মঙ্গলবার, ৫ অক্টোবর, ২০২১ ০০:০০ টা

জামালদের রুদ্ধশ্বাস লড়াই

রাশেদুর রহমান

জামালদের রুদ্ধশ্বাস লড়াই

প্রতিপক্ষ ভারত। বাড়তি উত্তেজনা তো থাকবেই। ফুটবল হোক কিংবা ক্রিকেট যে কোনো খেলাতেই বাংলাদেশ-ভারত দ্বৈরথ বেশ উত্তেজনা ছড়ায়। সমর্থকদের উন্মাদনা ছড়িয়ে পড়ে ফুটবলারদের মধ্যেও। স্টেডিয়ামের সবুজ উঠোনে মনে হয় দুটি যুদ্ধংদেহী সৈন্য দল লড়াই করছে। যুদ্ধের ময়দানের চেয়ে এখানে পার্থক্য কেবল অস্ত্রে আর ফুটবলে। গতকাল মালদ্বীপের রাজধানী মালের ন্যাশনাল স্টেডিয়ামেও তেমনই উত্তেজনা ছড়াল বাংলাদেশ-ভারত ম্যাচ। সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচেও সমর্থকদের মন জয় করলেন জামাল ভূঁইয়ারা। প্রায় ৪১ মিনিট ১০ জনের দল নিয়ে খেলে পিছিয়ে থেকেও ড্র নিয়ে মাঠ ছাড়লেন। ইয়াসিন আরাফাতের সমতাসূচক গোলটাকে কয়েক হাজার সমর্থক এমন উচ্ছ¡ সে ভাসিয়ে রাখল দীর্ঘসময়। প্রতিপক্ষের কাছে মালদ্বীপের মাঠকে বাংলাদেশের ঘরের মাঠ মনে হলেও অবাক হওয়ার কিছু ছিল না। ম্যাচজুড়েই হাজারও বাংলাদেশি সমর্থক ভারতীয় ফুটবলারদের জন্য ছিল মাথাব্যথার বড় কারণ।

ভারতের বিপক্ষে দীর্ঘ ১৮ বছরের জয়খরা ঘুচানোর লক্ষ্যে  খেলতে নেমেছিল বাংলাদেশ। জয় এবারেও অধরাই রয়ে গেল। কিন্তু ভারতের বিপক্ষে দৃষ্টিনন্দন ফুটবল খেলে সবার মন জয় করল অস্কার ব্রুজোনের শিষ্যরা। গতকাল বাংলাদেশ ১-১ গোলে রুখে দিয়েছে ভারতকে। প্রথম দুই ম্যাচে চার পয়েন্ট সংগ্রহ করে বাংলাদেশের লক্ষ্য এবার ফাইনাল। আর একটা ম্যাচ জিতলেই দীর্ঘ ১৬ বছর পর সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনাল খেলার যোগ্যতা অর্জন করতে পারে বাংলাদেশ। অবশ্য পুরোপুরি নিশ্চিত হতে হলে পরের দুই ম্যাচেও জয় প্রয়োজন বাংলাদেশের। সাফ মিশনের দিন কয়েক আগে হঠাৎ করে দায়িত্ব পাওয়া কোচ অস্কারের মুখে এখন বিস্তৃত হাসি। তার দৃষ্টি সরাসরি ফাইনালে। গতকাল ম্যাচের পর তিনি বলেন, ‘আমরা এবার ফাইনাল খেলতে চাই।’ আর ফাইনালে খেললে! সেখানে তো যে কোনো ঘটনাই ঘটতে পারে। বাংলাদেশ ২০০৩ সালের পর আর সাফ চ্যাম্পিয়ন জেতেনি। ২০০৫ সালের পর আর এ টুর্নামেন্টের ফাইনালেও খেলতে পারেনি। দীর্ঘদিনের আক্ষেপ কী তবে অস্কার ব্রুজোনের হাত ধরেই ঘুচবে বাংলাদেশের!

গতকাল ভারতের বিপক্ষে দারুণ এক কৌশল ঠিক করেছিলেন স্প্যানিশ কোচ অস্কার। মাঝ মাঠের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে আক্রমণাত্মক ফুটবল। রক্ষণাত্মক ফুটবল খেলার ধারা থেকে বেরিয়ে এসে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের প্রথম ম্যাচে লঙ্কানদের বিপক্ষে সফল হয়েছিল লাল-সবুজ জার্সিধারীরা। একই কৌশলে ভারতকেও কুপোকাত করার আশা করেছিলেন অস্কার। সেই লক্ষ্যে জানকবুল শপথ নিয়েই ময়দানে নেমে আসেন জামাল ভূঁইয়ারা। ম্যাচের শুরুতে সুনীল ছেত্রীর গোলে পিছিয়ে পড়লেও বাংলাদেশের খেলার মধ্যে ‘স্পিরিট অব ফুটবল’ কম ছিল না। ভারতীয় রক্ষণভাগে বেশ কয়েকবারই ভয়াবহ ফাটল তৈরি করেন জামালরা। অবশ্য আগের ম্যাচের মতো এবারেও বাংলাদেশের স্কোরারের অভাব পূরণ করেন একজন ডিফেন্ডার। ইয়াসিন আরাফাত ৭৪তম মিনিটে গোল করলে গ্যালারিতে থাকা প্রবাসী বাংলাদেশিরা গলা ফাটানো চিৎকারে চারপাশ কাঁপিয়ে তোলেন। ৫৪তম মিনিটে বিশ্বনাথ ঘোষের লাল কার্ড দেখার পর দর্শকদের মধ্যে যে হতাশা ছিল তা মুহূর্তেই উড়ে যায়।

বাংলাদেশ-ভারত ফুটবল ম্যাচে পরিসংখ্যান বিচার করলে ভারত এগিয়ে। কিন্তু খেলার ধরন আর আধিপত্যের কথা চিন্তা করলে বাংলাদেশের ফুটবলকেও পিছিয়ে রাখার উপায় নেই। ভারতের ১২টি আক্রমণের বিপরীতে বাংলাদেশ আক্রমণ করেছে ৭ বার। ভারত ৮ বার অন টার্গেট শট নিয়েও বাংলাদেশের ডিফেন্ডারদের দক্ষতা আর আনিসুর রহমান জিকোর দৃঢ়তায় গোল করেছে কেবল একটি। অন্যদিকে দুটি অন টার্গেট শট নিয়েই একটি গোলে পরিণত করেছে বাংলাদেশ। সুনীল ছেত্রীদের কোচ ইগর স্টিমাচ বড় গলায় বলেছিলেন, শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করতেই সাফ চ্যাম্পিয়ন খেলতে এসেছে ভারত। সে লক্ষ্যে পূর্ণ শক্তির দল নিয়েই এসেছিলেন তিনি। তবে বাংলাদেশ গতকাল বুঝিয়ে দিল, কারও চেয়ে কম নয় লাল-সবুজের জার্সিধারীরা।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর