শনিবার, ৬ নভেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

লাইফ সাপোর্টে টি-২০ ক্রিকেট!

লাইফ সাপোর্টে টি-২০ ক্রিকেট!

টানা পাঁচ ম্যাচে পরাজয়ের লজ্জা নিয়ে আইসিসি টি-২০ বিশ্বকাপ থেকে দেশে ফিরেছেন ক্রিকেটাররা। ছবিটি দুবাই বিমানবন্দরের - বিসিবি

স্বপ্নের রঙিন ফানুসটা আবিষ্কার করেছিলেন বাংলার যুবারা বিশে (২০২০ সাল) বিশ্বকাপ জিতে। ছোটরা যখন বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হয় তখন বড়দের মনেও উঁকিঝুঁকি মারতে থাকে সেই স্বপ্ন।

কভিড মহামারীর পর প্রথম বিশ্বকাপ। জিম্বাবুয়ে, অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে টানা তিনটি টি-২০ সিরিজ জিতে যেন সেই স্বপ্নের ফানুসে বাড়তি হাওয়া দেন সিনিয়ররা। কিন্তু ফানুসে বাতাস এতই বেশি হয়েছিল যে, গন্তব্যে পৌঁছা তো দূরের কথা-যাত্রা শুরুর পর পরই ফেটে উধাও! তা না হলে যে দলটি সেমিফাইনাল খেলার স্বপ্ন নিয়ে বিশ্বকাপ খেলতে আসে সেই দলটি কিনা পাঁচ ম্যাচের একটিতেও জিততে পারে না।

শেষের দুই ম্যাচে তো হেরেছে লজ্জাজনকভাবে। হার-জিত স্বাভাবিক ঘটনা হলেও ১২০ বলের খেলা টি-২০-তে যখন প্রতিপক্ষ ৮২ বল হাতে রেখেই জয় নিশ্চিত করে তখন সামর্থ্য নিয়ে প্রশ্ন ওঠা মোটেও অস্বাভাবিক নয়। এমন হার কেবল ক্রিকেটারদের নয়, সমর্থকদের জন্যও চরম বিব্রতকর!

পুরো টুর্নামেন্টেই ব্যর্থ বাংলাদেশ দল। একটা নবীনতম দল খেলতে এলেও তারা কোনো না কোনো ম্যাচ জেতে। কিংবা না জিতলেও ব্যক্তিগত কিছু পারফরম্যান্স থাকে চোখে পড়ার মতো। এ আসরে বাংলাদেশের বলার মতো তেমন কোনো ঝলক চোখে পড়েনি।

ক্রিকেটারদের পারফরম্যান্সের উত্থান-পতনও স্বাভাবিক ঘটনা। তাই বলে সবাই মিলে একসঙ্গে এভাবে অসহায় আত্মসমর্থন করবে! কী তারুণ্য, কী অভিজ্ঞ- সবাই ব্যর্থ। চোখে চোখ রেখে প্রতিপক্ষের কোনো ব্যাটসম্যান কিংবা বোলারকে চ্যালেঞ্জ জানাতে পারেননি বাংলাদেশের কোনো ক্রিকেটার।

ফিল্ডিং নিয়ে আলাদা করে কিছু বলার নেই। ক্যাচ মিস ছিল খুবই স্বাভাবিক ঘটনা। এ ছাড়া ফিল্ডিং মিসের কারণে কত যে বাড়তি রান দিতে হয়েছে, তার ইয়ত্তা নেই।

বাংলাদেশ বিশ্বকাপের সুপার টুয়েলভে দুই দুটি ম্যাচে জয়ের দারুণ সম্ভাবনা তৈরি করেছিল। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে লাল-সবুজরা শেষ ওভারে মাত্র ১৩ রান করতে পারেনি। অথচ ওই সময় স্বয়ং ক্যাপ্টেন মাহমুদুল্লাহ ছিলেন উইকেটে। ওই ম্যাচে উইন্ডিজরা বলতে গেলে জিতেছিল জেসন হোল্ডারের ক্যারিশম্যাটিক এক ফিল্ডিংয়ে। দীর্ঘকায় ক্যারিবীয় এই তারকা শেষ দিকে লং অনে কয়েক ফুট উঁচুতে লাফিয়ে উঠে লিটন দাসের ক্যাচটি লুফে নেন। আর ওই ক্যাচটাই ছিল ম্যাচের টার্নিং পয়েন্ট।

প্রথম ম্যাচে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে উল্টো লিটনের ক্যাচ মিসেই সর্বনাশ হয়েছিল বাংলাদেশের। শ্রীলঙ্কা ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে হারলেও লড়াইটা ছিল বেশ উপভোগ্য। কিন্তু বাকি তিন ম্যাচে ইংল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা ও অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে রীতিমতো উড়ে গেছে লাল-সবুজরা।

ক্রিকেটারদের শরীরী ভাষায় ছিল না কোনো আত্মবিশ্বাসের ছাপ। মাঠে খেলোয়াড়দের দেখে মনে হচ্ছিল যেন চরম অনিচ্ছা সত্ত্বেও তাদের নামিয়ে দেওয়া হয়েছে খেলতে।

ক্রিকেটে ক্যাপ্টেনের যেমন বাড়তি ভূমিকা থাকে, তেমনি কোচ কিংবা টিম ম্যানেজমেন্টেরও থাকে বিশেষ দায়িত্ব। ক্যাপ্টেন, কোচ তথা টিম ম্যানেজমেন্ট কতটা দৃঢ়তার সঙ্গে কাজ করেছেন তার প্রতিচ্ছবি দেখা যায় মাঠে দলের পারফরম্যান্সে। টি-২০ বিশ্বকাপে একসঙ্গে ব্যর্থ সবাই।

সাধারণের বিশ্বাস, ‘হার্টফেল’ হঠাৎ করেই হয়! কিন্তু চিকিৎসাবিজ্ঞান বলে, দিনের পর দিন অযত্ন আর অবহেলার কারণে যখন হার্ট কাজ করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে তখনই ‘ফেল’ হয়। তবে হার্টফেল হওয়ার আগে শরীর বারবার বিভিন্ন রকম সংকেত দেয়। এই সংকেত বাংলাদেশ দলও পেয়েছে। প্রথম রাউন্ডে স্কটল্যান্ডের মতো ‘পুঁচকে’ দলের বিরুদ্ধে হার। কিংবা প্রস্তুতি ম্যাচে ‘শ্রীলঙ্কা’ ও ‘আয়ারল্যান্ড’ এর বিরুদ্ধে পরাজয় তো পূর্ব সংকেতই ছিল! তারপরও সতর্ক না হওয়ায় বিশ্বকাপের চূড়ান্ত পর্বে যেন ‘হার্টফেল’ই করল বাংলাদেশের টি-২০ ক্রিকেট।

সেমিফাইনালে খেলার স্বপ্ন দেখিয়ে সুপার টুয়েলভে টানা পাঁচ ম্যাচের পাঁচটিতে হার। শেষ দুই ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকা ও অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে  যেভাবে হেরেছে তাতে বলাই যায় দেশের টি-২০ ক্রিকেট এখন লাইফ সাপোর্টে। এ পরিস্থিতি থেকে ক্রিকেটকে রক্ষা করতে দরকার ‘উন্নত চিকিৎসা’ অর্থাৎ ঢেলে সাজাতে

হবে নতুন করে। সামনের বছরই আরেকটি টি-২০ বিশ্বকাপ। এখন দেখার বিষয়, দেশের ক্রিকেটের অভিভাবক সংস্থা-বিসিবি টি-২০ ক্রিকেটকে মৃত্যুশয্যা থেকে বাঁচাতে কতটা কার্যকরী সিদ্ধান্ত নেয়!

সর্বশেষ খবর