রবিবার, ৭ নভেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

সাকিবরা কেন ভয়ে ভয়ে খেলল

বাংলাদেশকে নিয়ে দীপ দাশগুপ্তর বিশ্লেষণ

সাকিবরা কেন ভয়ে ভয়ে খেলল
বাংলাদেশ নয়, ভারত-পাকিস্তান যে দলই বলেন না কেন, উপমহাদেশের দেশগুলোর সবচেয়ে বড় সমস্যা পাওয়ার হিটার না থাকা। রোহিত-কোহলি কেউ-ই পাওয়ার হিটার নন। এখানে না হয় কম রানের উইকেট, কিন্তু আগামী বছর বিশ্বকাপ তো অস্ট্রেলিয়ায় সেখানে কী করবে এই দলগুলো?

 

টি-২০ বিশ্বকাপে ভুলেও কেউ বাংলাদেশকে ফেবারিটের তালিকায় রাখেনি। তবে টাইগাররা যে ‘ডার্ক হর্স’ ছিল তা মাহমুদুল্লাহদের হতাশাজনক পারফরম্যান্সের পর ক্রিকেটবিশ্বে আলোচনা থেকেই বোঝা যায়! গ্রেট ক্রিকেটাররাও সাকিব আল হাসানদের ‘ব্যর্থতা’ নিয়ে নানা আঙ্গিকে বিশ্লেষণ করছেন।

যে দলটি ঘরের মাঠে বিশ্বকাপের আগ মুহূর্তে অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডের মতো দলকে সিরিজে হারাতে পারে তাদের কেন এই ভরাডুবি! ক্রিকেটারদের সামর্থ্য না থাকলে কেবলমাত্র হোমে পছন্দের উইকেট তৈরি করেই ক্রিকেট পরাশক্তিদের সিরিজে হারানো যায় না! তবে ‘ট্যালেন্ট’ থাকার পরও কেন বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দলের ভরাডুবি হলো তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছে আইসিসি টি-২০ বিশ্বকাপে ধারাভাষ্যকার ও ভারতের জাতীয় দলের সাবেক ক্রিকেটার দীপ দাশগুপ্ত।

দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে শুক্রবার ‘ভারত-স্কটল্যান্ড’ ম্যাচের মধ্যাহ্ন বিরতির সময় ‘বাংলাদেশ দল’ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। দীপদাশ গুপ্ত বলেন, ‘আমি ঠিক বুঝলাম না সাকিবরা (বাংলাদেশ) কেন এই টুর্নামেন্টে ভয়ে ভয়ে খেলল? এই দলে কত ট্যালেন্ট! তারপরও কিছুই করতে পারল না। আমি ওমানে স্কটল্যান্ডের বিরুদ্ধে প্রথম ম্যাচ থেকেই লক্ষ্য করছি, তাদের শরীরীভাষায় ভয়ের ছাপ। জয়ের জন্য নয়, যেন না হারতে হয় -এই ভয়ে খেলছে। আর এই ভয়ই তাদের বিপদে ফেলেছে। টি-২০ ক্রিকেট তো এভাবে খেললে হবে না। হারজিত থাকবেই। খেলতে হবে সাহস নিয়ে। মানসিকতা থাকতে হবে এমন যে আমরা জিতবই।’

সৌরভ গাঙ্গুলির মতো জনপ্রিয় নন দীপ দাশগুপ্ত। তবে পশ্চিমবঙ্গের এই উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান ভারতের হয়ে টেস্ট ও ওয়ানডে খেলেছেন। নিজে টি-২০ না খেললেও সংক্ষিপ্ত ফরম্যাটের এই ক্রিকেট নিয়ে দারুণ বিশ্লেষণ করেন। বাংলার মানুষ বলে হয়তো বাংলাদেশের ক্রিকেট অনুসরণও করেন। এই মধ্যপ্রাচ্যে টাইগারদের পারফরম্যান্সে তিনি যারপর নাই হতাশ। দীপ দাশগুপ্ত বলেন, ‘আমি ভাবতেও পারিনি বাংলাদেশ দলের এই অবস্থা হবে! বাংলাদেশ তো আর স্কটল্যান্ড কিংবা নামিবিয়ার মতো দল নয় যে তাদের ট্যালেন্ট নেই। আমার কাছে মনে হয়েছে, এই কন্ডিশনে তাদের খুবই ভালো করার কথা। সিনিয়রদের বাদ দিলেও সৌম্য, লিটন, আফিফের মতো প্রতীভাবান ক্রিকেটার আছে। কিন্তু প্রতীভা থাকলেই হবে না, তাদের তো দায়িত্ব নিতে হবে। সাকিব-মাহমুদুল্লাহ-মুশফিকরা আর কত দিন সার্ভিস দেবে? নতুনদের এখন উঠে আসতে হবে। অবশ্য, লিটন-সৌম্য-আফিফরা তো নতুনও নয়। তারা বেশ কয়েক বছর ধরে ক্রিকেট খেলছেন। তাদের তো ভয় পাওয়ার কিছু নেই।’

বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কা ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে জয়ের দারুণ দুটি সুযোগ নষ্ট করেছে। দীপ দাশ বলেন, ‘বাংলাদেশ যদি শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে ম্যাচটা জিতে যেতে পারত তাহলে চিত্র কিন্তু অন্যরকম হতো। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধেও জিততে পারত। আমার কাছে দুই ম্যাচে টার্নিং পয়েন্ট মনে হয়েছে লিটন দাসের দুটি মিস। শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে রাজাপক্ষের ক্যাচ মিস করার পর ম্যাচ ঘুরে গেল। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধেও যদি স্ট্যাম্পিং মিস না হতো বদলে যেত খেলার গতি। এই লেবেলে এমন ভুল তো করা যাবে না। যেকোনো সুযোগ কাজে লাগাতে হবে।’

কথা হয়, কোচের প্রসঙ্গ নিয়েও। ভালো ছাত্রের জন্য তো ভালো শিক্ষক জরুরি। কোচের পরিকল্পনার ওপর নির্ভর করে দলটি কেমন করবে? তাই বলে এই নয় যে, বিখ্যাত কোচ এসে রাতারাতি সব ঠিক করে দেবেন। দীপদাশ বলেন, ‘সত্যি কথা বলতে কি, উপমহাদেশের দলগুলোর জন্য দরকার উপমহাদেশের কোচ। বাইরে থেকে এসে এখানকার পরিবেশ, পরিস্থিতি তথা সংস্কৃতি বোঝা খুবই কঠিন।’

এবারের বিশ্বকাপে বাংলাদেশকে লজ্জায় ফেলেছে দায়িত্বজ্ঞানহীন ব্যাটিং। দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে ৮৪ রানে অলআউট হওয়ার পর অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ৭৩ রানেই শেষ। ব্যাটসম্যানদের সম্পর্কে তার ভাষ্য, ‘বাংলাদেশের একটা বড় সমস্যা দেখেছি পাওয়ার প্লেতে। ওপেনাররা একদমই ভালো করছে না। প্রায় প্রতিটি ম্যাচেই সাকিবকে দেখছি পাওয়ার প্লেতে ব্যাটিং করতে। এটা দুই একটা ম্যাচে হতে পারে। প্রত্যেক ম্যাচে ওপেনাররা ব্যর্থ হবে এটা তো হতে পারে না।’

বোলারদের নিয়ে বেশ প্রশংসাই করলেন, ‘আমার কাছে বোলিং সাইটটাও অনেক শক্তিশালী মনে হয়েছে। তাসকিন ভালো বোলিং করেছেন। সাইফুদ্দিনের বোলিংও আমার কাছেই খুবই ভালো লেগেছে।’

টি-২০তে বাংলাদেশের বড় সমস্যা হচ্ছে, পাওয়ার হিটার নেই। দ্রুত সময়ে রান তোলার মতো ক্রিকেটার না থাকায় পিছিয়ে পড়ছে লাল-সবুজরা। দীপ দাশগুপ্ত বলেন, ‘এটা কেবল বাংলাদেশ নয়, ভারত-পাকিস্তান যে দলই বলেন না কেন, উপমহাদেশের দেশগুলোর সবচেয়ে বড় সমস্যা পাওয়ার হিটার না থাকা। রোহিত-কোহলি কেউ-ই পাওয়ার হিটার নন। এখানে না হয় কম রানের উইকেট, কিন্তু আগামী বছর বিশ্বকাপ তো অস্ট্রেলিয়ায় সেখানে কী করবে এই দলগুলো? তখন তো প্রতিটি ম্যাচ হবে ১৮০-১৯০ রানের। বড় হিট করতেই হবে। তাই পাওয়ার হিটার খুবই দরকার। এছাড়া অন্য কোনো উপায় নেই।’

অস্ট্রেলিয়া বিশ্বকাপে ভালো করতে হলে পুরো দলকে ঢেলে সাজাতে হবে? ‘না, তার দরকার হবে না। তা ছাড়া অস্ট্রেলিয়া বিশ্বকাপের খুব তো বেশি দেরি নেই। এই দলটাই যদি বুস্ট আপ করা যায় অনেক ভালো হবে। আমি দেখেছি এরা সবাই ট্যালেন্ট।’

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর