রবিবার, ১৫ আগস্ট, ২০২১ ০০:০০ টা

বঙ্গবন্ধুকে দেওয়া কথা রেখেছিলেন সুলতানা

‘পদক তো জিতলি এখন তোরা কী চাস।’ সুলতানা আর দেরি করেননি। বলে ফেললেন মেয়েদের জন্য আলাদা ক্রীড়া কমপ্লেক্স দরকার। বঙ্গবন্ধু মুচকি হেসে বললেন, ‘যা, পাবি। ধানমন্ডিতে পিডব্লিউডির জমি পড়ে আছে। ওখানেই তোদের ক্রীড়া কমপ্লেক্স হবে।’ বর্তমানে ধানমন্ডির মহিলা ক্রীড়া কমপ্লেক্সটি বঙ্গবন্ধুরই দেওয়া’

মনোয়ার হক

বঙ্গবন্ধুকে দেওয়া কথা রেখেছিলেন সুলতানা

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও শেখ হাসিনার সঙ্গে শেখ কামালের স্ত্রী সুলতানা কামাল -ফাইল ছবি

১৯৭৩ সালের কথা। তখনো দেশখ্যাত অ্যাথলেট সুলতানা আহমেদ খুকির সঙ্গে শেখ কামালের বিয়ে হয়নি। সে বছর অলইন্ডিয়া গেমসে স্বাধীন বাংলাদেশ অ্যাথলেটিকসে অংশ নিয়েছিল। যাওয়ার আগে পুরো দল ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে দেখা করতে যায়। বঙ্গবন্ধু সবাইকে মিষ্টিমুখ করিয়ে বললেন, তোরা সৌভাগ্যবান বাংলাদেশের হয়ে প্রথম বিদেশে খেলতে যাচ্ছিস। সুলতানাকে কাছে ডেকে বঙ্গবন্ধু বললেন, ‘আমি জানি তোদের অনুশীলন ঠিকমতো হয়নি। তবুও তোর ওপর আমার আস্থা রয়েছে সোনা না হোক তুই হবি বিদেশের মাটিতে পদক জেতা প্রথম ক্রীড়াবিদ।’ বঙ্গবন্ধুর এমন কথায় আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন সুলতানা। বললেন, ‘আমি আপনাকে কথা দিচ্ছি ভারতের মাটিতে পদক জিতে দেশের মান উজ্জ্বল করব।’

বঙ্গবন্ধুকে দেওয়া সেই কথা রক্ষা করেছিলেন সুলতানা। অলইন্ডিয়া গেমসে লংজাম্পে রৌপ্য পদক জেতেন তিনি। এটাই ছিল বাংলাদেশের কোনো ক্রীড়াবিদের বিদেশের মাটিতে প্রথম পদক জয়। শুধু সুলতানা নন, ওই গেমসে ১০০ মিটার ¯িপ্রন্টে ব্রোঞ্জ পদক জেতেন শামিম আরা টলি। এমন সাফল্য বঙ্গবন্ধু দারুণ খুশি হয়েছিলেন। ভারত ফেরা দলকে ঘরোয়া পরিবেশে সংবর্ধনাও দেন। সুলতানার উদ্দেশে বললেন, ‘পদক তো জিতলি এখন তোরা কী চাস।’ সুলতানা আর দেরি করেননি। বলে ফেললেন মেয়েদের জন্য আলাদা ক্রীড়া কমপ্লেক্স দরকার। বঙ্গবন্ধু মুচকি হেসে বললেন, ‘যা, পাবি। ধানমন্ডিতে পিডব্লিউডির জমি পড়ে আছে। ওখানেই তোদের ক্রীড়া কমপ্লেক্স হবে।’ বর্তমানে ধানমন্ডির মহিলা ক্রীড়া কমপ্লেক্সটি বঙ্গবন্ধুরই দেওয়া।’

নারী হয়েও সুলতানা ছিলেন ৬০ ও ৭০ দশকে দেশের অন্যতম জনপ্রিয় খেলোয়াড়। তার দৌড় দেখতে তৎকালীন ঢাকা স্টেডিয়ামে ভিড় জমে যেত। ১৪ বছর বয়সেই সুলতানা তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান জাতীয় অ্যাথলেটিকস চ্যাম্পিয়নে লংজাম্পে মোহামেডানের হয়ে রেকর্ড গড়ে সোনা জেতেন। ১৯৬৮ সালে তো পুরো পাকিস্তান জুড়েই আলোড়ন তোলেন। পাকিস্তান অলিম্পিক গেমসে লংজাম্পে নতুন রেকর্ড গড়ে সোনা জেতেন। ১৯৭০ সালে অল পাকিস্তান অ্যাথলোটিকস চ্যাম্পিয়নশিপে হার্ডলসে নিজের রেকর্ড ভেঙে সোনা জেতেন। স্বাধীনতার পর আরও অপ্রতিরোধ্য হয়ে ওঠেন। ১৯৭৩, ১৯৭৪ ও ১৯৭৫ টানা তিন বছর জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপে সুলতানা তার সাফল্য ধরে রাখেন।

বঙ্গবন্ধুর জ্যেষ্ঠ পুত্র শেখ কামালের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে সুলতানা আহমেদ থেকে হয়ে যান সুলতানা কামাল। স্বামী শেখ কামাল নিজেও ছিলেন সফল ক্রীড়াবিদ ও সংগঠক। তাই বিয়ের পরও স্ত্রীকে উৎসাহ জোগান ট্র্যাকে দাপট ধরে রাখতে। সুলতানার স্বপ্নও ছিল এশিয়াতে সেরা হওয়ার। সেই স্বপ্ন আর বাস্তবায়ন হলো কই? ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ৩২ নম্বরে ঘাতকদের হাতে তিনিও নিহত হন।

সর্বশেষ খবর