রবিবার, ১১ জুলাই, ২০২১ ০০:০০ টা

ধ্রুপদি ফাইনাল

ইংল্যান্ড-ইতালি, রাত ১টা

ধ্রুপদি ফাইনাল

হ্যারি কেইনে জ্বলে উঠবে ইংল্যান্ড

ইউরো কাপের ফাইনাল নিয়েই এ লেখা। তবুও প্রসঙ্গটা ক্রিকেট দিয়ে শুরু করি। ফুটবলের মতো ক্রিকেটেও ১১ জনের খেলা। কখনো আবার একাই একশোতে পরিণত হয়। ভারতের শচীন টেন্ডুলকার ছিলেন এমনই এক ক্রিকেটার। সাকিব আল হাসানকে আমি শচীনের সঙ্গে তুলনা করব না। তারপরও সাকিব এমন ক্রিকেটার ও মাঠে থাকলে বাংলাদেশ আলাদা শক্তি খুঁজে পায়। ইংল্যান্ড দলের হ্যারি কেইন যেন সে ধরনের ফুটবলার। ও মাঠে দাঁড়িয়ে থাকা মানে সতীর্থরা স্বস্তিতে থাকা। ২০১৮ সালে ইংল্যান্ড ফাইনালে না উঠলেও অনেকদিন পর বিশ্বকাপে ইংল্যান্ড জ্বলে উঠেছিল। আর তা হ্যারি কেইনকে ঘিরে। যোগ্য ফুটবলারের হাতে নেতৃত্ব তুলে দিয়েছে ইংল্যান্ড। এবার ইউরো কাপে ইংলিশরা যেন স্বপ্নের ফুটবল খেলছে। একের পর এক ম্যাচ জিতে ইউরোর ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ফাইনালে উঠেছে। আজ ইতালিকে হারালেই ৫৫ বছর পর ফুটবলে বড় আসরে শিরোপা জিতবে তারা।

প্রশ্ন হচ্ছে পারবে কি ইংল্যান্ড। নাকি তীরে এসে তরী ডুবিয়ে ফেলবে! ভাবা যায়, ১৯৬৬ সালে বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর ইংল্যান্ডের মতো শক্তিশালী দেশ ফাইনালই খেলতে পারেনি। ববিমুর বিখ্যাত ওয়েম্বলি স্টেডিয়ামে জার্মানিকে ৪-২ গোলে হারিয়ে ইংলিশদের বিশ্ব জয়ের আনন্দে ভাসান।

৫৫ বছর পর একই স্টেডিয়ামে ফাইনালে লড়ছে ইংল্যান্ড। কী অদ্ভূত মিল তাই না? কিন্তু সেই মিলের দেখা মিলবে? ববিমুরের পর হ্যারি কেইন শিরোপা উপহার দিতে পারবেন কী? বিশ্বকাপের সঙ্গে ইউরোর তুলনা চলে না। তবুও এই শিরোপাও ইংল্যান্ডের কাছে বিশ্ব জয়ের মতো। ইতালিও প্রচন্ড শক্তিশালী প্রতিপক্ষ। তবে কোচ সাউথগেট জানেন, জয়ের জন্য দলকে কিভাবে সাজাতে হবে। শক্তির বড় টনিক হ্যারি কেইন। মাঠে যিনি সিংহ রূপ ধারণ করবেন। আছেন রহিম স্ট্যার্লিং, কে ফিলিপ, লুইস এরা ভয়ংকর হয়ে উঠলে ইংল্যান্ডকে ঠেকায় কে! অনেকে বলেন, ঘরের মাঠে খেলা হলে স্বাগতিকরা উজ্জীবিত থাকে। আমি এর সঙ্গে পুরোপুরি একমত হতে পারছি না। এখানে আবার বাড়তি চাপও কাজ করে। এসব ঝেড়ে ফেলে খেলতে হবে ইংল্যান্ডকে। আমি ব্যক্তিগতভাবে ইংল্যান্ড বা ইতালির সমর্থক নয়। বিশ্বকাপে আমি বরাবরই ব্রাজিলকে সমর্থন দিই। তবে আমি চাই এবার ইউরো কাপে ইংল্যান্ড চ্যাম্পিয়ন হোক। কেননা ফুটবল জনপ্রিয় করার পেছনে এই দেশটির অনেক অবাদন আছে। একটা শক্তিশালী দেশ দীর্ঘদিন ব্যর্থতার মধ্যে হাবুডুবু খাবে তা আমি কেন অনেকে চাইবেন না।

 


মানসিনির কৌশলই ইতালির শক্তি

বিশ্ব ফুটবলে বরাবরই পরাশক্তি দেশ ইতালি। ১৯৩০ সালে উরুগুয়ে প্রথম বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন হলেও ১৯৩৪ ও ১৯৩৮ সালে টানা দুবার শিরোপা জেতে চমক দেখিয়েছে ইতালি। বিশ্বযুদ্ধের কারণে ১৯৪২ ও ১৯৪৬ সালে বিশ্বকাপ হতে পারেনি। যদি হতো তাহলে হ্যাটট্রিক চ্যাম্পিয়নের সম্ভাবনা ছিল তাদের। ১৯৮২ ও ২০০৬ সালে আবারও বিশ্ব জয়। দুর্ভাগ্য তাদের ১৯৯৪ সালে ফাইনালে উঠেও টাইব্রেকারে হেরে যায় ব্রাজিলের কাছে। যে দেশ চারবার বিশ্বকাপ জিতে তাদের পরাশক্তি ছাড়া কী আর বলা যায়। অথচ এই দেশই কিনা ২০১৮ সালে বিশ্বকাপের চূড়ান্তপর্ব খেলতে পারেনি। ইতালি ছাড়া বিশ্বকাপ তা কি ভাবা যায়!

উরুগুয়ে দুবার বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। দীর্ঘ সময়ে তারা চূড়ান্ত পর্বেও উঠতে পারেনি। বিশ্বকাপে আছে ঠিকই উরুগুয়ের দাপট আর নেই। ইতালি বিশ্বকাপ না খেলায় কেন জানি আমার ভিতরে ভয় ঢুকে গিয়েছিল চারবারের বিশ্বজয়ীদের পরিণতি উরুগুয়ের মতো হয় কিনা? একজন কোচ যে দলকে পাল্টে দিতে পারেন তার বড় উদাহরণ মানসিনি। অনেকে বলেন, ভালো খেলোয়াড় হলে তিনি যে ভালো কোচ হবেন তা ভাবাটা ভুল হবে। রবার্ত মানসিনি উঁচুমানের ফুটবলারই ছিলেন না। তার কোচিংয়ে ইতালি যেন প্রাণ ফিরে পেয়েছে। এবার ইউরো কাপে দুর্দান্ত খেলে ইতালি আজ শিরোপা জিততে মাঠে নামবে।

একটা ব্যাপার লক্ষণীয় যে, ফুটবলে নতুনরূপ ধারণ করেছে। আগে তাদের কৌশলই ছিল ডিফেন্সশিপ খেলে কাউন্টার অ্যাটাকে যাওয়া। সত্যি বলতে কি ডিফেন্স লাইনে আমি কলাকৌশল শিখেছি ইতালির খেলা দেখে। ১৯৮২ বা ২০০৬ সালে এ কৌশল কাজে লাগিয়ে তারা বিশ্বকাপও জয় করেছে। সেই প্রথা এবার ভেঙে দিয়েছেন মানসিনি। অ্যাটাকিং ফুটবল খেলে ভক্তদের মন জয় করছেন। আজ ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ইউরো কাপের ফাইনাল। সবার একটাই প্রশ্ন কে জিতবে ইতালি না ইংল্যান্ড? উত্তর দেওয়াটা কঠিন। এই প্রথম ফুটবলে শক্তিশালী দুই দেশ ফাইনাল খেলছে। ইংল্যান্ড তো এই প্রথম। ইতালির সবচেয়ে বড় গুণ হচ্ছে সমন্বয় করে খেলতে পারে। ডিফেন্স বা দুই উইং সচল। মধ্যমাঠে জর্জিনহো ভেরাট্টি মধ্যমাঠে দারুণ খেলছেন। ইম্বেবিলে, ইনসিগনেও আক্রমণভাগে চমৎকার। এতকিছুর পরও আমি বলব ইতালির শিরোপা নির্ভর করছে অনেকটা মানসিনির ওপর। বলতে পারেন কোচ তো আর মাঠে খেলবেন না। না খেললেও তিনিই ভরসা। তার কৌশলই ইতালিকে মাঠে উজ্জীবিত রাখবে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর