শুক্রবার, ২২ অক্টোবর, ২০২১ ০০:০০ টা

আমরা মানুষ, আমরাও ভুল করি

আমরা মানুষ, আমরাও ভুল করি

দলের প্রয়োজনে ব্যাট হাতে জ্বলে ওঠেন অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। টি-২০ বিশ্বকাপে গতকাল পাপুয়া নিউ গিনির বিপক্ষে ২৮ বলে ৫০ রানের ঝকঝকে ইনিংস খেলেন টাইগার অধিনায়ক

ম্যাচ শেষ হওয়ার পর পরই সংবাদ সম্মেলনে আসেন বাংলাদেশের অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। মুখে হাসি  নেই। স্বভাববিরুদ্ধভাবে দুই চোয়াল শক্ত করে বসেন। টাইগার ক্যাপ্টেনের মুখের দিকে তাকালে বোঝার উপায়  নেই একটু আগেই মাঠে তিনি যে দলটিকে নেতৃত্ব দিয়েছেন সে দলটি ৮৪ রানের বিশাল এক জয়  পেয়েছে। তার ক্যাপ্টেন্স নক এবং সাকিবের অলরাউন্ড পারফরম্যান্স এবং অন্যদের সার্বিক সহযোগিতায় প্রথম রাউন্ডের শেষ ম্যাচে পাপুয়া নিউগিনিকে উড়িয়ে দিয়ে বিশ্বকাপের পরের রাউন্ড নিশ্চিত করেছে বাংলাদেশ।

এমন খুশির লগনে কি হয়েছে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের? প্রশ্নটা শুনেই আক্ষেপে ফেটে পড়েন টাইগার ক্যাপ্টেন। মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ বলেন, ‘আমরাও মানুষ, আমাদেরও ভুল হয়।’

স্কটল্যান্ডের বিরুদ্ধে বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে পরাজয়ের পর বাংলাদেশ দলকে নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যাচ্ছেতাই মন্তব্য করেন অনেক ক্রিকেটভক্ত। মিডিয়ার কাছে কঠোর সমালোচনা করেন স্বয়ং বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের অভিভাবক নাজমুল হাসান পাপন।

মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ মনে করেন, ভালো খেললে যেমন প্রশংসা হবে তেমনি খারাপ খেললে সমালোচনাও হতে পারে। তাই বলে এমন সমালোচনা হওয়া উচিত নয়, যাতে ক্রিকেটারদের একদম ছোট করে ফেলা হয়। মাহমুদুল্লাহ বলেন, ‘এটা আমাদের দেশ, আমরা সবাই এক সঙ্গে যখন খেলি পুরো দেশ এক সঙ্গে খেলি। আমরা যে গোটা দেশের প্রতিনিধিত্ব করছি, এটা আমাদের মাথায় থাকে। আমাদের থেকে ফিলিংস কারও  বেশি না-আমার মনে হয়। সমালোচনা অবশ্যই হবে কারণ খারাপ খেলেছি। কিন্তু একেবারে ছোট করে ফেলা ঠিক না। এটা আমাদের সবারই খারাপ লেগেছে।’

টাইগার ক্যাপ্টেন বলেন, ‘আমরাও মানুষ, আমাদের অনুভূতি কাজ করে। আমাদের পরিবার আছে। সবারই পরিবার আছে। আমাদের বাবা-মায়েরা বসে থাকে টিভি  সেটের সামনে, সন্তানরা বসে থাকে। তারা মন খারাপ করে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম তো এখন হাতের নাগালে, সবারই মোবাইল আছে। সমালোচনা তো হবেই। আমরাও আশা করি সমালোচনা। খারাপ খেলে  হেরেছি সমালোচনা তো হবেই। কেন হবে না? কিন্তু সমালোচনার মাধ্যমে যখন কেউ কাউকে ছোট করে  ফেলে তখন ওগুলো খুব খারাপ লাগে।’

গতকাল সংবাদ সম্মেলনে মাহমুদুল্লাহ কথাগুলো যখন বলছিলেন তার চোখে জল ছলছল করছিল। মনে হচ্ছিল যেন কেঁদে ফেলবেন। আগে কখনোই সংবাদ সম্মেলনে মাহমুদুল্লাহকে এমন আবেগী মনে হয়নি।

