শুক্রবার, ৫ নভেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা
বাংলাদেশ নিয়ে

ওয়াটসনের রহস্যময় হাসি

ওয়াটসনের রহস্যময় হাসি

অস্ট্রেলিয়ার কাছে হেরে শেষ হলো বাংলাদেশের টি-২০ বিশ্বকাপ মিশন। টানা পাঁচ পরাজয়ে হতাশ মাহমুদুল্লাহরা -বিসিবি

প্রথম ইনিংস শেষ! মাত্র ৭৩ রানেই অলআউট বাংলাদেশ! দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামের প্রেসবক্সের লিফটে দেখা হয় অস্ট্রেলিয়ার সাবেক তারকা অলরাউন্ডারের শেন ওয়াটসনের সঙ্গে। 

এটা কি দুর্ঘটনা, গত মাসেই তো সিরিজেই তো বাংলাদেশে গিয়ে ৪-১ ব্যবধানে সিরিজে হেরেছে অস্ট্রেলিয়া? প্রশ্ন শুনে অবাক হওয়ার ভঙ্গিতে বললেন, ‘এটা তো বাংলাদেশ নয়! দুবাইয়ের স্পোর্টিং উইকেট। এমন উইকেটেই আসল পরীক্ষা হয়ে গেল। একটা সিরিজ দিয়ে তো আর একটি দলকে বিচার করা যায় না!’

কথাটা বলেই দ্রুত হাঁটতে থাকলেন অসি তারকা। তাহলে কি বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অস্ট্রেলিয়া সেই ৬২ রানে অলআউট হওয়ার প্রতিশোধ নিল? এবারের প্রশ্নটি শুনে আর কোনো কথা বললেন না ওয়াটসন। মুখের দিকে তাকিয়ে ‘রহস্যময় হাসি’ দিয়ে ধারাভাষ্য কক্ষের দিকে চলে গেলেন অস্ট্রেলিয়ার এই অলরাউন্ডার। 

গত ৯ আগস্ট মিরপুরের শের-ই বাংলা স্টেডিয়ামে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে মাত্র ৬২ রানে গুটিয়ে গিয়েছিল অস্ট্রেলিয়ার ইনিংস। টি-২০ ক্রিকেটের ইতিহাসে সেটিই ছিল অস্ট্রেলিয়ার দলীয় সর্বনিম্ন স্কোর। ওই সিরিজের পর বিশ্বকাপে টাইগারদের রীতিমতো উড়িয়েই দিল অসিরা। ৮ উইকেটে জিতে বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে খেলার আশা বাঁচিয়ে রাখল। আর শেষ ম্যাচেও নিজেদের মেলে ধরতে পারল না বাংলাদেশ। টানা ৫ ম্যাচে হেরে শেষ হলো বিশ্বকাপের ব্যর্থ মিশন।

যে আসরে সেমিফাইনালে খেলার স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন মাহমুদুল্লাহরা, সেই আসর থেকে শূন্য হাতে ফিরতে হচ্ছে। এমন ব্যর্থতার পরও কি টি-২০ অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করবেন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ, নাকি সরে দাঁড়াবেন? ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে এমন প্রশ্নের উত্তরে ক্যাপ্টেন বলেন, ‘এই সিদ্ধান্তটা আমার হাতে নেই। এটা ক্রিকেট বোর্ডের কাছ থেকেই আসবে। আমি সব সময় চেষ্টা করেছি দলটিকে আগলে রাখার জন্য। ভালো পারফরম্যান্স আদায় করে নেওয়ার জন্য। হয়তো আমার নেতৃত্বে কোনো দুর্বলতা ছিল, যে কারণে আমি পারফরম্যান্সটা আদায় করে নিতে পারিনি।’ কিন্তু জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে সিরিজের মাঝপথে আপনি নিজে নিজেই টেস্ট ক্রিকেট থেকে অবসর নিয়েছিলেন। তাহলে এখন কেন নিজের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না? এবার মাহমুদুল্লাহর জবাব, ‘এই মুহূর্তে আমি ওরকম কোনো চিন্তা করছি না।’

প্রথম তিন ম্যাচের মধ্যে দুটিতে বাংলাদেশ জয়ের দারুণ সম্ভাবনা তৈরি করেছিল। শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে সহজ সুযোগ হাতছাড়া করেছেন বোলাররা, আর ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে জয় না পাওয়ার জন্য দায়ী ব্যাটসম্যানরা। এরপর ইনজুরির কারণে দল থেকে ছিটকে যান বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান। পরের দুই ম্যাচেই প্রতিপক্ষের সামনে যেন দাঁড়াতেই পারল না লাল-সবুজরা। আগের ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে প্রথমে ব্যাট করে ৮৪ রানে অলআউট, আর গতকাল অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ৭৩, যা টি-২০তে বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বনিম্ন স্কোর। এর আগে ২০১৬ সালে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে কলকাতায় ৭০ রানে অলআউট হয়েছিল বাংলাদেশ।

গতকাল অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে বিধ্বস্ত হওয়ার পর মাহমুদুল্লাহ বলেন, ‘আমাদের দলের জন্য ফ্লো  (মোমেন্টাম) খুবই দরকার। আগের সিরিজগুলো দেখেন প্রথম ম্যাচে জেতার পর আমাদের আত্মবিশ্বাস বেড়েছে, দ্বিতীয় জয়ের পর আরও বেশি আত্মবিশ্বাসী হয়েছি। কিন্তু এখানে স্কটল্যান্ডের বিরুদ্ধে হারার পর ধুঁকতে হয়েছে। সুপার টুয়েলভে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে জিততে পারলে চিত্র অন্যরকম হতে পারত।’

যে দলটি বিশ্বকাপের আগেই টানা তিনটি টি-২০ সিরিজ জিতল সেই দলটি কিনা সুপার টুয়েলভে কোনো ম্যাচই জিততে পারল না। এমনকি কোনো ক্রিকেটার মনে রাখার মতো কোনো ইনিংসও খেলতে পারেননি। কেন এমন হলো? মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ বলেন, ‘আমি নিজেও এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজছি। কিন্তু কোনো উত্তর পাচ্ছি না। কোথায় সমস্যা। কী কারণে হচ্ছে না। কিছুই বুঝতে পারছি না!’ যেখানে ক্যাপ্টেনই বুঝতে পারছেন না, সেখানে অন্য কারও বোঝার সাধ্য কি আছে?

স্বপ্নের বিশ্বকাপ শেষ হলো দুঃস্বপ্ন দিয়ে। এই টুর্নামেন্টে বাংলাদেশের পারফরম্যান্স যেন শেন ওয়াটসনের হাসির মতোই রহস্যময় হয়ে থাকল।

 

স্কোর কার্ড

বাংলাদেশ : ৭৩/১০, ১৫ ওভার (শামীম ১৯, নাঈম ১৭; অ্যাডাম জাম্পা ৫/১৯, মিচেল স্টার্ক ২/২১)।

অস্ট্রেলিয়া : ৭৮/২, ৬.২ ওভার (অ্যারন ফিঞ্চ ৪০, ডেভিড ওয়ার্নার ১৮, মিচেল মার্শ ১৬*; শরীফুল ১/৯, তাসকিন ১/৩৬)।

ফল : অস্ট্রেলিয়া ৮ উইকেটে জয়ী। ম্যাচসেরা : অ্যাডাম জাম্পা।

শ্রীলঙ্কা : ১৮৯/৩, ২০ ওভার (আসালঙ্কা ৬৮,

নিসানকা ৫১; রাসেল ২/৩৩)।

ওয়েস্ট ইন্ডিজ : ১৬৯/৮, ২০ ওভার (হেটমেয়ার ৮১*,

নিকোলাস ৪৬, হাসারাঙ্গা ২/১৯)।

ফল : শ্রীলঙ্কা ২০ রানে জয়ী। ম্যাচসেরা : চারিথ আসালঙ্কা।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর