শুক্রবার, ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

চমক নেই বিশ্বকাপ স্কোয়াডে

মেজবাহ্-উল-হক

চমক নেই বিশ্বকাপ স্কোয়াডে

প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ স্কোয়াডে সুযোগ পেয়েছেন আফিফ হোসেন, নাঈম শেখ, শামিম হোসেন, শরিফুল ইসলাম, মেহেদী হাসান ও নাসুম আহমেদ।

-তারপরও বলার উপায় নেই বাংলাদেশের এই বিশ্বকাপ স্কোয়াডে কোনো চমক রয়েছে। কারণ, যারা সুযোগ পেয়েছেন তাদের জায়গা অনেকটা নিশ্চিতই ছিল। কেবল বাকি ছিল আনুষ্ঠানিক ঘোষণা। সেই ঘোষণাটাই গতকাল মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামের প্রেস কনফারেন্সে দিলেন প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন নান্নু।

তারুণ্য ও অভিজ্ঞ মিলিয়েই দেওয়া হয়েছে বিশ্বকাপ দল। প্রধান নির্বাচক বলেন, ‘অভিজ্ঞতা ও পারফরম্যান্সসহ সব দিকই দেখা হয়। পাশপাশি এটাও বিবেচনা করা হয় যে বিদেশে কে কেমন করতে পারে! বিদেশে কে ভালো পারফর্ম করতে পারে, এটা চিন্তা করা হয়। কারণ, দেশে আমরা এক ধরনের উইকেটে খেলি, বিদেশে আরেক ধরনের উইকেট-কন্ডিশন। সব কিছুর সামঞ্জস্য করে দল গড়া হয়।’

দল যখন ভালো করে তখন টিম ম্যানেজমেন্টের কাজটা অনেক সহজ হয়ে যায়। নির্বাচকরাও ফুরফুরে মেজাজে নিশ্চিন্তে দল ঘোষণা করতে পারেন।

বাংলাদেশ দল টি-২০ ক্রিকেটে আহামরি কোনো বড় দল নয়! সে কারণে সামনের আসরে প্রথম রাউন্ড নামে ‘বিশ্বকাপ বাছাই পর্ব’ খেলতে হবে টাইগারদের। র‌্যাঙ্কিংয়ের সেরা আট দল সরাসরি খেলার সুযোগ পেয়েছে সুপার-টুয়েলভে।

তবে সাম্প্রতিক বাংলাদেশ দল টি-২০তে নিজেদের আলাদাভাবে তুলে ধরতে সমর্থ হয়েছে। বিশ্বকাপের আগে টানা তিন সিরিজ জয়ে উঠে এসেছে আলোচনায়। র‌্যাঙ্কিংয়েও বাজিমাত করে দিয়েছে। অস্ট্রেলিয়াকে টপকে ছয়ে। কিন্তু বিশ্বকাপের জন্য দেয়া ‘টাইমলাইন’ শেষ হয়ে যাওয়ায় এখন ছয়ে উঠেও প্রথম রাউন্ড খেলতেই হবে বাংলাদেশকে। উইকেট তথা হোম অ্যাডভান্টেজ কাজে লাগিয়ে পাওয়া এই সাফল্য নিয়ে অনেক ‘যদি’ ‘কিন্তু’ থাকলেও বিশ্বকাপের আগে জয়ের মানসিকতা খেলোয়াড়দের যে ‘বুস্টআপ’ করল সেটাই বা কম কিসে!

তবে স্কোয়াড নিয়ে একটুখানি অতৃপ্তি থাকছেই -ড্যাসিং ওপেনার তামিম ইকবালের অনুপস্থিতি। দেশসেরা ওপেনারকে নিয়েই দল দিতে চেয়েছিলেন নির্বাচকরা। কিন্তু তামিম নিজেই নিজেকে সরিয়ে নিয়েছেন বিশ্বকাপ থেকে।

অনেক দিন থেকেই তামিম টি-২০ খেলছেন না। বাংলাদেশ যে শেষ তিনটি টি-২০ সিরিজে টানা জিতেছে, এখানে ছিলেন না তিনি। এমনকি এর আগের বেশ কয়েকটি সিরিজেও ছিলেন না। সব মিলে জাতীয় দলের জার্সিতে শেষ ১৯ টি-২০ খেলেননি।

তামিম ইকবালের অনুপস্থিতিতে বাংলাদেশ সাফল্য পেলেও ওপেনিংয়ে সমস্যা কিন্তু কাটেনি। অন্য ওপেনারদের কাউকেই পারফরম্যান্সে ধারাবাহিক পাচ্ছে না টিম ম্যানেজমেন্ট। জিম্বাবুয়ে সিরিজে ম্যান অব দ্য সিরিজ হওয়ার সৌম্য সরকার অস্ট্রেলিয়া সিরিজে সুপার ফ্লপ। নিউজিল্যান্ড সিরিজে তিনি একাদশেই সুযোগ পাননি।

