শনিবার, ৩১ জুলাই, ২০২১ ০০:০০ টা

উইন্ডিজের কৌশল টাইগারদের প্রেরণা

মেজবাহ্-উল-হক

উইন্ডিজের কৌশল টাইগারদের প্রেরণা

ঘরের মাঠে প্রতিপক্ষ অস্ট্রেলিয়া। টাইগাররা স্বপ্ন দেখছেন প্রথমবারের মতো অসিদের টি-২০তে হারিয়ে সেলিব্রেশন করতে! বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের জন্য এখন প্রেরণা হতে পারে ওয়েস্ট ইন্ডিজের কৌশল।

ওয়ানডে সিরিজে জিতলেও টি-২০তে ক্যারিবীয়দের বিরুদ্ধে ভড়াডুবি হয়েছে অস্ট্রেলিয়ার। সিরিজে তারা গেইলদের বিরুদ্ধে ৪-১ ব্যবধানে হেরেছে। তবে ক্যারিবীয়রা যে একটি ম্যাচে টি-২০তে হেরেছে সেখানেও পরাজয়ের ব্যবধান মাত্র ৪ রানের।

কী এমন কৌশল অবলম্বন করেছিলেন ক্যারিবীয়রা? ওয়েস্ট ইন্ডিজ-অস্ট্রেলিয়া সিরিজের সেই পাঁচ ম্যাচ বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, গেইলরা প্রথম তিন ম্যাচ জিতে সিরিজ নিশ্চিত করেছেন মূলত দুই স্পিনার ফ্যাবিয়ান অ্যালেন ও হেডেন মার্শের ক্যারিশমাটিক বোলিংয়ে।

লেগ স্পিনার ওয়ালশ পাঁচ ম্যাচে একাই নিয়েছেন ১২ উইকেট। রান দেওয়ার বেলায়ও ভীষণ কিপটে ছিলেন তিনি। অফ-স্পিনার অ্যালেন মাত্র ৪ উইকেট নিলেও ম্যাচে অসি ব্যাটসম্যানদের ওপর ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করেছেন। মূলত এ দুই স্পিনারই অস্ট্রেলিয়াকে নাস্তানাবুদ করে ছেড়েছেন। ক্যারিবীয় ব্যাটসম্যানরাও দাপট দেখিয়েছেন।

 

সেই পাঁচ ম্যাচ

প্রথম টি-২০ : উইন্ডিজ ১৮ রানে জয়ী!

অস্ট্রেলিয়াকে মাত্র ১৪৬ রানের টার্গেট দিয়েও ১৮ রানে জয় তুলে নেয় উইন্ডিজ। লেগ স্পিনার ওয়ালশ মাত্র ২৩ রানে ৩ উইকেট নেন। অফ-স্পিনার অ্যালেন ২৪ রানে নেন ২ উইকেট। মিডিয়াম পেসার ওবেদ ম্যাককো ৪ উইকেট নিয়েও অসিদের চাপে ফেলে দিয়েছিলেন দুই স্পিনারই। ওয়ালশ-অ্যালেনের দাপটেই ধরাশায়ী হয়েছিল অস্ট্রেলিয়া।

 

দ্বিতীয় টি-২০ : উইন্ডিজ ৫৬ রানে জয়ী।

দ্বিতীয় ম্যাচেও দাপট দেখিয়েছেন দুই স্পিনার ওয়ালশ ও অ্যালেন। দুজনে ৮ ওভার বোলিং করে রান দিয়েছেন মাত্র ৫১, উইকেটও নিয়েছেন ৩টি। তবে ওই ম্যাচে ব্যাটসম্যানরাই ব্যবধান গড়ে দেন ১৯৬ রান করে। বোলারদের জন্য কাজটা অনেক সহজ হয়ে যায়। এ ম্যাচেও অস্ট্রেলিয়াকেও ১৪০ রানে আটকে দেয় ওয়েস্ট ইন্ডিজ।

 

তৃতীয় টি-২০ : উইন্ডিজ ৬ উইকেটে জয়ী!

তৃতীয় ম্যাচে আরও ভয়ংকর দুই স্পিনার ওয়ালশ ও অ্যালেন। ক্যারিবীয় লেগ স্পিনার ৪ ওভারে দিয়েছেন মাত্র ১৮ রান, ২টি উইকেটও নিয়েছেন। অ্যালেন ৪ ওভারে দিয়েছেন মাত্র ২৬ রান। অস্ট্রেলিয়াকে ১৪১ রানে আটকে দেওয়ার পর ক্যারিবীয় ব্যাটসম্যানরাও দ্বিতীয় ইনিংস দাপট দেখিয়েছেন।

 

চতুর্থ টি-২০ : অস্ট্রেলিয়া ৪ রানে জয়ী

এ ম্যাচেও দুই স্পিনার ক্যারিশমাটিক বোলিং করেন। তবে পেসাররা ভালো করতে না পারায় অস্ট্রেলিয়া ১৮৯ রান করে। ১৯০ রানের টার্গেটে খেলতে নেমেও প্রায় জিতেই গিয়েছিল উইন্ডিজ। শেষ রক্ষা হয়নি। মাত্র ৪ রানে হেরে যায়।

 

পঞ্চম টি-২০ : ১৬ রানে জয় উইন্ডিজের

শেষ ম্যাচে ব্যাটসম্যানরাই জয়ের পথটা উন্মুক্ত করে দেন। এভিন লুইস ঝড়ে ১৯৯ রান করে ফেলে উইন্ডিজ। এরপর বোলারদের কাজটা আরও সহজ হয়ে যায়।

 

ফোকাস পয়েন্ট

অস্ট্রেলিয়া দলে তারকা ক্রিকেটাররা নেই। এমনকি ইনজুরির কারণে নিয়মিত অধিনায়ক অ্যারোন ফিঞ্চও নেই। তার পরও বাংলাদেশের রিল্যাক্স হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। কারণ দলে আছেন মিচেল মার্শের মতো ক্যারিশমাটিক এক অলরাউন্ডার। একটুখানি অসাবধান হলে এক মার্শই টাইগারদের স্বপ্ন ভঙ্গ করে দিতে পারেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে সিরিজ হারলেও মার্শ তিন নম্বরে ব্যাট করতে নেমে ৪৩.৮ গড়ে করেছেন ২১৯ রান। তিনটি হাফ সেঞ্চুরি। সঙ্গে বল হাতে নিয়েছেন ৮ উইকেট।

 

টাইগারদের আস্থা

টাইগারদের প্রধান আস্থা হচ্ছেন তরুণ ক্রিকেটাররা। জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে সৌম্য সরকার, আফিফ হোসেন, শামীম হোসেন, নুরুল হাসান সোহান, মোহাম্মদ নাঈমরা দারুণ ব্যাটিং করেছেন। টি-২০তে জয়ের জন্য যে আত্মবিশ্বাস ও আগ্রাসী মনোভাবের প্রয়োজন জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে সিরিজে তা প্রদর্শন করেছেন টাইগার তরুণরা।

যদিও আপাতদৃষ্টিতে তামিম ইকবাল, মুশফিকুর রহিম ও লিটন দাসের মতো ফর্মে থাকা ক্রিকেটারের না থাকাটা দলের জন্য ধাক্কা, তবে ফর্মের তুঙ্গে থাকা সাকিব আল হাসানকে পাওয়াটাও বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের জন্য আত্মবিশ্বাসের জ্বালানি হিসেবে কাজ করবে। আর ‘ভয়ংকর’ অস্ট্রেলিয়াকে কুপোকাত করতে ক্যারিবীয়দের কৌশল হতে পারে টাইগারদের জন্য ‘মহামন্ত্র’!

সর্বশেষ খবর