বৃহস্পতিবার, ১৯ আগস্ট, ২০২১ ০০:০০ টা

মালদ্বীপে বসুন্ধরার বাজিমাত

মাজিয়া ০ - ২ বসুন্ধরা কিংস

মালদ্বীপে বসুন্ধরার বাজিমাত

মালদ্বীপ জাতীয় স্টেডিয়ামের দুই নম্বর গেটের সামনে ছোট্ট একটা জটলা। একে-অপরকে জিজ্ঞাসা করছে, টিকিট বিক্রি হচ্ছে? সাংবাদিক জেনেই ছুটে এলেন কয়েকজন। বাংলাদেশের মানুষ জেনে আবেগে আপ্লুত হলেন তারা। চোখে টলটলে পানি দেখা গেল। এদের অনেকে প্রায় এক দশক ধরে দেশের মাটিতে পা রাখেননি। কিন্তু তাতে কী! দেশের প্রতি টান থেকেই তারা ছুটে এসেছেন স্টেডিয়ামের সামনে। কার খেলা দেখতে এসেছেন? প্রশ্ন শুনে একজন বলে উঠলেন, বাংলাদেশের। কিন্তু ভাই, এখানে তো বাংলাদেশের কোনো খেলা নেই। তাহলে? বসুন্ধরা কিংসে যে ১৪ জন জাতীয় দলের ফুটবলার আছেন, তা ওদের জানা। বসুন্ধরা কিংসই তাই তাদের কাছে ‘বাংলাদেশ’। সত্যিই তো! তপু বর্মণ, সুফিল, ইব্রাহিম, বিপলু, জিকোদের ছাড়া কী জাতীয় দলের কথা ভাবা যায়! বসুন্ধরা কিংস বাংলাদেশেরই প্রতিনিধিত্ব করছে মালদ্বীপে অনুষ্ঠিত এএফসি কাপে।

অস্কার ব্রুজোনের দল বাংলাদেশের ফুটবলে গত কয়েক বছরে বেশ প্রভাব ফেলেছে। এতদিনে এ খবর দেশের সবাই জানে। কিন্তু বসুন্ধরা কিংসের প্রভাব দেশের সীমানা ছাড়িয়ে অনেকদূর পৌঁছে গেছে। প্রশান্ত মহাসাগরের গভীরে জেগে থাকা দ্বীপরাষ্ট্র মালদ্বীপেও কিংসের ভক্তের অভাব নেই। তারা হাজার হাজার মাইল দূরে থেকেও বসুন্ধরা কিংসের খেলা দেখে মুগ্ধ হয়। কুমিল্লার একজন তো বলেই দিলেন, আমরা নিয়মিতই দল বেঁধে কিংসের খেলা দেখি। অসাধারণ খেলে দলটা।

মালদ্বীপে কর্মরত হাজারও বাংলাদেশি গতকাল বসুন্ধরা কিংসের খেলা দেখতে চেয়েছিল। কিন্তু স্টেডিয়ামে দর্শকদের প্রবেশ নিষিদ্ধ ছিল করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে। এমনকি সাংবাদিকদেরও প্রতিটা ম্যাচের আগে কভিড টেস্ট করতে হচ্ছে। জমা দিতে হচ্ছে পিসিআর টেস্টের নেগেটিভ ফল। নাহলে স্টেডিয়ামের সদর দরোজায় দাঁড়িয়ে থাকা প্রহরী বাড়ির পথ দেখিয়ে দেন। অবশ্য মালদ্বীপে অবস্থিত বাংলাদেশিদের প্রতিনিধি হিসেবে রাষ্ট্রদূত বসুন্ধরা কিংসের খেলা দেখতে এসেছিলেন গত রাতে।

দর্শকরা খেলা দেখতে না পারলেও বসুন্ধরা কিংস তাদের সেরাটাই উপহার দিয়েছে। এএফসি কাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচে মালদ্বীপের টিসি স্পোর্টসকে ৫-১ গোলে উড়িয়ে দিয়েছিল তারা। সে জয়ের ধারাটাই ধরে রাখল অস্কার ব্রুজোনের দল। গতকাল মালদ্বীপের অন্যতম সেরা ক্লাব মাজিয়াকে হারিয়ে দিল ২-০ গোলে।

স্প্যানিশ কোচ অস্কার ব্রুজোন আগেই বলেছিলেন, এএফসি কাপে প্রথম ম্যাচটা বেশ গুরুত্বপূর্ণ। এ ম্যাচে জয় অনেক কিছুই বদলে দেবে। ২-০ গোলে এগিয়ে যাওয়ার পর বসুন্ধরা কিংসের ‘বডি ল্যাঙ্গুয়েজে’ বেশ পরিবর্তন আসে। দলটাকে আগের চেয়েও বেশি আত্মবিশ্বাসী দেখায়। রবসন-রাউলরা আগের চেয়েও দূরন্ত হয়ে উঠেন। গতকাল দুর্দান্ত ফুটবল উপহার দিয়েছে বসুন্ধরা কিংস। স্থানীয় ক্লাবের বিপক্ষে তাদেরই মাঠে জয় ছিনিয়ে আনা সহজ কাজ ছিল না। দলের সবাই নিজেদের উজাড় করেই খেলেছেন। তবে খালেদ শাফি আর রবসন রবিনহো ছিলেন দূরন্ত। ডিফেন্সে প্রতিপক্ষকে রুখে দেওয়ার কাজ করেছেন ইরানি ফুটবলার খালেদ। অন্যদিকে আক্রমণভাগে মিডফিল্ড ও আক্রমণভাগে নেতৃত্ব দিয়েছেন ব্রাজিলের রবসন।

এএফসি কাপ মিশনের প্রথম ধাপটা দারুণভাবেই পাড়ি দিল বসুন্ধরা কিংস। এবার বেঙ্গালুরু এফসি ও এটিকে মোহনবাগানের বিপক্ষে জয়ের অপেক্ষা। তবেই ইন্টার-জোন প্লে-অব সেমিফাইনালে খেলার যোগ্যতা অর্জন করবে বসুন্ধরা কিংস।

সর্বশেষ খবর