লিটন দাসও কিউইদের বিরুদ্ধে আশানুরূপ আহামরি কিছু দেখাতে পারেননি। আরেক ওপেনার নাঈম শেখ নিয়মিত খেললেও ধারাবাহিকতায় যথেষ্ট ঘাটতি। সে কারণেই টি-২০তে বাংলাদেশের একমাত্র সেঞ্চুরিয়ন তামিমকে ওপেনিংয়ে দরকার ছিল বলেই ক্রিকেট বিশ্লেষকদের মত।

তামিমের জন্য আক্ষেপ প্রধান নির্বাচকেরও। মিনহাজুল আবেদীন বলেন, ‘তামিম তিন ফরম্যাটে আমাদের সেরা ক্রিকেটারদের একজন। কিন্তু ও নিজে থেকেই সরে দাঁড়িয়েছে, আমরা যথেষ্ট আত্মবিশ্বাসী ছিল যে ওকে পাব। ওকে না পাওয়াটা সত্যিই দুর্ভাগ্য। তামিমকে দল ও আমরাও মিস করব।’

তামিমের মতো ওপেনার দলে থাকা মানেই, অনেক বড় স্বস্তি! কিন্তু তামিম নিজে থেকে খেলতে না চাইলে তো আর কিছু করার নেই। তবে এটাও ঠিক, যে তরুণরা টানা তিন সিরিজে জয় এনে দিয়েছেন তাদের ওপর আস্থা রাখাও জরুরি।

প্রধান নির্বাচকের ভাষ্য, ‘বাকি ওপেনাররা, যারা সুযোগ পেয়েছেন, তারা একটা প্রক্রিয়ার মধ্যে আছেন। তাদের অবশ্যই সামর্থ্য আছে ভালো খেলার এবং বিশ্বকাপে এই ওপেনারদের ওপর আমরাও যথেষ্ট আত্মবিশ্বাসী যে ওরা ভালো করবে।’

তিনে সাকিব আল হাসানই সেরা। বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার রয়েছেন ফর্মের তুঙ্গে। সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে সিরিজ সেরা ক্রিকেটার হয়েছেন। ফিরে পেয়েছেন টি-২০তে বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারের মুকুটও। এছাড়া টি-২০ বোলিংয়ে সেরা দশে এসেছেন। জুলাইয়ে আইসিসি ‘প্লেয়ার অব দ্য মান্থ’ পুরস্কারও জিতেছেন।

ফর্মের তুঙ্গে আছেন মুশফিকুর রহিমও। তবে সম্প্রতি উইকেটকিপিং নিয়ে ঝামেলার কারণে মনক্ষুণ্ণ হয়েছেন মিস্টার ডিপেন্ডেবল। সে কারণেই কিনা অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে সেরা মুশফিককে দেখা যায়নি।

ক্যাপ্টেন হিসেবে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ তো দেখিয়ে দিচ্ছেন। টানা তিন সিরিজ জেতায় বিশ্বকাপেও তার কাঁধেই বিশ্বকাপের দায়িত্ব দিয়েছে বাংলাদেশ।

এখন অভিজ্ঞদের পাশাপাশি তারুণ্যেও নির্ভরতা বেড়ে গেছে। আফিফ হোসেন, নুরুল হাসান সোহানরা আস্থার প্রতিদান দিচ্ছেন। যুব বিশ্বকাপজয়ী দলের দুই সদস্য শামিম হোসেন এবং শরিফুল ইসলামও পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন।

তবে বাংলাদেশের সবচেয়ে প্রাপ্তি কাটার মুস্তাফিজুর রহমানের সুপার ফর্মে ফেরা। অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে দুই সিরিজেই বল হাতে আতঙ্ক ছড়িয়েছেন। স্পিনে নতুন ভয়ংকররূপ নিয়ে হাজির নাসুম আহমেদ।

দলে কোনো চমক না থাকলেও তারুণ্য ও অভিজ্ঞতায় মিলিয়ে বিশ্বকাপের জন্য বাংলাদেশ যে ১৫ সদস্যের ক্যারিশম্যাটিক এক স্কোয়াড ঘোষণা করেছেন তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

একদিন আগে বিশ্বকাপ দল ঘোষণা করেছে শিরোপা প্রত্যাশী ভারত। তাদের দলে ‘মেন্টর’ হিসেবে রাখা হয়েছে টি-২০ বিশ্বকাপ জয়ী অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনিকে। বাংলাদেশের এমন ব্যালান্স দলকে আরও সুসংগঠিত করতে ‘দেশসেরা অধিনায়ক’ মাশরাফি বিন মর্তুজাকে যদি ‘মেন্টর’ করা যেত, মন্দ হতো কি!

সর্বশেষ খবর