শিরোনাম
মঙ্গলবার, ৯ নভেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

অচেনা কোহলি এবং গেইল-নাটক

এই আসরে কোহলিকে মনে হচ্ছে বড় ‘অচেনা’! ব্যাটে ধার নেই, সেলিব্রেশনে সেই আগ্রাসী ভাবটাও উধাও! অবশ্য সেলিব্রেশন করার সুযোগই বা কোথায় পেলেন।

অচেনা কোহলি এবং গেইল-নাটক

বিদায় নিশ্চিত হয়েছে আগেই। তারপরও নিয়ম রক্ষার ম্যাচ খেলছে ভারত-নামিবিয়া। ছবিতে বোলার ভারতের বুমরাহ এবং ব্যাটার নামিবিয়ার স্টিফেন বার্ড -এএফপি

ইউনিভার্স বস। টি-২০ ফরম্যাটে সবচেয়ে সফল ক্রিকেটার ক্রিস গেইল। অনেকে ক্যারিবীয় মহাতারকাকে টি-২০ সম্রাট নামেও ডেকে থাকেন। সংক্ষিপ্ত এই ফরম্যাটে যার ২৪টি সেঞ্চুরি। টি-২০এর ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ স্কোরও (১৭৫* রান) যার দখলে, সেই গেইলের শেষ ম্যাচ। তাই জয় নিশ্চিত হওয়ার পর দুই পাশে সারিবদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে যান অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটাররা। ‘গার্ড অব অনার’ দেন গেইলকে। এরপর ভক্তরাও অভিনন্দনে ভাসিয়ে দিলেন গেইলকে। বিদায়ী ম্যাচ বলে কথা। কিন্তু সবাইকে অবাক করে দিয়ে পরের দিন গেইল জানালেন, ‘আমি তো অবসর নিইনি!’ রসিকতা করে বলেছেন, ‘আমার তো পরের বিশ্বকাপ খেলারও ইচ্ছা আছে।’ নাটকীয় সিদ্ধান্তে যেন ভীষণ খুশি ভক্তরা!

ভারতের অধিনায়ক বিরাট কোহলির অবস্থা দেখুন! সেরা তারকা, সেরা অধিনায়ক- হাইপ নিয়ে বিশ্বকাপ খেলতে এলেন সংযুক্ত আরব আমিরাতে। আগেই ঘোষণা দিয়েছিলেন, এই আসরের পর সংক্ষিপ্ত ফরম্যাটে তিনি আর ভারতকে নেতৃত্ব দেবেন না। অধিনায়ক কোহলি কোনো বিশ্বকাপ জিততে পারবেন তা কী করে হয়! তাই বিসিসিআই ভারতীয় দলের সঙ্গে মেন্টর হিসেবে যুক্ত করে দিল মহেন্দ্র সিং ধোনিকে। কিন্তু তাতেও কি লাভ হলো! প্রথম দুই ম্যাচে টানা হারেই স্বপ্নের বিশ্বকাপ ভারতীয়দের জন্য হয়ে গেল দুঃস্বপ্ন।

এই আসরে কোহলিকে মনে হচ্ছে বড় ‘অচেনা’! ব্যাটে ধার নেই, সেলিব্রেশনে সেই আগ্রাসী ভাবটাও উধাও!  অবশ্য সেলিব্রেশন করার সুযোগই বা কোথায় পেলেন।
আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে, এই আসরে কোহলিকে মনে হচ্ছে বড় ‘অচেনা’! ব্যাটে ধার নেই, সেলিব্রেশনে সেই আগ্রাসী ভাবটাও উধাও!  অবশ্য সেলিব্রেশন করার সুযোগই বা কোথায় পেলেন। প্রথম পাকিস্তানের বিরুদ্ধে হারের পরই তো সব এলোমেলো হয়ে গেছে। ওই ম্যাচে একমাত্র কোহলি ছাড়া ভারতের আর কোনো ব্যাটসম্যান সুবিধাই করতে পারেননি। তিনি খেলেছিলেন ৫৭ রানের এক ইনিংস। কিন্তু ওই ইনিংসটি ছিল কোহলির সঙ্গে বড্ড বেমানান। টি-২০তে যার স্ট্রাইকরেট ১৩৮, গড় ৫২-এর ওপরে সেই কোহলি যেন খোলসের মধ্যে আটকে থাকলেন। অবশ্য কিছু করারও ছিল না। আরেক প্রান্তে একের পর এক উইকেট পড়ে যাচ্ছিল। শেষ পর্যন্ত ভারত ১৫১ রান করলেও তা জয়ের জন্য যথেষ্ট ছিল না। ‘শিশির’ ভেজা দুবাইয়ে সহজেই জিতে যায় পাকিস্তান। বিশ্বকাপের ময়দানে সেটিই ছিল পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারতের প্রথম হার। এই এক হারই যেন মানসিকভাবে বিধ্বস্ত করে দেয় কোহলিদের। নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে কিউইদের বিরুদ্ধে হেরে নিশ্চিত হয়ে যায় ভারতের বিদায়।

