রবিবার, ১০ অক্টোবর, ২০২১ ০০:০০ টা

জামালদের খেলা দেখে মালদ্বীপও অবাক

জামালদের খেলা দেখে মালদ্বীপও অবাক

সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে প্রথম দুই ম্যাচে চার পয়েন্ট সংগ্রহ করে দারুণ সম্ভাবনা জাগিয়েছিল অস্কার ব্রুজোনের দল। কিন্তু তৃতীয় ম্যাচেই স্বাগতিক দল মালদ্বীপের কাছে ২-০ গোলে হেরে যান জামাল ভূঁইয়ারা। একটি পরাজয়েই সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনাল খেলার স্বপ্ন ফিকে হয়ে গেল। সামনের ম্যাচে নেপালের বিপক্ষে জিতে আশা বাঁচিয়ে রাখতে চায় বাংলাদেশ। কোচ অস্কার ব্রুজোন নেপালের বিপক্ষে জয় ছাড়া কিছু ভাবছেন না। ফুটবলারদের মধ্যেও ছড়িয়ে পড়ছে নেপাল ম্যাচ জয়ের আত্মবিশ্বাস। কিন্তু মালদ্বীপের কাছে হারতে হলো কেন? টানা ম্যাচ খেলার ক্লান্তিকে দায়ী করছেন অনেকেই। ক্লান্তিই কী একমাত্র কারণ? ৭২ ঘণ্টা পর পর ম্যাচ খেলার ঘটনা তো কম নেই ফুটবলে।

মালদ্বীপ জাতীয় দলের কোচ আলি সুজেইন বাংলাদেশের ফুটবলের গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয় সামনে নিয়ে এলেন। সহজ-সরল এক প্রশ্ন তুললেন তিনি, ‘তোমাদের তো মানুষের অভাব নেই। ইচ্ছে করলেই অনেক ভালো মানের ফুটবলার তুলে আনা সম্ভব। এত বড় দেশ থেকে ভালো ফুটবলার আসবে না, তা কী করে হয়!’ বিস্মিত সুজেইন পাশাপাশি নিজেদের (মালদ্বীপের) সফলতার কারণও তুলে ধরলেন। ‘আমাদের এখানে আগে মালে শহরকেন্দ্রিক ছিল ফুটবল। বেশিরভাগ ফুটবলার এই শহর থেকেই জাতীয় দলে খেলত। এই পরিস্থিতি বদলে যায় ২০০৮ সালে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ জয়ের পর। সারা দেশ থেকেই আমরা ভালো মানের ফুটবলার পেতে থাকি। ২০১৮ সালের সাফজয়ী দলে বেশিরভাগ ফুটবলারই ছিল রাজধানীর বাইরে থেকে আসা।’ এর কারণ কী? কীভাবে ভালোমানের ফুটবলাররা উঠে এলো বিভিন্ন অঞ্চল থেকে? আলি সুজেইনের সহজ জবাব, ‘আমাদের স্কাউটিংটা খুব ভালো ছিল। ফুটবলারের সন্ধানে আমরা দেশের সবখানে ছুটে গিয়েছি।’ গত বছরের হিসেব অনুযায়ী মালদ্বীপের জনসংখ্যা সাড়ে ৫ লাখের মতো। এত অল্পসংখ্যক জনগণ থেকেই দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের অন্যতম সেরা ফুটবল দল গঠন করছে মালদ্বীপ। কোটি কোটি জনগণ থেকেও কেন তা পারছে না বাংলাদেশ? আলি সুজেইন বললেন, ‘তোমাদের স্কাউটিং বাড়াতে হবে। ফুটবলার নিশ্চয়ই আছে। তাদেরকে খুঁজে বের করে পোলিশ করতে হবে।’

বাংলাদেশ জনসংখ্যার দিক দিয়ে পৃথিবীর আট নম্বর দেশ। এত বিশাল সংখ্যার মানুষ নিয়েও কেন পিছিয়ে থাকবে ফুটবল? মালদ্বীপের কাছে কেন হারতে হবে বছরের পর বছর ধরে? বাংলাদেশে অবকাঠামো কম নয়। বেশ কয়েকটি ক্লাবেরই নিজস্ব অবকাঠামো আছে। অন্যদিকে মালদ্বীপে অবকাঠামোর বড় অভাব। তাদের ক্লাবগুলো দুই/তিনটি মাঠ ভাগ করে নিয়ে অনুশীলন করে বছরের পর বছর। এর মধ্যে একাডেমির কার্যক্রমও পরিচালনা করছে তারা। ১৬টি একাডেমি ফুটবলার তৈরির চেষ্টা করছে। এই সংখ্যা নাকি শিগগিরই ৪০টিতে উত্তীর্ণ হবে! আর বাংলাদেশ মাত্র এলিট একাডেমির কাজ শুরু করেছে। কিন্তু এই একাডেমির লক্ষ্যটাও ঠিক বুঝা যাচ্ছে না।

এক সময় বাংলাদেশ মালদ্বীপের জালে হালির হিসেবে গোল দিত। একবার তো দুই হালিও দিয়েছিল। সে সময়ের কথা মনে পড়ে মালদ্বীপ জাতীয় দলের বর্তমান কোচের। তিনি বলেন, ‘তোমাদের দলে কায়সার হামিদ আর সাব্বিরদের মতো ফুটবলারকে খেলতে দেখেছি আমি। কী অসাধারণ ফুটবলার ছিলেন তারা।’ এমন ফুটবলার হয়তো বছরে বছরে আসবে না। কিন্তু ভালোমানের ফুটবলার পাওয়া অসম্ভব নয়। কোটি কোটি জনতার মধ্যে ঠিকভাবে খুঁজতে হবে। ৪ লাখেরও কম জনসংখ্যার দেশ আইসল্যান্ড। তারাও বিশ্বকাপ খেলেছে ইউরোপের মতো কঠিন এক অঞ্চল থেকে বাছাইপর্ব উত্তীর্ণ হয়ে। বাংলাদেশ কেন পারবে না?

সর্বশেষ খবর