম্যাটিক ইনিংস। টেস্টে এটি তার ক্যারিয়ার সেরা ইনিংস।
হারারেতে মাহমুদুল্লাহর হার না মানা ১৫০ রানের ইনিংসে ছিল একটি বিশাল ছক্কা ও ১৭টি দৃষ্টিনন্দন বাউন্ডারি। ২৭৮ বল মোকাবিলা করে নতুন করে নিজের টেস্ট খেলার সামর্থ্যরে প্রমাণ দিলেন এই তারকা ব্যাটসম্যান।
এখন প্রশ্ন একটাই, এমন ইনিংসের পরও কি মাহমুদুল্লাহ সাদা পোশাকের ক্রিকেটে টিম ম্যানেজমেন্টের নজর কাড়তে পেরেছেন?