শুরুতেই সব শেষ হয়ে যাওয়ায় যেন কোহলির মুখের হাসিও ফুরিয়ে যায়। ভারতীয় অধিনায়কের একটা বড় বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, মাঠে তার সরব উপস্থিতি। প্রতিপক্ষের উইকেট পতনের পর বোলারের সঙ্গে তার সেলিব্রেশনটা দেখার মতো। কিন্তু বিশ্বকাপের এই আসরে দেখা যায়নি চিরচেনা উৎফুল্ল সেই কোহলিকে।

কালকের ম্যাচের আগে এই আসরে কোহলির ব্যাট থেকে এসেছে সর্বসাকুল্যে ৬৮ রান। প্রথম ম্যাচে হাফসেঞ্চুরির পর দ্বিতীয় ম্যাচে ৯ রানে আউট হয়ে যান। তারপর আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে তৃতীয় ম্যাচে পরিস্থিতি বিবেচনায় মাঠেই নামেননি। স্কটল্যান্ডের বিরুদ্ধে চতুর্থ ম্যাচে তো বড় ইনিংস খেলার সুযোগই ছিল না। কোহলি ২ রানে অপরাজিত থাকতেই নিশ্চিত হয়ে যায় ভারতের জয়।

এই টুর্নামেন্টে যেমন অধিনায়ক হিসেবে আগ্রাসী কোহলিকে দেখা যায়নি, তেমনি তার ব্যাটের আসল জাদুও দেখতে পাননি ক্রিকেট-পাগল ভক্তরা। সময়ের সেরা ক্রিকেটারকে বিশ্বকাপের মঞ্চে আসল চেহারায় যেন দেখাই গেল না।

গত রাতে নামিবিয়ার বিরুদ্ধে ম্যাচে জাতীয় সংগীতের সময় কোহলিকে বিমর্ষ দেখাচ্ছিল। ছল ছল করছিল চোখ। মুখচ্ছবিতে বিষাদের ছায়া পরিষ্কার। টপ ফেবারিট হিসেবে টুর্নামেন্ট শুরু করেও গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচ খেলতে হচ্ছে বিদায়ের বার্তা নিয়ে। এমন এক ম্যাচে দলকে নেতৃত্ব দেওয়া যে কতটা কঠিন তা কোহলির চেয়ে আর কে ভালো বুঝবেন!

অবশ্য শেষ ম্যাচে কোহলির মতো হতাশ ছিলেন না ক্রিস গেইল। নিজের সেরা ফরম্যাটে বিশ্বকাপের আসরে এটি যে তার শেষ ম্যাচ, তা নিয়ে বিন্দুমাত্র ভাবনায় ছিলেন না। বরং পুরো ম্যাচেই সেলিব্রেশনের মুডে ছিলেন ‘ইউনিভার্স বস’!

এটি বিশ্বকাপে বিদনার ছবি যদি হয় ‘অচেনা কোহলি’ মনে রাখার মতো ঘটনা অবশ্যই গেইল নাটক!

 

স্কোর কার্ড

নামিবিয়া : ১৩২/৮ (২০ ওভার)

ডেভিড উইলস ২৬, রবীন্দ্র জাদেজা ৩/১৬,

ভারত : ১৩৬/১ (১৫.২ ওভার)

রোহিত শর্মা ৫৬, রাহুল ৫৪, যাদব ২৫

জন ফ্রাঙ্কলিংক ১/১৯

ফল : ভারত ৯ উইকেটে জয়ী।

সর্বশেষ খবর