মঙ্গলবার, ১০ আগস্ট, ২০২১ ০০:০০ টা

রেকর্ড রাঙা ম্যাচে ভয়ংকর সাকিব

মেজবাহ্-উল-হক

রেকর্ড রাঙা ম্যাচে ভয়ংকর সাকিব

চ্যাম্পিয়ন ক্রিকেটারদের ব্যাপারই আলাদা! রক্ত-মাংসের মানুষ বলে তারা ‘ভুল’ করেন ঠিকই, কিন্তু সুদে-আসলে সেই ক্ষতি পুষিয়ে দেওয়ার সামর্থ্যও রাখেন।

ক্রিকেটবিশ্বে অনেক উদাহারণ আছে। যে বেন স্টোকস ২০১৬ সালে ভারতের মাটিতে অনুষ্ঠিত টি-২০ বিশ্বকাপের ফাইনালে শেষ ওভারে চারটি ছক্কা হজম করায় ইংল্যান্ড একটি টি-২০ বিশ্বকাপের শিরোপা থেকে বঞ্চিত হয়েছিল, সেই ‘চ্যাম্পিয়ন’ ক্রিকেটারই ২০১৯ সালে ইংল্যান্ডকে ঘরের মাঠে প্রথমবারের মতো ‘মূল’ বিশ্বকাপের শিরোপা উপহার দেন।

আগের দিন সাকিব আল হাসান এক ওভারে ৫ ছক্কা হজম করায় বাংলাদেশ হেরে যায়। সেই সাকিবই কাল উড়িয়ে দিলেন অস্ট্রেলিয়াকে। ৩.৪ ওভার বোলিং করে চার উইকেট নিলেন। জিতলেন ম্যাচসেরার পুরস্কারও। এমনকি ম্যান অব দ্য সিরিজও সাকিব। কালকেই এই ম্যাচে বিরল একটি রেকর্ড গড়েন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার। বিশ্বে টি-২০তে প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে সাকিব ব্যাট হাতে ১০০০ রান করার পাশাপাশি বল হাতেও নিলেন ১০০ উইকেট।

কাল পেসার শরিফুলের জায়গায় সুযোগ পাওয়া পেস-অলরাউন্ডার দুর্দান্ত বোলিং করেছেন। তিন ওভারে মাত্র ১২ রান দিয়ে নিয়েছেন ৩ উইকেট।

প্রথম ব্যাট করে ১২২ রান করার পরও গতকাল ৬০ রানের বিশাল জয় পেল বাংলাদেশ।

‘ভয়ংকর’ অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটিং লাইনআপ কাল ভয়ে ৬২ রানেই গুটিয়ে যায়। টি-২০ ইতিহাসে দলীয় সর্বনিম্ন স্কোর এটি।

কাল শেষ ম্যাচেও টাইগাররা নিজেদের উজাড় করে দিতে পারেননি। তবে পাওয়ার প্লেতে বাংলাদেশের ব্যাটিং ছিল স্বপ্নের মতো, ৪৬/১। যেখানে আগের চার ম্যাচে পাওয়ার প্লেতে বাংলাদেশের স্কোর ছিল ৩১/১, ৩৮/২, ২৮/২ ও ৩১/১। অবশ্য ঠিক পাওয়ার প্লে না বলে দুই ওপেনারের ব্যাটিংয়ের সময় বললেই ভালো। 

প্রথম চার ম্যাচে ওপেনিংয়ে ব্যর্থ সৌম্য। জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে সিরিজ সেরা হওয়া এই তারকাকে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে যেন নিজেকে খুঁজে পাচ্ছিলেন না। যেন ট্রমা কাজ করছিল সৌম্যর মধ্যে। সে কারণেই টিম ম্যানেজমেন্ট ওপেনিং জুটিতে পরিবর্তন আনে। সৌম্যকে চারে পাঠিয়ে নাঈমের সঙ্গে ওপেনিংয়ে পাঠানো হয় মেহেদী হাসানকে। আর এতেই বদলে যায় ব্যাটিংয়ের চিত্র।

দুই ওপেনার মিলে ৪.৩ ওভারে স্কোর বোর্ডে তোলেন ৪২ রান। ওভার প্রতি তখন গড় ছিল দশের কাছাকাছি। মনে হচ্ছিল উইকেটে রান তোলা কোনো ব্যাপারই নয়। কিন্তু অ্যাস্টন টার্নারের করা ম্যাচের পঞ্চম ওভারের চতুর্থ বলে ভুল করে বসলেন মেহেদী। শট বলে তুলে দিলেন সহজ ক্যাচ। মেহেদী আউট।

মেহেদীকে আউট করার পাশাপাশি অস্ট্রেলিয়া যেন রানের বাটনেই চাপ দিয়ে বন্ধ করে দিলেন। এরপর সাকিব আল হাসান এসে ঠিক ঠাক বলই দেখতে পাচ্ছিলেন না। আউট হওয়ার আগে ২০ বল খেলে মাত্র ১১ রান করেছেন।

সাকিবের আগে ড্রেসিংরুমে ফিরেছিলেন মোহাম্মদ নাঈমও। ২৩ বলে ২৩ রান করেছেন। কাল দারুণ শুরু করলেও নাঈমের আউটটা ছিল খুবই দৃষ্টিকটু! রিভার্স সুইপ খেলতে গিয়ে শট থার্ডম্যানে ক্যাচ।

কাল বাংলাদেশের একাদশে দুটি পরিবর্তন ছিল। শামীম হোসেনের জায়গায় স্পিন অলরাউন্ডার মোসাদ্দেক হোসেনকে খেলানো হয়েছে। আর পেসার শরিফুল ইসলামের পরিবর্তে খেলেছেন পেস-অলরাউন্ডার মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন। একাদশে থাকা এগারো ব্যাটসম্যানের মধ্যে মুস্তাফিজ ও নাসুম আহমেদ ছাড়া বাকি নয়জনই ব্যাটসম্যান।

অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ বাইশগজে গিয়ে দারুণ শুরু করলেন। একটি ছক্কাও হাঁকালেন। কিন্তু ইনিংসটি বেশি বড় করতে পারেননি। ১৪ বলে ১৯ রানে আউট। এরপর লোয়ার অর্ডারে আর কেউ সেভাবে দাঁড়াতেই পারেননি। ১৫ ওভারে যেখানে বাংলাদেশের স্কোর ছিল ১০৫/৫, সেখানে স্লগ ওভারের ৫ ওভারে টাইগাররা নিয়েছে মাত্র ১৭ রান। পাওয়ার প্লেতে দেখা বড় ইনিংসের স্বপ্নের মৃত্যু ঘটে স্লগ ওভারে লোয়ার অর্ডার ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতায়। বাড়তি ব্যাটসম্যান নিয়েও বড় স্কোর হয়নি বাংলাদেশের। তবে এই রান তাড়া করতেই ৬২ রানে ‘প্যাকেট’ অস্ট্রেলিয়া। ১৩.৪ ওভারেই শেষ হয়ে যায় তাদের ইনিংস। লজ্জার সিরিজ শেষে কাল রাতেই বিশেষ বিমানে দেশের উদ্দেশে রওনা দেন অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটাররা।

সর্বশেষ খবর