প্রথম ম্যাচে হারার পর তিন সিনিয়র সাকিব, মুশফিক এবং মাহমুদুল্লাহর ব্যাটিং অ্যাপ্রোচ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। কাল ক্যাপ্টেন নিজে ক্যারিশম্যাটিক একটি হাফ সেঞ্চুরি করলেন। ব্যাটে-বলে দাপট দেখালেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানও। সেই প্রসঙ্গটি নিয়ে অভিমানী কণ্ঠে মাহমুদুল্লাহ বলেন, ‘অনেক প্রশ্ন এসেছে আমাদের স্ট্রাইকরেট, আমাদের তিনজন সিনিয়র ক্রিকেটারের স্ট্রাইকরেট নিয়ে। আমরা তো চেষ্টা করেছি। চেষ্টার বাইরে তো আমাদের কাছে কিছু নেই। এমন না যে আমরা চেষ্টা করিনি। আপ্রাণ চেষ্টা করেছি। হয়তোবা রেজাল্ট আমাদের পক্ষে আনতে পারেনি। সমালোচনা পাওয়া অবশ্যই আমাদের কাম্য, সমালোচনা হবেই। কিন্তু সেই সমালোচনাটা যদি আরেকটু স্বাস্থ্যকর, সেটা সবার জন্যই ভালো।’

এক ম্যাচ হারেই অনেকে দলের প্রতি ক্রিকেটারদের কমিটমেন্ট নিয়েও আলোচনা-সমালোচনা করেছেন। সে বিষয়ে মাহমুদুল্লাহ বলেন, ‘বাংলাদেশের জার্সিটা যখন গায়ে জড়াই আমাদেরও অনুভূতি হয়। দেশের জন্য সবই থাকে। ব্যথা থাকে, কারো অনেক ধরনের ইনজুরি থাকে। আমরা ওগুলো নিয়েই খেলি। দিনের পর দিন ব্যথানাশক ওষুধ খেয়েও খেলি। ভিতরের খবর অনেকেই জানে না। তো আমার মনে হয় এগুলো নিয়ে কমেন্ট করা ঠিক না।’

পাপুয়া নিউগিনির বিরুদ্ধে দুরন্ত জয়ের পর অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ সমালোচনার জন্য আবেগপ্রবণ পড়লেও বাংলাদেশের পরের রাউন্ড নিয়ে তিনি ব্যাপক আশাবাদী। তিনি বলেন, ‘টি-২০ ক্রিকেটে ছোট দল বড় দল নেই। এই ফরম্যাটে উত্থান-পতন থাকবে। তবে আমরা প্রতিপক্ষ নিয়ে ভাবি না। প্রথম ম্যাচে হারার পরও আমরা আত্মবিশ্বাস হারাইনি। সামনেও লক্ষ্য একটাই থাকবে জয়!’

 

স্কোর কার্ড

বাংলাদেশ : ১৮১/৭, ২০ ওভার ( লিটন দাস ২৯, সাকিব আল হাসান ৪৬, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ৫০, আফিফ হোসেন ধ্রুব ২১, মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন ১৯। কাবুয়া মোরেয়া ২/২৬, আসাদ ভালা ২/২৬)।

পাপুয়া নিউগিনি : ৯৭/১০, ১৯.৩ ওভার ( কিপলিন ডরিগা ৪৬, শাদ সোপার ১১। মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন ২/২১, তাসকিন আহমেদ ২/১২, সাকিব আল হাসান ৪/৯, মেহেদী হাসান ১/২০)।

 ফল : বাংলাদেশ ৮৪ রানে জয়ী।

ওমান : ১২২/১০, ২০ ওভার (আকিব ইলিয়াস ৩৭, জিসান মাকসুদ ৩৪, মোহাম্মদ নাদিম ২৫। জজ ডেভি ৩/২৫, মিচেল লিস্ক ২/১৩)।

স্কটল্যান্ড : ১২৩/২, ১৭ ওভার (কাইল কোয়ের্টজার ৪১, রিচার্ড বেরিংটন ৩১, ম্যাথু ক্রস ২৬। ফায়াজ বার্ট ১/২৬, খাউয়ার আলি ১/২৭)।

ফল : স্কটল্যান্ড ৮ উইকেটে জয়ী।

শ্রীলঙ্কা : ১৭১/৭, ২০ ওভার (নিশানকা ৬১, হাসারাঙ্গা ৭১, শানাকা ২১*। স্টার্লিং ১/৪, লিটল ৪/২৩, অ্যাডায়ার ৪/৩৫)।

আয়ারল্যান্ড : ১০১/১০, ১৮.৩ ওভার (বালবার্নি ৪১, ক্যাম্পার ২৪। চামিকা ৩/২৭, থিকশানা ৩/১৭, কুমারা ২/২২, হাসারাঙ্গা ১/১২)।

ফল : শ্রীলঙ্কা ৭০ রানে জয়ী।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর