শনিবার, ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

তারুণ্যে জ্বলছে সম্ভাবনার মশাল

মেজবাহ্-উল-হক

তারুণ্যে জ্বলছে সম্ভাবনার মশাল

বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটারদের মনোজগতে একটা প্রচন্ড ঝাঁকুনি দিয়েছে ২০২০ সালের ‘যুব বিশ্বকাপ’। টাইগার যুবারা বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন নিজেদের সামর্থ্য। বড়দের চোখে আঙুল দিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছেন, ‘আমরা বিশ্বজয় করেছি এবার তোমাদের পালা!’

একটি বিশ্বকাপ ট্রফি জিততে বাংলাদেশ দলের আরও কত সময় লাগবে? হোক না সেটা ওয়ানডে কিংবা টি-২০!

যদিও বাংলাদেশ ওয়ানডেতে যতটা ধারাবাহিক, ততটা নয় টি-২০তে।

সামনেই টি-২০ বিশ্বকাপ। সংক্ষিপ্ত ফরম্যাটের ক্রিকেটের সপ্তম আসর। বাংলাদেশ টি-২০ বিশ্বকাপের প্রতি আসরে অংশ নিলেও এখনো টি-২০তে বিশ্বমানের দল হয়েই উঠতে পারেনি! সে কারণে সামনের আসরে সরাসরি দ্বিতীয় রাউন্ডে (সুপার-টুয়েলভ) খেলার সুযোগ হচ্ছে না। আশার কথা, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে র‌্যাঙ্কিংয়ে ৮-এর মধ্যে থাকতে ব্যর্থ হলেও এখন র‌্যাঙ্কিংয়ে ৬-এ বাংলাদেশ। টাইগারদের নিচে আছে অস্ট্রেলিয়া, বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ওয়েস্ট ইন্ডিজের মতো দলও। টানা তিন সিরিজ জিতেই লাল-সবুজের এ উন্নতি।

সম্প্রতি জয়লাভ করা তিন সিরিজে দারুণ পারফর্ম করেছেন তরুণ ক্রিকেটাররা। সিনিয়রদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে তারাও দলের জয়ে রেখেছেন গুরুত্বপূর্ণ অবদান।

কিছুদিন আগেও বাংলাদেশ দল ছিল কেবলই সিনিয়র ক্রিকেটারদের ওপর নির্ভরশীল। সিরিয়ররা ভালো করলে জয় আসে, না হলে না। তরুণরা দলে থাকলেও তারা যেন নিজেদের ‘শিক্ষানবিশ’ হিসেবেই মনে করেছেন। কিন্তু এখন চিত্র পাল্টে গেছে। তরুণরা ধীরে ধীরে দায়িত্ব নিতে শিখেছেন।

ঘরের মাঠে সবশেষ সিরিজে নিউজিল্যান্ডবধের মিশনে ক্যারিশমা দেখিয়েছেন তরুণ তুর্কি নাসুম আহমেদ। তার ঘূর্ণি জাদুতে দিশাহারা ব্ল্যাক ক্যাপসরা। দুর্দান্ত বোলিংয়ে তিনি সিরিজ-সেরা ক্রিকেটারের পুরস্কার জিতেছেন। নিউজিল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়া সিরিজ মিলে ১৬ উইকেট নিয়েছেন নাসুম।

অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে সিরিজে সাকিব আল হাসান ব্যাটে-বলে ক্যারিশমা দেখালেও তরুণ তারকা আফিফ হোসেনের ব্যাটিং ছিল চোখে পড়ার মতো। লোয়ার অর্ডারে কম বল খেলে দ্রুত রান তুলতে পারেন তিনি। অসিদের কাছে তো আফিফ ছিলেন ‘ডেঞ্জারম্যান’।

জিম্বাবুয়ে সিরিজে ব্যাটে-বলে চমক দেখিয়ে সিরিজ-সেরা হয়েছিলেন সৌম্য। সে সিরিজেও তরুণদের ছোট ছোট কিছু ইনিংস আশার আলো দেখিয়েছে। ওই সিরিজের শেষ ম্যাচে প্রায় হেরেই গিয়েছিল বাংলাদেশ। কিন্তু ৬ নম্বরে ব্যাট করতে নেমে শামিম হোসেন মাত্র ১৫ বলে ৩১ রানের ইনিংস খেলে দলকে উদ্ধার করেন। যুব বিশ্বকাপজয়ী দলের ক্রিকেটার শামিমের ব্যাটিংস্টাইল দেখে মনেই হয়নি মাত্র এক ম্যাচ আগেই তার অভিষেক হয়েছে জাতীয় দলে।

যুব বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন দলের আরেক সদস্য পেসার শরিফুল তো এখন জাতীয় দলের খুবই পরিচিত মুখ। তিন টি-২০ সিরিজে তিনি আট ম্যাচ খেলেছেন, নিয়েছেন ১৫ উইকেট। বল হাতে তিনি আস্থার মূর্ত প্রতীক হয়ে যাচ্ছেন দিন দিন।

সাম্প্রতিক সিরিজে বাংলাদেশ দলের অনেক বড় প্রাপ্তি উইকেটরক্ষক নুরুল হাসান সোহান। উইকেটের পেছনে যেমন তিনি কৌশলী, তেমনি লোয়ার অর্ডারে দ্রুত রান তোলার ক্ষেত্রেও তার জুড়ি নেই। নিজের প্রত্যাবর্তনটা বেশ আলোচিতই করেছেন এই ক্রিকেটার।

দলে আস্থা তৈরি করতে সমর্থ হয়েছেন শেখ মেহেদী হাসান। ব্যাটিংয়ে যে কোনো পজিশনেই তিনি ফিট। স্পিন বোলিংয়েও দুর্দান্ত। দলের প্রয়োজনে খুবই কার্যকর এক অলরাউন্ডার।

ওপেনিংয়ে ধীরে ধীরে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করছেন মোহাম্মদ নাঈম শেখ। যদিও ডট দেওয়া একটা রোগে পরিণত হয়েছে তার। তবে এক প্রান্ত আগলে রেখে ব্যাটিং করায় বেশ পারদর্শী।

আফিফ হোসেন, নুরুল হাসান সোহান, শেখ মেহেদী হাসান, নাসুম আহমেদ, শরিফুল ইসলাম, শামিম আহমেদ, মোহাম্মদ নাঈম শেখের মতো তরুণ তুর্কিরা দলে আসায় সব বড় পরিবর্তন এসেছে মানসিকতায়। প্রতিপক্ষ যত শক্তিশীলই হোক না কেন এখন জয়ের আগ্রাসী ভাব নিয়েই মাঠে খেলতে নামে বাংলাদেশ। অভিজ্ঞদের সঙ্গে এমন একঝাঁক তরুণ ক্রিকেটার আছে যে দলে তাদের বিশ্বকাপ জয়ের চিন্তা করাটা খুবই বাড়াবাড়ি? মোটেও না!

সামনের টি-২০ বিশ্বকাপে তারুণ্যই বাংলাদেশের প্রধান শক্তি। তারুণ্যই মনোবল। এ তারুণ্যেই জ্বলছে সম্ভানার মশাল।

সর্বশেষ খবর