বৃহস্পতিবার, ৪ নভেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে সেই মন্ত্র!

বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ৪-১ ব্যবধানে সিরিজ হারের ক্ষত এখনো শুকায়নি অস্ট্রেলিয়ার! আজ দুবাইয়ে বিশ্বকাপে মাহমুদুল্লাহদের বিরুদ্ধে মুখোমুখি অসিরা। গতকাল সংবাদ সম্মেলনে অস্ট্রেলিয়া দলের প্রতিনিধি হয়ে আসা অ্যাস্টন অ্যাগারকে প্রথমেই জিজ্ঞেস করা হয় সেই সিরিজ নিয়ে।

বিশ্বকাপের এই স্পোর্টিং উইকেটে বাংলাদেশ প্রতিপক্ষ হিসেবে কতটা চ্যালেঞ্জ জানাতে পারে?

সংযুক্ত আরব আমিরাতের এই কন্ডিশনে মাহমুদুল্লাহ কতটা কঠিন প্রতিপক্ষ তা অ্যাগারকে জিজ্ঞেস না করলেও চলে! বিশ্বকাপে সেমিফাইনালে খেলার স্বপ্ন দেখা দলটি কিনা সুপার টুয়েলভে এখনো কোনো জয় পায়নি। টানা চার ম্যাচে হেরে রীতিমতো বিধ্বস্ত। তারপরও আজ বাংলাদেশের বিরুদ্ধে মাঠে নামার আগে ভীষণ সতর্ক অস্ট্রেলিয়া। অ্যাগার বলেন, ‘সত্যি কথা বলতে কি, ঘরের মাঠে বাংলাদেশ খুবই শক্তিশালী। তারা আমাদের চ্যালেঞ্জে ফেলে দিয়েছিল। তবে এটা অন্যরকম কন্ডিশন। তারপরও সতর্ক থাকতে হবে। এ ম্যাচে আমাদের জিততেই হবে।’

অনিশ্চয়তার খেলা ক্রিকেটে একটি কিংবা দুটি ম্যাচে দুর্ঘটনা ঘটতেই পারে। কিছু ভুলও হতে পারে। কিন্তু একজন পেশাদার ক্রিকেটারকে আগের সব কিছু ভুলে নতুন করে শুরু করতে হয়। ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে নিজেকে নতুন করে প্রমাণ করতে হয়। গতকাল যে খলনায়ক হয়েছিলেন, আজ তিনিই হয়ে যেতে পারেন মহানায়ক! এই বিশ্বকাপে তার দারুণ কিছু উদাহরণও আছে।

পাকিস্তান দলে সুযোগ পাওয়ায় যে আসিফ আলীকে নিয়ে তুমুল সমালোচনা সেই মারকুটে ব্যাটসম্যানই কিনা আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে এক ওভারে চারটি ছক্কা হাঁকিয়ে দলকে জয় এনে দিয়ে মহানায়ক হয়ে গেলেন। কিন্তু বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা যেন ভিন্ন পথে হাঁটছেন। তারা অতিমাত্রায় আবেগী। সমালোচনা একদমই সহ্য করতে পারেন না। এক ম্যাচে খারাপ খেললে সেই চাপে পরের ম্যাচেও তারা পারফর্ম করতে পারেন না।

 সে কারণেই দেখা যায়, বাংলাদেশের দলের সেরা ফিল্ডাররাও এবার একের পর এক ক্যাচ মিস করছেন। ক্রিকেটারদের বেশি আবেগী মানসিকতাই যেন দলকে পিছিয়ে দিচ্ছে। একজন ক্রিকেটার যখন দেশের জার্সিতে খেলতে নামেন তাকে দেশবাসীর প্রত্যাশার চাপ তো নিতেই হবে। ভালো করলে যেমন তিনি প্রশংসায় ভাসবেন, বাজে সময়ে তাকে সমালোচনাও হজম করতে হবে। সব কিছু উপেক্ষা করেই একজন ক্রিকেটারকে মাঠে পারফর্ম করতে হয়। এটাই বাস্তবতা। গতকাল সংবাদ সম্মেলনে ক্রিকেটারদের উদ্দেশ্য করে স্পিন কোচ রঙ্গনা হেরাথ বলেন, ‘একজন ক্রিকেটারকে সব সময় ভাবতে হবে আমি দেশের হয়ে খেলছি। দেশের জন্য খেলছি। এটা তাদের গর্বিত করবে, দায়িত্ববোধ বাড়াবে। ’

সব শেষ ম্যাচে আবুধাবিতে বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের মানসিকভাবে খুবই বিধ্বস্ত মনে হয়েছে। ব্যাটিং দেখে মনে হয়েছে, ক্রিকেটাররা যেন খেলা ভুলে গেছেন। নিজেদের দায়িত্ব বুঝতে পারছেন না। যে কারণে কিনা মাত্র ৮৪ রানেই অলআউট। রঙ্গনা হেরাথ বলেন, ‘প্রথমেই তাদের (ক্রিকেটারদের) বোঝা উচিত নিজের দায়িত্ববোধ সম্পর্কে। বুঝতে হবে তাদের ভূমিকা কী হওয়া উচিত। আপনি বাংলাদেশের হয়েই খেলেন কিংবা শ্রীলঙ্কার হয়ে খেলেন, প্রথমে দলের শক্তিমত্ত্বা সম্পর্কে জানাতে হবে, নিজের ভূমিকা সম্পর্কে ভালো ধারণা থাকতে হবে। আপনি যখন নিজের ভূমিকা কি হবে তা বুঝতে পারবেন, তারপর দেখতে হবে কিভাবে উন্নতি করা যায়। প্রতিনিয়ত ভালো করার জন্য চ্যালেঞ্জ নিতে হবে।’

বিশ্বকাপের উইকেট হচ্ছে, স্পোর্টিং। এখানে সবার জন্য সমান সুবিধা থাকে। কিন্তু বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা যেন নিজেদের মেলে ধরতেই পারছেন না। ব্যাটসম্যানরা না পারছেন আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে কোনো শট খেলতে, না বোলাররা পারছেন প্রতিপক্ষকে আতঙ্কিত করতে। ফিল্ডারদের পারফরম্যান্স তো যাচ্ছেতাই। 

এই পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসার ‘টোটকা’ দিয়েছেন রঙ্গনা হেরাথ, ‘নিজের মনে  এই বিশ্বাস রাখতে হবে যে, আপনি একজন ভালো ক্রিকেটার। আপনাকে একজন গ্রেট ক্রিকেটার হতে হবে। পাশাপাশি আপনাকে কঠোর পরিশ্রম করতে হবে এবং প্রতিনিয়ত নিজের সঙ্গে নিজের চ্যালেঞ্জ নিতে হবে। এই বিষয়গুলো মাথায় রাখলে আমি নিশ্চিত ব্যক্তিগত পারফরম্যান্সে যেমন উন্নতি হবে তেমনি দলীয় পারফরম্যান্সও ভালো হবে।’

তবে টানা চার ম্যাচে হারলেও আজ অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে অন্য বাংলাদেশকে দেখা যাবে বলে মনে করেন হেরাথ। মিরপুরের মতো সেই একই মন্ত্র- স্পিনেই অসিদের ঘায়েল করার জন্য মুখিয়ে আছে বাংলাদেশ।

সর্বশেষ খবর