সোমবার, ১ নভেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

যাদের কাঁধে দায়িত্ব, কী করছেন তারা

যাদের কাঁধে দায়িত্ব, কী করছেন তারা

সুপার ফর্মে থাকা তিন সিনিয়র ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ও মুশফিকুর রহিমের ওপর ভরসা করেই এবারের টি-২০ বিশ্বকাপে স্বপ্ন দেখছিল বাংলাদেশ। সমর্থকদের আশা ছিল, প্রথমবারের মতো সেমিফাইনালে খেলবে তাদের প্রিয় দল। কিন্তু সে আশায় এখন গুড়েবালি।  প্রথম তিন ম্যাচে হেরে বিশ্বকাপে সবার আগে টাইগাররা শুনতে পাচ্ছেন বিউগলের করুণ সুর। যাদের কাঁধে ছিল দায়িত্ব কী করছেন তারা? দেখা যাক, প্রথম তিন ম্যাচে তিন সিনিয়রের আমলনামা...।

 

সাকিব আল হাসান

এই সংযুক্ত আরব আমিরাতে বাংলাদেশের স্বপ্নের ফানুসটা উড়ছিল সাকিব আল হাসানের মতো একজন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার দলে ছিল বলেই। তা ছাড়া এবার দারুণ একটা দল নিয়ে আমিরাতে এসেছে বাংলাদেশ। পারফরম্যান্সে সাকিব সামনে থেকে দিক নির্দেশনা দেবেন অন্যরা তাকে দারুণভাবে সহযোগিতা করবেন! কিন্তু এই আসরে বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার নিজেই যেন ক্লান্ত। প্রথম রাউন্ডে কিছুটা ভালো করলেও সুপার টুয়েলভে নিজেকে খুঁজে পাচ্ছেন না। তিন ম্যাচে তার ব্যাট থেকে আসা তিন ইনিংস ১০, ৪ ও ৯। প্রথম ম্যাচে বল হাতে ক্যারিশমা দেখালেও পরের দুই ম্যাচে নিজের সামর্থ্য অনুযায়ী খেলতে পারছেন না। প্রথম ম্যাচে তিন ওভার বোলিং করে ১৭ রানে নেন দুই উইকেট। পরের দুই ম্যাচে কোনো উইকেটই পাননি বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার। বোলিং নিয়ে সমালোচনা না হলেও সাকিবের ব্যাটিং নিয়ে রীতিমতো প্রশ্ন উঠেছে! তিন নম্বরের মতো মহাগুরুত্বপূর্ণ পজিশনে ব্যাট করতে নেমে শ্রীলঙ্কা ও ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে যেভাবে আউট হয়েছেন, দেখে মনে হয়েছে তিনি যেন ক্যাচ প্রাকটিস করাচ্ছেন। শেষ ম্যাচে ইনজুরিতে আক্রান্ত ছিলেন সাকিব। সে কারণেই ওপেনিংয়ে নেমে বড় শট খেলে দ্রুত রান তুলতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ব্যর্থ হয়েছেন। এবার ইনজুরির কারণে বিশ্বকাপ থেকেই ছিটকে গেলেন তিনি।

 

মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ

একজন অধিনায়ক হচ্ছেন ‘হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালা!’ তিনি তার মেধা-শ্রম-পারফরম্যান্স দিয়ে দলকে সঠিক পথে পরিচালিত করবেন। কিন্তু মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ কি আদৌও সেই কাজটি সুচারুভাবে করতে পারছেন? বোলিং পরিবর্তন নিয়ে প্রশ্ন তো উঠছেই, তার দায়িত্ব বোধ নিয়েও স্যোশাল মিডিয়ায় সমালোচনা হচ্ছে! বাংলাদেশ দল শারজাহতে শ্রীলঙ্কা ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে দুটি ‘জেতা’ ম্যাচে হেরেছে দুটিতেই ক্যাপ্টেনের ব্যর্থতা দৃশ্যমান হয়েছে। শেষ ম্যাচে মাহমুদুল্লাহ নিজে উইকেটে থাকার পরও দলকে জয়ের বন্দরে নিয়ে যেতে পারেননি। ক্যারিবীয়দের বিরুদ্ধে শেষ তিন ওভারে ৩০ রান দরকার তখন স্ট্রাইকে ছিলেন তিনি। এমনকি শেষ ওভারে যখন ১৩ রান দরকার তখনো ছিলেন টাইগার ক্যাপ্টেন। ব্যর্থ হয়েছেন দলকে জয় এনে দিতে। শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে ম্যাচে নিয়মিত বোলাররা যখন সফল তখন কেন তিনি ১৩তম ওভারে আফিফ হোসেনের মতো পার্টটাইমারের হাতে কেন যে বল তুলে দিয়েছিলেন? যে কিনা ওই ওভারে ১৫ রান দেন। কিন্তু তার পরের ওভারে নিজে বোলিং করতে এসে দেন ১৬ রান। এরপর ম্যাচ থেকেই যেন ছিটকে পড়ে বাংলাদেশ। তারপর যে একটুখানি আশা ছিল ১৬তম ওভারে মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন ২২ রান দিয়ে সব শেষ করে দেন। ব্যাট হাতেও মাহমুদুল্লাহ কিছু করতে পারেননি।

 

মুশফিকুর রহিম

প্রথম রাউন্ডে হতাশাজনক ব্যাটিংয়ের পরও সুপার টুয়েলভে দারুণ শুরু করেছিলেন মুশফিকুর রহিম। শারজাহতে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে প্রথম ম্যাচে খেলেন ৩৭ বলে অপরাজিত ৫৭ রানের ইনিংস। এর আগে টি-২০তে সবশেষ তার হাফসেঞ্চুরিটি ছিল দুই বছর আগে ভারতের বিরুদ্ধে। এগারো ম্যাচ পর আরেকটি অর্ধশতক পেলেন মিস্টার ডিপেন্ডেবল। কিন্তু পরের দুই ম্যাচেই বাইশগজে অচেনা মুশফিক। ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে খেলেন ২৯ রানের ইনিংস এবং সব শেষ ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে শারজাহতে করেন মাত্র ৮ রান। একজন ব্যাটসম্যান যেন প্রতি ম্যাচেই বড় স্কোর খেলবেন এমন নয়। উত্থান-পতন থাকতেই পারে। কিন্তু শেষ দুই ম্যাচে মুশফিকের আউট নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই পারে। আবুধাবিতে ইংল্যান্ডের বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইনআপে যখন ধস নামে তখন একপ্রান্ত আগলে ধরে রাখছিলেন মুশফিক। সেদিন মুশফিকই ছিলেন শেষ ভরসা। কিন্তু অযথাই বিলাসী শট খেলতে নিয়ে নিজের উইকেটটা যেন বিলিয়ে দিলেন। রিভার্স সুইপের মতো ঝঁকিপূর্ণ শট খেলতে গিয়ে আউট। কেন মুশফিকের মতো একজন অভিজ্ঞ ক্রিকেটার এমন সময় নিজের উইকেট বিলিয়ে দেবেন? ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে লিটন দাসের সঙ্গে মুশফিক যখন উইকেটে ছিলেন তখন বাংলাদেশের জয়টা মনে হচ্ছিল যেন সময়ের ব্যাপার মাত্র। কিন্তু এমন মহাগুরুত্বপূর্ণ সময়ে আবারও ঝুঁকিপূর্ণ ‘স্কুপ’ খেলে যেন আত্মহত্যা করলেন!

সর্বশেষ খবর