বৃহস্পতিবার, ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

সৌম্যকে দলে রাখার নেপথ্যে...

মেজবাহ্-উল-হক

সৌম্যকে দলে রাখার নেপথ্যে...

৪, ১৬, ৮, ২, ০ ও ২ -এই সংখ্যা ছয়টি হচ্ছে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে খেলা বাংলাদেশের ওপেনার সৌম্য সরকারের টি-২০ ক্যারিয়ারের শেষ ছয়টি ইনিংস!

-এমন ব্যর্থতার পরও টি-২০ বিশ্বকাপের ১৫ জনের স্কোয়াডে কীভাবে জায়গা পেলেন সৌম্য সরকার? বাংলাদেশের বিশ্বকাপ স্কোয়াড ঘোষণার পরই এমন প্রশ্ন দেখা গেছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। তাহলে কি সৌম্যকে দলে রেখে টিম ম্যানেজমেন্ট কোনো ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছে! -এখনো অনেকেই সৌম্যকে স্কোয়াডে রাখার নেপথ্যের রহস্য খুঁজে বেড়াচ্ছেন!

চলুন, পরিসংখ্যান ও পারফরম্যান্সের আলোয় রহস্য উদঘাটনের চেষ্টা করি!

একটা বিষয় তো সবারই জানা, ঘরের মাঠে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে খেলা সিরিজের উইকেট ছিল ব্যাটসম্যানদের জন্য মৃত্যুকূপ! এমন উইকেটে ব্যাটসম্যানদের পারফরম্যান্স দেখে তাকে যথাযথ মূল্যায়ন করা কঠিন বলে মনে করেন ক্রিকেট বিশ্লেষকরা।

তাহলে ঘরের মাঠে অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে দুই সিরিজে খেলা ছয় ম্যাচের আগে কেমন ছিল সৌম্যর পারফরম্যান্স? পরিসংখ্যান দেখলেই অনেকটা পরিষ্কার হয়ে যায়!

এই দুই সিরিজের আগে খেলা ১০ ম্যাচে সৌম্যর গড় রান প্রায় ৪১। চারটি হাফ সেঞ্চুরি। যা টি-২০র মতো সংক্ষিপ্ত ফরম্যাটে বাংলাদেশের যে কোনো ব্যাটসম্যানের জন্য ঈর্ষণীয়। ইনিংসগুলো হচ্ছে- ৬৮, ৮, ৫০, ১০, ৫১, ৫, ২০*, ৬২*, ৫* ও ৭ রান। আর এই ১০টি ইনিংসের ৮টিই আবার দেশের বাইরে। তিনটি ইনিংস নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে তাদের মাটিতে, যেখানে বিদেশি যেকোনো ক্রিকেটারের জন্য রান করা দুরূহ ব্যাপার। দুটি ইনিংস পাকিস্তানের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের মাটিতে। বিদেশের মাটিতে সব শেষ তিন ইনিংস জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে।

বাংলাদেশ জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে টি-২০ সিরিজ জিতেছে সৌম্যর ক্যারিশম্যাটিক ব্যাটিংয়ে। তিন ম্যাচের মধ্যে দুটি হাফ সেঞ্চুরি। ওই সিরিজে ৭ ওভার বোলিং করে তিনটি উইকেটও নিয়েছেন। অলরাউন্ড পারফরম্যান্সের জন্য জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে সিরিজ সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার জিতেছেন সৌম্য।

ঘরের মাঠে অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে সৌম্য রান না পেলেও বিশ্বকাপে তিনি অপরিহার্য ক্রিকেটার বলে মনে করেন বাংলাদেশ দলের সাবেক অধিনায়ক ও ক্রিকেট বিশ্লেষক রকিবুল হাসান, ‘এটা সত্যি যে, সৌম্যর ফুটওয়ার্কে একটুখানি সমস্যা আছে। তবে বিশ্বকাপ যেমন উইকেটে খেলা হবে সেখানে সৌম্যকে খুবই দরকার। ওই উইকেট হবে স্পোর্টিং। সেখানে বল একটু বাউন্স করবে, ব্যাটেও আসবে। আমিরাতের কন্ডিশন সৌম্য-লিটনের মতো ক্রিকেটারদের জন্য হবে আদর্শ।’

রকিবুল বলেন, ‘একজন ক্রিকেটার সব সময় ভালো ফর্মে থাকবেন এমন নয়। ক্রিকেটে পারফরম্যান্সে উত্থান-পতন খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার। একটি দুটি সিরিজে খারাপ করলেই সব শেষ হয়ে যায় না। হয়তো বিশ্বকাপেই অন্য সৌম্যকে দেখা যেতে পারে!’

কিন্তু বাংলাদেশের ক্রিকেট সমর্থকদের একটা বড় অংশই তো সৌম্যর স্কোয়াডে থাকা নিয়ে সমালোচনা করছেন। তার বিশ্বকাপ স্কোয়াডে সুযোগ পাওয়া নিয়ে ট্রল করা হয়েছে বা হচ্ছে।-এ প্রসঙ্গে রকিবুল বলেন, ‘মনে হয়, বাংলাদেশের ১৭ কোটি মানুষ নির্বাচক! তাদের পছন্দ না হলেই ট্রল করেন। এটা নতুন কিছু নয়। নির্বাচকদের এসব দেখে সিদ্ধান্ত নিলে চলে না। তারা দলের ভালোর কথা চিন্তা করেই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। সৌম্যকে রেখেছেন।’

তামিম ইকবালের মতো ড্যাসিং ওপেনার টি-২০ বিশ্বকাপ থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছেন-যা ছিল টাইগারদের জন্য বড় ধাক্কা। মোহাম্মদ নাঈম ও লিটন দাসের মতো মারকুটে ওপেনার দলে থাকলেও তামিমের অভাব পূরণ করা কঠিন। তবে বিশ্বকাপে এই ধাক্কা সামাল দিতে ট্রলের শিকার হওয়া সৌম্যই হতে পারেন কোচ রাসেল ডমিঙ্গোর প্রথম পছন্দ।

সর্বশেষ খবর